মাধ্যমিক বাংলা আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আফ্রিকা কবিতা
পরীক্ষা প্রস্তুতি : মাধ্যমিক বাংলা কবিতা আফ্রিকা।  মাধ্যমিক বাংলা আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর। প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা তোমরা যারা ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে parikshaprastuti .org এক্সপার্ট  টিমের  পক্ষ পক্ষ থেকে তোমাদের অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।  আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি মাধ্যমিক   বাংলা  কবিতা আফ্রিকা  থেকে MCQ, SAQ,LAQ  থেকে   সাজেশন, যা ২০২৩ সালের  পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  আশা করছি তোমরা  ভালো করে প্রস্তুতি নিবে, তাহলে  ফাইনাল পরীক্ষায় অবশ্যই কমন পাবে। আমাদের এই পেজে আরো অনেক সাজেশন দেওয়া হবে।  ভালো  লাগলে আমাদের এই WWW.PARIKSHAPRASTUTI .ORG ওয়েব পেজটিকে বন্ধুদের মাঝে অবশ্যই  শেয়ার করবে। আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর। মাধ্যমিক বাংলা আফ্রিকা কবিতা।

Table of Contents

আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আফ্রিকা কবিতার উৎস:

আফ্রিকা’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ষােলাে সংখ্যক কবিতা। কবি শান্তিনিকেতনে ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৩৭ (২৮ মাঘ ১৩৪৩)কবিতাটি রচনা করেন। কবিতাটি ‘প্রবাসী’ পত্রিকার চৈত্র ১৩৪৩ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। পত্রপুট কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে কবিতাটি ছিল না। দ্বিতীয় সংস্করণে ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৩৪৫ বঙ্গাব্দে। পাঠ্য হিসেবে সংকলিত হয়েছে‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থ থেকে। 

আফ্রিকা কবিতার সারাংশ / আফ্রিকা কবিতার বিষয়বস্তু :

সৃষ্টির ছন্দহীন উদ্দাম সেই আদিযুগ। যে যুগের নতুন সৃষ্টিকাজে স্রষ্টা নিজেই সন্তুষ্ট নন। অসন্তোষের কারণে তিনি নিজেই বারবার ভাঙা-গড়ার উদ্দামতায় মাতােয়ারা। তার অধৈর্য ও অস্থিরতায় ঘনঘন ভূকম্পনে ধরিত্রীর বাইরের ও ভিতরের ভূগঠনের পরিবর্তন ও বিবর্তন ঘটছে। ভূকম্পনের প্রচণ্ড ধাক্কায় ক্ষুব্ধ সমুদ্র প্রাচ্য ভূভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে আলাদা মহাদেশ গড়েছে। ফলে দু-ভাগ ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থান করছে সমুদ্র। সেই থেকে আফ্রিকা বাঁধা পড়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর অরণ্যের বাঁধনে। যে অরণ্যের গভীরে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে অক্ষম। বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ওই গােপন অবকাশে আফ্রিকা পরিণত হয়েছে রহস্যময় দুর্গমে। জল-স্থল-আকাশের দুর্বোধ্য সংকেত আর জাদুতে আফ্রিকার আদিম মানুষের চেতনাতীত হতভম্বদশা। তারা বন্য জন্তু-জানােয়ারের মতাে প্রচণ্ড উগ্র ও হিংস্র হয়ে উঠল। তারই প্রকাশ ঘটল অরণ্য ও মানুষের ভয়ংকর তাণ্ডবে।

অরণ্যের ছায়ায় ঢাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ আফ্রিকা। কবি তাকে ছায়াবৃতা মানবীরূপে সম্বােধন করেছেন। আফ্রিকা যেন কবির দৃষ্টিতে ঘােমটায় ঢাকা অপরিচিতা কোনাে দানবী। সে উপেক্ষিতা ও অনাদৃতা। স্বার্থান্বেষী ও নির্লজ্জ অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গরা এলাে হাতকড়ি নিয়ে আগ্রাসনের কুমতলবে। যাদের নখাগ্র নেকড়ের নখের মতাে তীক্ষ্ণ ও হিংস্র। তারা আগ্নেয়াস্ত্রের দুর্জয় ক্ষমতার গর্বে অন্ধ সূর্যহারা অরণ্যের চেয়েও। তাদের সভ্য বর্বরতা ও নির্লজ্জ অমানুষিকতার নগ্ন প্রকাশ ঘটল তাদের সীমাহীন শােষণ ও নিষ্ঠুর অত্যাচারে। অত্যাচারিত আফ্রিকাবাসীর রক্তে ও অশুতে ধূলা হলাে পঙ্কিল।দস্যুর পায়ের কাটার জুতাের নির্মম পীড়নে ও শােষণে বীভৎস কাদার পিণ্ড তৈরি হলাে। রচিত হলাে নিপীড়িত আফ্রিকাবাসীর চিরচিহ্নিত অসম্মানিত ইতিহাস।

সমুদ্রপারে আফ্রিকার ওই  নিষ্ঠুর অত্যাচারের সমকালে দেবমন্দিরে সন্ধ্যায় সকালে চলল ঘণ্টাধ্বনিসহ পুজোপাঠ। দয়াময় দেবতার কাছে অসহায় মানুষের সহায় প্রার্থনা। মায়ের কোলে খেলা করতে লাগল অবােধ শিশু। মুক্তি কামনায় কবির সংগীতে বেজে উঠল স্রষ্টা সুন্দরের আরাধনা।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার মহা সংকটকাল আসন্ন। সভ্যতার সূর্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহাঝটিকায় অস্তগামী। তাতে বিশ্বমানুষের রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। যুদ্ধবাজদের মনের অন্ধকার গুহা থেকে বেরিয়ে আসছে। বর্বর পশুত্ব। তারাই ঘােষণা করতেন যুদ্ধের অশুভ বার্তা। সভ্যতার অন্তিম ঘণ্টা বেজে উঠেছে। তাকেই কবি বলেছেন আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাত। বিশ্বস্রষ্টার কাছে কবির কাতর প্রার্থনা— মানবসভ্যতার শােভনতা প্রতিষ্ঠিত হােক। মানহারা মানবীর মান ফিরে আসুক।

MCQ প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক বাংলা – আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Question and Answer : (প্রতিটির মান – ১)

১।  শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে ” – 

(A) অতীত জাদুতে 

(B) দুর্গমের রহস্যে 

(C) বিরূপের ছদ্মবেশে 

(D) তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে 

Ans: (D) তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে। 

২। সৃষ্টিকর্তা আফ্রিকাকে যার নিবিড় পাহারায় বেঁধেছিলেন তা হলো— 

(A) সমুদ্রের 

(B) বনস্পতির 

(C) হিংস্র জন্তুর 

(D) বিদেশি সৈন্যের 

Ans: (B) বনস্পতির। 

৩। “ ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে , আফ্রিকা ” —কে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ? 

(A) ভয়ংকর সমুদ্রের বাহু 

(B) রুদ্র সমুদ্রের বাহু 

(C) প্রলয় সমুদ্রের বাহু 

(D) ক্ষুব্ধ সমুদ্রের বাহু 

Ans: (B) রুদ্র সমুদ্রের বাহু। 

৪। “ কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল । ” কী বেজে উঠেছিল ?

(A) সুরমূর্ছনা 

(B) সুরের ঝংকার 

(C) সুন্দরের আরাধনা 

(D) রাগরাগিণী 

Ans: (C) সুন্দরের আরাধনা। 

৫। ‘ প্রদোষ ’ শব্দের অর্থ কী ? 

(A) সন্ধ্যা 

(B) ভোর 

(C) রাত্রি 

(D) দুপুর 

Ans: (A) সন্ধ্যা। 

৬। “ মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা ” — ‘ পূজার ঘণ্টা ’ কার নামে বাজছিল ? 

(A) শিশুদের নামে 

(B) আফ্রিকার নামে 

(C) শিবের নামে 

(D) দয়াময় দেবতার নামে 

Ans: (D) দয়াময় দেবতার নামে। 

৭। সমুদ্রপারে কোথায় ঘণ্টা বাজছিল ? 

(A) মন্দিরে 

(B) বাড়িতে 

(C) সভায় 

(D) উদ্যানে 

Ans: (A) মন্দিরে। 

৮। কবি কীসের মাধ্যমে আরাধনা করছিলেন ?

(A) কবিতা 

(B) লেখনী 

(C) সংগীত 

(D) গ্রন্থ 

Ans: (C) সংগীত। 

৯। পশুরা কী ঘোষণা করল ? 

(A) দিনের অস্তিম কাল 

(B) রাত্রির অন্তিম কাল 

(C) সকালের অস্তিম কাল 

(D) সন্ধ্যার অস্তিম কাল 

Ans: (A) দিনের অস্তিম কাল। 

১০। সমুদ্রকে কবি কোন বিশেষণে বিশেষিত করেছেন ? 

(A) ব্রাহ্ম 

(B) শৈব 

(C) রুদ্র 

(D) বৈষ্ণব

Ans: (C) রুদ্র। 

১১। আফ্রিকার নিভৃত অবকাশ কোথায় ছিল ?

(A) আমাজন অববাহিকায় 

(B) কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে 

(C) রহস্যময় অন্ধকারে 

(C) সাহারা মরুভূমিতে 

Ans: (B) কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে। 

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক বাংলা – আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Question and Answer :(প্রতিটির মান – ১)

১। “ কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে ” –আলো ‘ কৃপণ ‘ কেন ? 

উত্তরঃ আফ্রিকার ঘন অরণ্যভূমিতে সূর্যের আলো প্রায় প্রবেশ করতে পারে না । তাই সেখানে আলোকে কৃপণ বলা হয়েছে । 

২। “ কালো ঘোমটার নীচে / অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ ” – তার মানবরূপ কীভাবে অপরিচিত ছিল ?

উত্তরঃ‘ আফ্রিকা ’ কবিতায় ‘ কালো ঘোমটার নীচে ’ মানবরূপ অপরিচিত ছিল উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে ।

৩। ছায়াবৃতা আফ্রিকার মুখ কোথায় লুকানো ছিল ? 

উত্তরঃ ছায়াবৃতা আফ্রিকার মুখ ‘ কালো ’ ঘোমটার নীচে লুকানো ছিল । 

৪। “ পশুরা বেরিয়ে এল । ” পশুরা বেরিয়ে এসে কী করছিল ? 

উত্তরঃপশুতুল্য সাম্রাজ্যবাদী শাসক গুপ্ত গহ্বর থেকে বেরিয়ে এসে অশুভ ধ্বনিতে দিনের অস্তিমকাল ঘোষণা করেছিল ।

৫। “ নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত ” – কে , কেন বিধ্বস্ত করছিলেন ?

Ans: নতুন সৃষ্ট বিশ্ব তথা পৃথিবীর প্রতি প্রবল ক্ষোভে স্বয়ং স্রষ্টা তাকে বারবার বিধ্বস্ত , অর্থাৎ ভেঙে – গড়ে দেখছিলেন । 

৬। “ রুদ্র সমুদ্রের বাহু ” – সমুদ্রকে ‘ রুদ্র ‘ বলা হয়েছে কেন ?

উত্তরঃসৃষ্টিলগ্নে ভৌগোলিক উপাদানগুলি ততটা নিজস্বতায় পূর্ণ হয়ে ওঠেনি , উত্তাল ছিল সমুদ্রও । তাই তীব্র ঊর্মিমালামুখর সমুদ্র ছিল রুদ্র । 

৭। প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে কে , কাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ? 

উত্তরঃরুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল । 

৮। জল – স্থল – আকাশের সংকেতকে ‘ দুর্বোধ ’ বলা হয়েছে কেন ? 

উত্তরঃ সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষ প্রকৃতির কাছে নিতান্ত অসহায় । প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল অনুধাবনের শক্তি তার নেই । তাই তা দুর্বোধ ।

৯। “ তোমার ভাষাহীন ক্রন্দন ” – ক্রন্দন কেন ভাষাহীন ছিল ? 

উত্তরঃ আপন সত্তার রহস্য উন্মোচনে মগ্ন আফ্রিকা অকস্মাৎ সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হলে সে উদ্‌গত ভাষাহীন ক্রন্দনে ভেসে গিয়েছিল । 

 

SAQ- ব্যাখ্যা ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর  | মাধ্যমিক বাংলা – আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Question and Answer : মান -৩

১। “ ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে ” –তোমাকে বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? তাকে কে , কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ? 

উত্তরঃ *  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ আফ্রিকা ‘ কবিতায় তোমাকে বলতে আফ্রিকা মহাদেশের কথা বোঝানো হয়েছে । 

  * * সৃষ্টির সূচনালগ্নে স্রষ্টা যখন নিজের সৃষ্টির প্রতি অসন্তোষে নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিলেন সেইসময়ে রুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে অর্থাৎ পূর্ব ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ।

২। “ বিদ্রুপ করেছিলে ভীষণকে ” —কে , কীভাবে ভীষণকে বিদ্রুপ করেছিল ? 

অথবা , “ বিরূপের ছদ্মবেশে ” , — কীভাবে সেই ছদ্মবেশ গ্রহণ করা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ  কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পত্রপুট কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ আফ্রিকা ‘ কবিতায় পৃথিবীর অন্য মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন আফ্রিকাকে আস্তে আস্তে স্বাবলম্বী হতে দেখিয়েছেন । এক দুর্গম রহস্যময় স্থানে আফ্রিকার জন্ম হয়েছিল । ‘ নিভৃত অবকাশে ‘ দুর্গমের রহস্য সংগ্রহ করেছিল বিশ্বের অন্যতম বিশাল এই ভূখণ্ড । জল – স্থল – আকাশের ‘ দুর্বোধ সংকেত ‘ চিনেছিল । প্রকৃতি তাকে দিয়েছিল অপার রহস্যময়তা । ‘ অতীত জাদু ‘ মন্ত্র জাগাচ্ছিল আফ্রিকার ‘ চেতনাতীত মনে ’ । তার উপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আস্ফালনকে আফ্রিকা নিজেই চিনে নিতে চাইছিল । সে সেই ভীষণ শক্তিশালীকে বিদ্রুপ করবার স্পর্ধা অর্জন করেছিল । ছদ্মবেশী আগ্রাসী শক্তিকে ফিরিয়ে দিয়েছিল । নিজের শঙ্কাকে হার মানাতেই ভীষণের বিরুদ্ধে সেও ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল । 

৩। “ শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে ” –কে , কীভাবে ‘ শঙ্কাকে ‘ হার মানাতে চাইছিল ?

উত্তরঃ  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ আফ্রিকা ‘ কবিতায় ‘ কে ’ বলতে ‘ আফ্রিকা’র নিজের কথাই বোঝানো হয়েছে । 

  অবজ্ঞার অন্ধকারে ডুবে থাকা বা বন্দি আফ্রিকা নিজেকে উগ্র বিভীষিকাময় তাণ্ডবে শামিল করে , রণবাদ্যের ভয়ানক শব্দের মাধ্যমে একটি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে নিজের মনোগত ‘ শঙ্কা’- কে হার মানাতে চাইছিল । কবির মতে বিভীষিকাই যেন হয়ে উঠেছিল এই আফ্রিকার মহিমা , যা দিয়ে যাবতীয় ভয়কে সে পরাজিত করতে চাইছিল । 

৪। ‘কৃপন আলাের অন্তঃপুরে’-কবিতা অনুসারে বক্তব্যটি লেখ।
 
উত্তরঃ  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আফ্রিকা কবিতায় আফ্রিকার ভৌগােলিক, রাজনৈতিক সম্পর্কে মরমি বিশ্লেষণ রয়েছে। বনস্পতির নিবিড় আলিঙ্গনে, অরণ্যের দুর্ভেদ্য আলাে ছায়ায় আবৃত থাকে আফ্রিকা। নিরক্ষীয় জলবায়ুর অন্তর্গত হওয়ার জন্য বৃহৎ পাতা বিশিষ্ট গাছের সৃষ্টি হয় এখানে। অসংখ্য বৃক্ষ ঘন সন্নিবিষ্ট হওয়ায় অতি সামান্য আলােটুকু প্রবেশের অধিকার পায় না। অন্ধকারে আবৃত থাকে আফ্রিকার অধিকাংশ প্রান্তর।
 
৫।  এল ওরা লােহার হাতকড়ি নিয়ে, ওরা বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? লােহার হাতকড়ি নিয়ে আসার কারণ কী?
 
উত্তরঃ তথাকথিত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মানুষদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফ্রিকা কবিতায় ওরা বলে চিহ্নিত করেছেন।
 
লােহার হাতকড়ি :সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মানুষরা বারবার আফ্রিকার ওপর অত্যাচার করে। কালাে রঙের এই মানুষদের তারা উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখে। এই সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষদের নিজের ভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়। তাদের হাতে পরিয়ে দেওয়া হয় দাসত্বের শৃঙ্খল। বিপন্ন হয় আফ্রিকার স্বাধীনতা। মুলতঃ আফ্রিকাবাসীকে দাস প্রথার শিকার করতেই সাম্রাজ্য বাদী ইংরেজ আফ্রিকায় এসেছিল 
 
 
৬। নখ যাদের তীক্ষ্ণ তােমার নেকড়ের চেয়ে–তােমার বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? কাদের নখ কেন নেকড়ের থেকে তীক্ষ্ণ ?
 
উত্তরঃ *  ‘ তােমার ‘বলতে আফ্রিকা মহাদেশের কথা বলা হয়েছে।
 
* * দুর্ভেদ্য জঙ্গলে পরিবৃত আফ্রিকার হিংস্র আরণ্যক প্রাণীদের অন্যতম হল নেকড়ে। নেকড়ের তীক্ষ্ণ নখের থেকেও সূচালাে ও ধারালাে হল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন। পশ্চিমী দুনিয়া আফ্রিকার ওপর বর্বর উল্লাসে ঝাপিয়ে পড়ে। এদের আগ্রাসনের কথা বলতে গিয়ে কবি ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ এই বাক্য বন্ধটি প্রয়ােগ করে দুনিয়ার লােলুপ হিংস্রতাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছেন। কবি এখানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে আলােচ্য উক্তিটি প্রকাশ করেছেন।

LAQ-রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :মাধ্যমিক বাংলা – আফ্রিকা (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Question and Answer : মান -৫

১। “ সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি ” — ‘ তুমি ‘ কে ? নিভৃত অবকাশে বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? সেই অবকাশে কী সংগ্রহ করা হয়েছিল ? ১+২+২=৫

Ans:  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ আফ্রিকা ’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে ‘ তুমি ’ বলতে বনস্পতির বাঁধনে ঘেরা আফ্রিকা মহাদেশের কথা বলা হয়েছে । 

কবির মতে বিশ্ব সৃষ্টির সূচনায় স্রষ্টা নিজের সৃষ্টিতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তাকে গড়ছিলেন আর ভাঙছিলেন । এমন এক অশান্ত মুহূর্তে পৃথিবীর বিস্তীর্ণ স্থলভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় উত্তাল সমুদ্র এবং নিজের বাহুর বাঁধনে আবদ্ধ করে তাকে । রুদ্র সমুদ্রের তরঙ্গ ঘেরা আফ্রিকার বুকে জেগে ওঠে সুবিশাল অরণ্যানী । জগতের মধ্যে নবজন্ম লাভ করে একাকী আফ্রিকা তার সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে ও নিরুপদ্রবে জীবন অতিবাহিত করতে থাকে । 

 

পৃথিবীর বিস্তীর্ণ স্থলভাগ থেকে আপাতদূরে অবস্থিত আফ্রিকা মহাদেশ নিভৃত অবকাশে তার রিক্ত ভাণ্ডারকে করে তুলেছিল সমৃদ্ধ । সে সংগ্রহ করেছিল দুর্গমের রহস্য , দুর্জেয়কে আয়ত্ত করেছিল বোধগম্যতার মধ্য দিয়ে । চিনে নিয়েছিল জল – স্থল – আকাশের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকা দুর্বোধ্য সংকেতগুলি । তাই কবির ভাষায়— “ সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য , চিনছিলে জলস্থল আকাশের দুর্বোধ সংকেত । ” 

২। “ অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ ” – তোমার বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? তার রূপ অপরিচিত ছিল কেন ? সেই মানবরূপের পরিচয় দাও । ১+২+২=৫

Ans: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ আফ্রিকা ‘ কবিতায় তোমার বলতে ‘ আফ্রিকা ’ মহাদেশের কথা বলা হয়েছে । 

সৃষ্টির সূচনালগ্নে সৃষ্টিকর্তা নিজের সৃষ্টির প্রতি অসন্তোষে প্রাচ্য ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে আফ্রিকাকে নির্বাসন দিয়েছিলেন বনস্পতির ছায়াঘেরা দুর্ভেদ্য অরণ্যে । অরণ্যের নিকষ কালো অন্ধকারে ঢাকা ছিল আফ্রিকার মানবরূপ । আফ্রিকার বুক জুড়ে ছিল শুধুই গভীর অরণ্য । সবুজ পাতার আবরণ ভেদ করে সূর্যরশ্মি সেখানে প্রবেশ করতে পারে না ।তার এই দুর্ভেদ্য রূপের জন্য সে ছিল  লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্পূর্ণ অপরিচিতা ।     

পশ্চিমি দুনিয়ার সুসভ্য শ্বেতাঙ্গদের কাছে আফ্রিকার ভীষণাকার , কুশ্রী কৃষ্ণাঙ্গরা ছিল ঘৃণ্য ও অবহেলিত । প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে কঠিন সংগ্রাম চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা সাফল্য অর্জন করেছে । কবি প্রত্যক্ষ করেছেন আফ্রিকার সহজসরল , অরণ্যচারী ও লড়াকু মানুষের জীবনের ইতিহাস । 

৩। “ হায় ছায়াবৃতা ” — ছায়াবৃতা বলার কারণ কী ? তার সম্পর্কে কবি কী বলেছেন সংক্ষেপে লেখো ।  ২+৩=৫

Ans: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ পত্রপুট ‘ কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে গৃহীত ‘ আফ্রিকা ’ কবিতায় আফ্রিকাকে ‘ ছায়াবৃতা ’ বলা হয়েছে । ছায়াবৃতা কথার অর্থ হলো ছায়া দ্বারা আবৃতা  অর্থাৎ ঢাকা । সৃষ্টিলগ্ন থেকে আফ্রিকা ছিল সুগভীর অরণ্যে পরিপূর্ণা , এই অরণ্য ভেদ করে সু র্যালোক ভূমিস্পর্শ করতে পারে না । কবি তাই এই অরণ্যভূমিকে ছায়াবৃতা বলেছেন । 

ছায়াবৃতা আফ্রিকা উন্নত বিশ্বের উন্নাসিকতায় আত্মগোপন করেছিল কালো ঘোমটার আড়ালে । Dark continent বলে আফ্রিকা পরিচিত ছিল পাশ্চাত্য দুনিয়ায় । সুতীব্র বর্ণবিদ্বেষবশত শ্বেতাঙ্গ সমাজ বড়ো অবজ্ঞার চোখে দেখত আফ্রিকার সভ্যতা সংস্কৃতি তথা জীবনধারাকে । আফ্রিকার সযত্ন লালিত মানবরূপ কোনো পরিচিতি পায়নি । 

প্রচুর খনিজ ও বনজ সম্পদের লোভে এই উন্নাসিক শ্বেতাঙ্গরাই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কাঁপিয়ে পড়ে আফ্রিকার বুকে । আফ্রিকার সরল , নিষ্পাপ মানুষগুলিকে হাতকড়ি পরিয়ে ক্রীতদাসরূপে বিক্রি করে দেয় । প্রাণঘাতী যুদ্ধে পাঠায় । নির্লজ্জ নৃশংসতার পরিচয় দিয়ে নির্বিচার লুণ্ঠনে , হত্যাকাণ্ডে রচনা করে আতঙ্কের পরিবেশ । রক্ত – অশ্রুতে মিশে আফ্রিকা দস্যুদের কাঁটামারা জুতোর তলে বীভৎস এক কাদার পিণ্ডে পরিণত হয় । ছায়াবৃতা আফ্রিকা যাবতীয় আত্মসম্মান হারিয়ে লুণ্ঠিতা , কাঙালিনীতে পরিণত হয় । “

৪।  আফ্রিকা কবিতা অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথের কবি মানসিকতার পরিচয় দাও।
 
উত্তরঃ ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফ্রিকা কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতি এক কঠিন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এক উদার মানবতাবাদকে জীবনের মূলমন্ত্র হিসাবে দেখেছেন।তাই  কবি সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনকে মানবতার অভিশাপ বলে মনে করেছেন। আফ্রিকার মানবতাবাদকে আক্রান্ত হতে দেখে তার কলম সাম্রাজ্যবাদের সমালােচনায় মুখর হয়ে উঠেছে।
 
কৰি মানসিকতার পরিচয় : রবীন্দ্রনাথ কবিতার প্রথম পর্বে আফ্রিকার জন্ম ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। আদিম যুগে স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষ থেকে সবকিছু আবার নতুন করে সৃষ্টি করেছিলেন ঠিক সেই সময় আফ্রিকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সবার থেকে। সেই আফ্রিকার ওপর স্বৈরাচারী শক্তি নানা অত্যাচার শুরু করে। সেই সময়টা হল ইউরােপের সব থেকে বড়াে কলঙ্কের যুগ। কারণ ইউরােপের মানুষ প্রমাণ করতে ব্যস্ত ছিলেন যে আফ্রিকাবাসী কেবলমাত্র জন্তু শ্রেণির জীব। আফ্রিকার মানুষের ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার শুরু হয়েছিল। উপজাতির মানুষদের ওপর দিনের পর দিন অমানসিক অবিচার করা হয়েছিল। এই বিষয়কে মাথায় রেখে রবীন্দ্রনাথ লেখেন আফ্রিকা কবিতাটি। রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অনেক কবিতা লেখেন। আফ্রিকাবাসীর ওপর নির্লজ্জ অত্যাচার দেখে কবি শঙ্কিত হয়েছেন। এই কৃয়াঙ্গের ওপর যে নারকীয় অত্যাচার করা হয়েছিল তা নিঃসন্দেহে অমানবিক। কিন্তু কবি বিশ্বাস করেন এই নির্যাতিত মানুষ একদিন উঠে দাঁড়াবে। সমস্ত পরাধীনতার নাগপাশ থেকে তারা মুক্ত হবে।
 
মূল্যায়ন : কবিতার শেষ অংশে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—“ক্ষমা করা।” হিংসার যাবতীয় উল্লাসকে চাপা দিয়ে সততার শেষ পুণ্যবাণী উচ্চারিত হবে। এটা কবির বিশ্বাস।

৫।  “এসাে যুগান্তের কবি”—কে, কাকে যুগান্তের কবি বলেছেন, এই আহ্বান ধ্বনির মধ্য দিয়ে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
অথবা,
“দাঁড়াও এই মানহারা মানবীর দ্বারে”—মানহারা মানবী কে? কবির এই আহ্বানের কারণ কী?
অথবা,
“বল ক্ষমা কর”-কাকে ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে? এই ক্ষমা করা কীভাবে কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে?   ১+৪=৫

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আগামী দিনের ক্রান্তীকারী সেই কবিকে যুগান্তের কবি বলেছেন—যিনি বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।
 
মানহারা মানবী হল আফ্রিকা, যে পশ্চিমি সভ্যতার লােভ লালসার শিকার হয়েছে।
 
ছায়াবৃতা আফ্রিকা উপেক্ষিত হয়েছিল ইউরােপীয় সভ্য জাতির দ্বারা। তারা কৃয়কায় আফ্রিকাকে দেখেছিল উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে। তীক্ষ্ণ নখ যাদের নেকড়ের চেয়ে তারা আফ্রিকাকে দেখল খাদকের চোখে। সভ্যের বর্বর লােভ থেকে বাঁচল না সে। সভ্যের নির্লজ্জ অমানসিকতা দেখে হতাশ হল এই মহাদেশের অন্তরআত্মা। এদের ভাষাহীন ক্রন্দনে বাম্পাকুল হল অরণ্যপথ। রক্ত ঝরল কৃয় পৃথিবীর সরল নিস্পাপ বুক থেকে। অশুতে ভিজল পথ। লেখা হল অপমানিত নতুন ইতিহাস।
সভ্যতার বিবর্তন ঘটে সময়ের পট পরিবর্তিত হয়। পশ্চিম দিগন্তে দেখা যায়  বিক্ষুব্ধ মেঘ। পশ্চিমের গুপ্ত গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসে পশুরা। অশুভ ধ্বনিতে তারা ঘােষণা করে দিনের অন্তিম কাল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ মনে করেন অশুভ শক্তির পতন অনিবার্য। কালের রথের চাকার যেমন গমন আছে তেমন প্রত্যাগমনও আছে। তাই যুগান্তের কবির কাছে প্রার্থনা দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে বলাে ক্ষমা করাে।
হিংস্র প্রলাপের মধ্যে ক্ষমা হয়ে উঠুক বিচারের মানদণ্ড। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ যুগান্তের কবির কাছে আহ্বান করেছেন মানহারা মানবীর পাশে দাঁড়াতে। আর হিংস্র প্রলাপের মধ্যে ক্ষমা হয়ে উঠুক বিচারের মানদণ্ড। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ যুগান্তের কবির কাছে আহ্বান করেছেন মানহারা মানবীর পাশে দাঁড়াতে। আর অনুরােধ করেছেন হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাকে দাঁড় না করিয়ে ক্ষমার আদর্শকে তুলে ধরতে।

আরো পড়ুনঃ 

 
 
 
 
 
 

3 thoughts on “মাধ্যমিক বাংলা আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর”

  1. Pingback: সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর | Pariksha Prastuti

  2. Pingback: অসুখী একজন কবিতার বড় প্রশ্ন- উত্তর | Pariksha Prastuti

  3. Pingback: অসুখী একজন কবিতার MCQ & SAQ | Pariksha Prastuti

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *