বাংলা গানের ইতিহাসের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

বাংলা গানের ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন উত্তর

পরীক্ষা প্রস্তুতি : বাংলা গানের ইতিহাসের বড়ো প্রশ্ন উত্তর।  প্রিয় ছাত্র ছাত্রীরা তোমরা যারা ২০২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে ,তাদের কাছে বাংলা বিষয়ের বাংলা গানের ইতিহাসের বড়ো প্রশ্ন উত্তর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টপিক। আমাদের PARIKSHAPRASTUTI .ORG এক্সপার্ট টিম উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা গানের ইতিহাসের বড়ো প্রশ্ন উত্তর থেকে যে প্রশ্ন গুলি ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছে , তা নিচে প্রশ্ন উত্তর আকারে আলোচনা করা হলো। আশা করি তোমরা অবশ্যই কমন পাবে। তোমাদের প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানতে পারো। বাংলা গানের ইতিহাসের বড়ো প্রশ্ন উত্তর।


Table of Contents

বাংলা গানের ইতিহাসের বড়ো প্রশ্ন উত্তর


১)বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সংক্ষেপে আলােচনা করাে | বাংলা সংগীতের ধারায় রবীন্দ্র সংগীতের অবদান বিষয়ে আলােচনা করাে।

উত্তর: বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭.৫.১৮৬১-৭.৮.১৯৪১) এক অবিস্মরণীয় নাম। রবীন্দ্র-সংগীত সময়ের সাথে সাথে সমসাময়িক হয়ে উঠেছে। বাঙালিসমাজে এই গানের গ্রহণযােগ্যতা চিরকালীন। বাংলার মানুষের আনন্দ, দুঃখ, প্রেম, প্রতিবাদ, প্রকৃতিমুগ্ধতা, দেশ প্রেম, ঈশ্বর উপলদ্ধি—সমস্ত কিছুর প্রকাশ যাকে আশ্রয় করে—তা রবীন্দ্রনাথ এবং তার গান। হতাশাপূর্ণ জীবনে আলাের পথ দেখায় তার গান। আর সব গানের থেকে এ গান আলাদা, অনন্য। স্বাধীন দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি। ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আমার সােনার বাংলা আমি তােমায় ভালবাসি। তার গানের মােট সংখ্যা দেড় হাজারের কিছু বেশি।

রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমস্ত গানের বাণী এবং সুর তার নিজের। তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশ্য রবীন্দ্রনাথের অল্প কিছু গানে সুর দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নিজে তার গান সম্পর্কে বলেছেন—“আমার গানের মধ্যে সঞ্চিত হয়েছে দিনে দিনে সৃষ্টির প্রথম রহস্য, আলােকের প্রকাশ, আর সৃষ্টির শেষ রহস্য, ভালােবাসার অমৃত।” রবীন্দ্রনাথ গান রচনা করেছেন বাংলা গানের বিষয়বিন্যাসের প্রচলিত রীতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে গিয়ে। নতুনত্ব এনেছেন শুধু বিষয়ে নয়, গানের গঠনেও। যা পুরােপুরি নতুন।

রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করেছিলেন, প্রাচীন সংগীতের জড় পুনরাবৃত্তিতে নয়, বাংলা গানকেটিকে থাকতে হবে নিত্য নতুন সৃষ্টির মাধ্যমে। তবু তার গান পরম্পরাহীন নয়। ভারতীয় প্রাচীন সংগীত ধারার সাথে তা সংযােগবাহী। ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, ঠুংরির সাথে পাশ্চাত্যের সুরধারাও এসে মিশেছে তার গানে, আর আছে। আমাদের বাউল, কীর্তন। সবটাই উপলদ্ধি করা যায়। কিন্তু বিচ্ছিন্ন করা যাবে না কিছুতেই। সমন্বয়বাদী ঋষির এটাই অনন্যতা। রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য এবং গীতিনাট্যগুলিতেও বহু উল্লেখযােগ্য গান রয়েছে যা বিশেষ তাৎপর্যবাহী। বাংলা সিনেমার গান হিসেবে আজও রবীন্দ্রসংগীতের জনপ্রিয়তা সর্বাধিক।

২)বাংলা গানের ধারায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

উত্তর: বাংলার এক ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণে দ্বিজেন্দ্রলাল (১৯.৭.১৮৬৩-১৭.৫.১৯১৩) সৃষ্টি করেছেন তার নাটক এবং গানগুলি। যা আজও বহুলাংশে প্রাসঙ্গিক এবং জনপ্রিয়। সেই যুগে তাঁর রচিত নাটকগুলি সারা ভারতবর্ষেই প্রদর্শিত হত। ইতিহাসভিত্তিক সেই সমস্ত নাটকগুলির প্রয়ােজনে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন প্রচুর গান। যার বেশিরভাগটাই ছিল দেশপ্রেমমূলক। তার সাথে রয়েছে বেশ কিছু প্রেম, প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিক ভাবনার গানও। তাঁর নাটকগুলির বিপুল জনপ্রিয়তার মূলে ছিল আদর্শবাদ এবং যুগের চাহিদা অনুসারী মঞ্চ উপস্থাপন। তাঁর গানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযােজ্য। তিনি সেই সময়ের সুর ধরতে পেরেছিলেন। সেই সুর এনেছিলেন তার গানে।

সাজাহান নাটকের ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটি প্রায় জাতীয় সংগীত পর্যায়ের হয়ে উঠেছিল। প্রতাপসিংহ নাটকের ‘ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে’, দুর্গাদাস-এর ‘পাঁচশাে বছর এমনি করে’ অথবা মেবার পতন-এর ‘মেবার পাহাড় মেবার পাহাড়’ সমস্ত ভারতবাসীর মন জয় করেছে। তাঁর রচিত অন্যান্য দেশাত্মবােধক গান, চিরকালীন যেমন ‘যেদিন সুনীল জলধি হইতে’ অথবা ‘ভারত আমার ভারত আমার অপূর্ব’। তার গান সেই সময় থেকেই দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে খ্যাত। রবীন্দ্র সমকালে অবস্থান করেও তার গান আপন স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে কালজয়ী হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নিজেও তার গানের ভক্ত ছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গানও বিখ্যাত। যা ওই যুগে বাঙালি শ্রোতাদের নির্মল আনন্দের আস্বাদন এনে দিয়েছিল। তার গানে তিনি দেশজ সুরের সঙ্গে পাশ্চাত্য সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন, যা সুরের ক্ষেত্রে নতুনত্ব এনে দিয়েছে। বাংলা গানের এক বিরাট স্তম্ভ দ্বিজেন্দ্রগীতি।

৩)বাংলা গানের ধারায় রজনীকান্ত সেনের অবদান আলােচনা করাে।

উত্তর: রজনীকান্ত সেন (২৭.৭.১৮৬৫-১৩.৯.১৯১০) মূলত ভক্তিগীতি এবং দেশপ্রেমমূলক গান রচনা করেছেন। বেশ কিছু হাসির গানও লিখেছিলেন। তার কৈশােরে শ্যামাসংগীত রচনার মাধ্যমে তিনি আপন প্রতিভার প্রকাশ ঘটান। রাজশাহীতে থাকার সময় তার পরিচয় ঘটে অক্ষয়কুমার মৈত্রের সঙ্গে। অক্ষয়কুমারের বাড়ির গানের আসরে তিনি নিজের তৈরি গানগুলি গাইতেন। এখানেই তিনি কবি দ্বিজেন্দ্রলালের রচিত হাসির গানগুলি শােনেন। তার কবিসত্তা এবং গীতিকারসত্তা একসাথে তাঁর সৃষ্টিকে পূর্ণ করে তুলেছে।

অক্ষয়কুমার মৈত্র রজনীকান্ত সম্পর্কে বলেছেন- “কাহারও বাণী গদ্যে, কাহারও পদে, কাহারও বা সঙ্গীতে অভিব্যস্ত। রজনীকান্তের কান্ত পদাবলী কেবল সঙ্গীত।” তার আধ্যাত্মিক গান—’কেন বঞ্চিত হব চরণে’, ‘তুমি অরূপ, স্বরূপ, সগুণ, নিগুণ’, ‘তুমি আমার অন্তঃস্থলের খবর জান’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত সংগীতগ্রন্থ কল্যাণী (১৯০৫), অমৃত (১৯১০), আনন্দময়ী (১৯১০), বিশ্রাম (১৯১০), অভয়া (১৯১০), সঙাবকুসুম (১৯১৩), শেষদান (১৯২৭) ইত্যাদি। তার মায়ের দেওয়া মােটা কাপড়’ গানটি সম্বন্ধে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি বলেছেন—“ইহাতে মিনতির অশ্রু আছে-নিয়তির বিধান আছে।” বাঙালির মনে গাথা রজনীকান্তের গানগুলি। তার ভক্তিমূলক গানের আত্মনিবেদনের আকুতি আজও বাঙালি শ্রোতাকে মুগ্ধ করে।

৪)বাংলা গানের ধারায় গীতিকার ও সুরকার অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলােচনা করাে।

উত্তর: বাংলা গানের ইতিহাসে অন্যতম গীতরচয়িতা এবং সুরকার অতুলপ্রসাদ সেন (২০.১০.১৮৭১-২৬.৮.১৯৩৪)। রবীন্দ্রপ্রভাবিত এই গীতিকার তার সৃষ্টিতে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন প্রাচীন বাংলা গানের ভক্তি এবং প্রেমগীতির ধারার সাথে রবীন্দ্রদর্শনের। তার ভক্তিমূলক গানগুলি আত্মনিবেদনের আর্তি আর আন্তরিকতায় পূর্ণ। প্রেমের গানে রয়েছে বিরহবেদনা। ভারতীয় সংগীতের ধারা তার গানে ছায়া ফেলেছে। তার ভক্তি ও প্রেমগীতিগুলি অনুধাবন করলেই এ কথার প্রমাণ মেলে। তার সমস্ত গান সংকলিত রয়েছে গীতিগুঞ্জ (১৯৩১) নামক সংকলনে।

ভক্তি, প্রেম এবং দেশাত্মবােধএই তিনটি পর্যায়েই অতুলপ্রসাদ সেনের গান রয়েছে। দেশাত্মবােধক গানের মধ্যে ‘বল বল বল সবে’ অথবা ‘হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর’ ইত্যাদি জনপ্রিয়। তাঁর রচিত ‘একা মাের গানের তরী’, ‘আমারে ভেঙে ভেঙে নাও’ অথবা ‘কে তুমি নদীকূলে’ বাংলা গানের ঐশ্বর্য। হিন্দুস্থানী গানের সুর ও ঢঙ, কীর্তন ও বাউল সুর তিনি তার গানে এনেছিলেন। তার গানের সংখ্যা দুশাের কিছু বেশি। তার আরও কয়েকটি উল্লেখযােগ্য গান- ‘উঠগাে ভারতলক্ষ্মী’, ‘তােমারি যতনে তােমারি উদ্যানে’, ‘কে আবার বাজায় বাঁশি’ অথবা ‘বঁধু এমন বাদলে তুমি কোথা’ প্রভৃতি। তাঁর গানের মধ্যে আছে সৌন্দর্যবােধ, ঈশ্বরানুভূতি আর ব্যক্তি-হৃদয়ের আকুতি।

৫)বাংলা গানের ইতিহাসে চারণ কবি মুকুন্দদাসের অবদান সম্পর্কে আলােচনা করাে।

উত্তর: বাংলা গানের চারণকবি মুকুন্দদাস (১৮৭৮-১৫.৫.১৯৩৪) ছিলেন অবিভক্ত বাংলার বরিশালের অদ্বিতীয় নেতা অশ্বিনীকুমার দত্তের শিষ্য, শুরুর দিকে মুকুন্দ দাস যাত্রার গান লিখতেন। তা শুনে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত মুগ্ধ হন। মুকুন্দ দাস গ্রামে গ্রামে দেশপ্রেমমূলক গান গেয়ে বেড়াতেন, অভিনয় করতেন যাত্রাপালায়। ভবরঞ্জন মজুমদার সম্পাদিত ‘মাতৃপূজা সংকলনে তাঁর একটি গান—’ছিল ধান গােলাভরা, শ্বেত ইঁদুরে করল সারা’। এ গানের জন্য তিনি ব্রিটিশ সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং তার তিন বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা হয়। অসহযােগ এবং আইন-অমান্য আন্দোলনের সময় তিনি যাত্রাপালা ও গান দিয়ে দেশের মানুষকে মাতিয়ে তােলেন। তার ‘মাতৃপূজা’ নামক যাত্রাপালাটি ওই যুগে জনপ্রিয় হয় দেশের তরুণদের কাছে। তার রচিত কয়েকটি গ্রন্থ – সাধনসংগীত, ব্রহ়চারিণী, পল্লীসেবা, সাথী প্রভৃতি।

বাংলা গানের এই ভিন্ন ধারার গীতিকার সারাজীবনে অজস্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু তা ছাপিয়ে তিনি বাঙালি সংগীত শ্রোতার কাছে আজও প্রিয় হয়ে আছেন তার অপূর্ব গানগুলির জন্য। মুকুন্দ দাস বৈয়বধর্মে দীক্ষিত হলেও তার সাধনসংগীতে আছে পদাবলি ও শ্যামাসংগীতের অপূর্ব সমন্বয়। তিনি সারাজীবন কোনাে সম্প্রদায়ভুক্ত হননি। নিয়মিত কীর্তনের আসরেও যােগ দিতেন। লিখতেন বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায়। বিদেশি বর্জন উপলক্ষ্যে রচিত তাঁর গানগুলি প্রতিবাদী মানুষের মনে ঢেউ তােলে। তার গান আজও আধুনিক। বাংলা গানের ইতিহাসে তার আসন চিরকাল উজ্জ্বল থাকবে।

৬)বাংলা সংগীতের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান আলােচনা করাে। 

উত্তর: বাংলা গানের চারণকবি মুকুন্দদাস (১৮৭৮-১৫.৫.১৯৩৪) ছিলেন অবিভক্ত বাংলার বরিশালের অদ্বিতীয় নেতা অশ্বিনীকুমার দত্তের শিষ্য, শুরুর দিকে মুকুন্দ দাস যাত্রার গান লিখতেন। তা শুনে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত মুগ্ধ হন। মুকুন্দ দাস গ্রামে গ্রামে দেশপ্রেমমূলক গান গেয়ে বেড়াতেন, অভিনয় করতেন যাত্রাপালায়। ভবরঞ্জন মজুমদার সম্পাদিত ‘মাতৃপূজা সংকলনে তাঁর একটি গান—’ছিল ধান গােলাভরা, শ্বেত ইঁদুরে করল সারা’। এ গানের জন্য তিনি ব্রিটিশ সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং তার তিন বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা হয়। অসহযােগ এবং আইন-অমান্য আন্দোলনের সময় তিনি যাত্রাপালা ও গান দিয়ে দেশের মানুষকে মাতিয়ে তােলেন। তার ‘মাতৃপূজা’ নামক যাত্রাপালাটি ওই যুগে জনপ্রিয় হয় দেশের তরুণদের কাছে। তার রচিত কয়েকটি গ্রন্থ – সাধনসংগীত, ব্রহ়চারিণী, পল্লীসেবা, সাথী প্রভৃতি।

বাংলা গানের এই ভিন্ন ধারার গীতিকার সারাজীবনে অজস্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু তা ছাপিয়ে তিনি বাঙালি সংগীত শ্রোতার কাছে আজও প্রিয় হয়ে আছেন তার অপূর্ব গানগুলির জন্য। মুকুন্দ দাস বৈয়বধর্মে দীক্ষিত হলেও তার সাধনসংগীতে আছে পদাবলি ও শ্যামাসংগীতের অপূর্ব সমন্বয়। তিনি সারাজীবন কোনাে সম্প্রদায়ভুক্ত হননি। নিয়মিত কীর্তনের আসরেও যােগ দিতেন। লিখতেন বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায়। বিদেশি বর্জন উপলক্ষ্যে রচিত তাঁর গানগুলি প্রতিবাদী মানুষের মনে ঢেউ তােলে। তার গান আজও আধুনিক। বাংলা গানের ইতিহাসে তার আসন চিরকাল উজ্জ্বল থাকবে।

৭)সুরকার ও গীতিকার সলিল চৌধুরীর কৃতিত্ব আলােচনা করাে।

উত্তর: বাংলা গানে নতুন আলাের পথযাত্রী খ্যাতনামা সুরকার ও গীতিকার সলিল চৌধুরী (১৯.১২.১৯২২-৫.৯.১৯৯৫)। ভারতীয় সংগীতধারা। সম্পূর্ণরূপে আত্মস্থ করে তাকে নিজের অপূর্ব সৃষ্টি কৌশলে উপস্থাপন করেন তিনি। ছয়-সাত দশকের বাংলা গান তাঁর নতুন নতুন সুর আর কথার জাদুতে আচ্ছন্ন ছিল। ১৯৪৪-এ তিনি যুক্ত হন গণনাট্য সংঘের সাথে। তার গানে সমকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন আর রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রভাব গভীরভাবে লক্ষ করা যায়।

আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার উপলক্ষ্যে তিনি রচনা করেছেন ‘বিচারপতি তােমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা’। ঐতিহাসিক নৌবিদ্রোহের সমর্থনে লিখেছেন—‘ঢেউ উঠছে, কারা টুটছে’। তাঁর রচিত ‘আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমে। চাঁদ ফুল জোছনার গান আর নয়ওগাে প্রিয় মাের, খােলাে বাহুডাের। পৃথিবী তােমারে যে চায়’ গানটির বক্তব্য অনুধাবন করলে তার সমকালের চাহিদা, সমাজতান্ত্রিক বােধের উজ্জীবন, মানুষের পাশে দাঁড়ানাের ঐকান্তিক ইচ্ছার কথা বোঝা যায়। তিনি গানের সুরারােপ কথার সাথে উপযুক্ত করে তুলেছিলেন গানের সুরকে। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বা সুকান্ত ভট্টাচার্যের বেশকিছু কবিতায় সুরারােপ করে সেগুলিকে গান হিসেবে কালজয়ী করে দিয়েছেন সলিল চৌধুরী। হিন্দি আধুনিক গান, সিনেমার গান রচনাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি। তার সমকালীন সমস্ত খ্যাতনামা ভারতীয় সংগীতশিল্পীই তাঁর রচিত ও সুরারােপিত গান গেয়েছেন। বাংলা গানকে একক প্রচেষ্টাতেই তিনি নিয়ে গেছেন সম্পূর্ণ নতুন পথে, যে পথ চির-আধুনিক।

৮)লােকগান বলতে কী বােঝ? বাংলা লোকগানের ধারায় ভাওয়াইয়া গান এবং ভাটিয়ালি গানের অবদান লেখা। 

উত্তর: লোকগান : প্রতিকূল প্রকৃতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আদিম যুগ থেকে মানুষ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই লড়াই থেকে উদ্ভূত ছন্দ আর সুরই লােকসংগীত। তাই এই গান শ্রমজীবী মানুষের অবসর বিনােদনের গান। পল্লির সমাজজীবনে যে গান বহুযুগ ধরে মুখে মুখে রচিত হয়ে মুখে মুখেই প্রচার লাভ করে, তাই লােকগান। লোকগানের অন্যত্তম দুটি ধারা হল ভাওয়াইয়া গান এবং ভাটিয়ালি গান। 

ভাওয়াইয়া গান : ভাওয়াইয়া উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক গান। বাংলাদেশের রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার ও আসামের গােয়ালপাড়া ভাওয়াইয়া গানের প্রকৃত অঞ্চল। এই গানগুলিতে স্থানীয় সংস্কৃতি, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র ও পারিবারিক ঘটনাবলির পরিচয় পাওয়া যায়। রাজবংশীরা এই গানের ধারক ও বাহক। এই গানের শ্রেষ্ঠ শিল্পী আব্বাসউদ্দিন। গানের বিষয় মূলত প্রেম। নদী-নৌকা মাঝিকেন্দ্রিক ভাটিয়ালি গান মূলত পূর্ববঙ্গের গান। এ গানের বিষয়বস্তু লৌকিক ও আধ্যাত্মিক প্রেম। এটি অলস মুহূর্তের গান, তাই এর সুর ও লয় বিলম্বিত। বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার প্রায় নেই। সারি গানও মাঝিদের গান। তারা দাঁড় টানার সময় সারিগান গায়। প্রেমের সঙ্গে যুক্ত বলে এই গানের গতি প্রবাহ বিচিত্রমুখী। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম সীমান্তজুড়ে ঝুমুর গানের চল। এটি মূলত প্রেমসংগীত। এর সুর সহজসরল। বাংলা দেশের লােকায়ত সম্প্রদায় বাউলরা তাদের গানের মাধ্যমে প্রচার করেছেন মানবতার বাণী। মানবাত্মাকে জানার মধ্যে দিয়ে পরমাত্মাকে জানা, সেই পরমে লীন হয়ে যাওয়া বা আধ্যাত্মিক প্রেমই বাউল গানের মূল উপজীব্য বিষয়। লালন সাঁই ছিলেন এ জাতীয় গানের প্রধান গীতিকার।

ভাটিয়ালি গান : ভাটিয়ালি নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান লােকসংগীত হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। ভাটিয়ালি গানে মাঝি-মাল্লা, কৃষকের, মেহনতি মানুষের দুঃখ-সুখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, কামনা-ভালােবাসা, প্রেমভক্তির পরিচয় নিবিড়ভাবে ফুটে উঠেছে। তত্ত্বভারমুক্ত এই গানগুলি সুপ্রাচীন কাল থেকে পূর্ববঙ্গের মৈমনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুরের লােককবিদের রচিত ভাটিয়ালি সুরের প্রক্ষেপে গড়ে উঠেছে। সুরটির নাম ভাটিয়ালি; যা পরবর্তীকালে গানগুলিরও পরিচায়ক হয়ে উঠেছে। অঞ্চলবিশেষে এই সুরের পাঁচটি ধাঁচ – সুষঙ্গ, ভাওয়াইল্যা, বিক্রমপুইরা, বাখরগঞ্জা, গােপালগঞ্জা -যা নির্ভর করে গায়কের কণ্ঠস্বর, উচ্চারণভঙ্গি ও শিক্ষার উপরে। প্রতিটি ধাঁচে রয়েছে চারটি লহর বা টান: ‘বিচ্ছেদ লহর’, ‘সারী লহর’, ‘ঝাপ লহর’ ও ‘ফেরুসাই লহর’। এই লহর বা টান নির্ভর করে গানের ছন্দ রচনার উপর। এগুলির মধ্যে ‘বিচ্ছেদ লহর’ করুণরসাত্মক গানে একক কণ্ঠে, ‘সারী লহর’ হাস্যরসাত্মক গানে। দলবদ্ধভাবে, ‘ঝাপ লহর’ করুণরসাত্মক ছাড়া অন্য গানে মানানসই। এই তিনটি লহর ছাড়া বাকী সবই ‘ফেবুসাই লহর’ নামে পরিচিত।

৯)বাংলা গানের ইতিহাসে মান্না দের অবদান আলােচনা করাে।

উত্তর: আধুনিক বাংলা গানে নিজস্ব গায়কি এবং সংগীতে অসামান্য বুৎপত্তি নিয়ে মান্না দে এক উল্লেখযােগ্য অধ্যায়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১মে উত্তর কলকাতার এক বনেদি বাড়িতে তার জন্ম। তার রক্তেই ছিল সংগীতের উত্তরাধিকার। কাকা কৃয়চন্দ্র দে ছিলেন সেকালের বিস্ময়কর সংগীতস্রষ্টা। তার কাছেই মান্না দের শৈশবের সংগীত শিক্ষা হয়েছিল। এ ছাড়াও ওস্তাদ দবীর খাঁ- র কাছে তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিক্ষা নেন। ১৯৪২-এ কাকা কৃয়চন্দ্র দে-র সঙ্গী হয়ে তিনি মুম্বাই যান। এখানে প্রথমে কাকা এবং পরে শচীনদেব বর্মন ও অন্যান্যদের সঙ্গে সহকারী সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৩- এ ‘তামান্না’ সিনেমায় সুরাইয়া-র সঙ্গে দ্বৈতসংগীত জাগাে, আয়ি উষা দিয়ে নেপথ্য শিল্পী হিসেবে মান্না দের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৫০-এ মশাল ছবিতে একক শিল্পী হিসেবে মান্না দে-কে পাওয়া যায়। এর মধ্যেই নিজে সংগীত পরিচালনাও শুরু করেন। কিন্তু গানের শিক্ষাকে তিনি থামিয়ে দেননি।

পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেই উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ আমন আলি খান এবং ওস্তাদ আব্দুল রহমান খানের কাছে এবং ধীরে ধীরে হিন্দি ও বাংলা গানের জগতে অপ্রতিরােধ্য হয়ে ওঠেন মান্না দে। সর্বমােট ১২৫০টি বাংলা গান তিনি গেয়েছেন। আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, ভক্তিগীতি-সহ সংগীতের সব শাখাতেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। বাংলা ছাড়াও ভােজপুরি, মৈথিলি, অসমিয়া, ওড়িয়া, গুজরাটি, পাঞ্জাবি-সহ সবকটি প্রধান ভারতীয় ভাষাতেই মান্না দে গান করেছেন। শঙ্খবেলা’, অ্যান্টনি ফিরিজ্গি’, ‘চৌরঙ্গি, তিন অধ্যায়’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘মৌচাক’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘শেষ থেকে শুরু’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’ এরকম অসংখ্য বাংলা চলচ্চিত্রে মান্না দের গাওয়া গান ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। বাঙালির হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা করেছে ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে’, ‘দীপ ছিল শিখা ছিল’, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা, আমি যে জলসাঘরে ইত্যাদি অজস্র গান। চলচ্চিত্রে একাধিকবার জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ এবং দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে।

১০)বাংলা গানের ধারায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা কর।

উত্তর: বাংলা গানের ধারায় একটি উল্লেখযোগ্য নাম হল হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (১৯২০- ১৯৮৯)। তিনি একাধারে গায়ক, সংগীত নির্দেশক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক। তিনি বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগের অন্যতম একজন কারিগর।

১৯৩৭ সালে শৈলেশ দত্তগুপ্তের তত্ত্বাবধানে বেসিক ডিস্কের গানে গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ১৯৪১ সালে ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবিতে গান গেয়ে নেপথ্য শিল্পী হিসাবে তাঁর পথচলা শুরু হয়। এরপর একে একে ‘শাপমােচন, ‘হারানাে সুর’, ‘সন্দীপন পাঠশালা’, ‘সূর্যতােরণ’, ‘বালিকা বধূ’, ‘সাত পাঁকে বাঁধা’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘নীল আকাশের নীচে’ প্রভৃতি অসংখ্য ছবিতে তিনি গান গেয়েছেন। বাংলা ছায়াছবিতে নেপথ্য শিল্পী হিসেবে যেমন তাঁর খ্যাতি, তেমনি সুরকার হিসেবেও তিনি বহু ছবিতে কাজ করেছেন।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীতপ্রতিভা কেবল বাংলা ছায়াছবির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, গায়ক এবং সুরকার হিসাবে তিনি বহু হিন্দি ছবিতেও কাজ করেছেন। হিন্দি গানের জগতে তিনি হেমন্তকুমার নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘মুছে যাওয়া দিনগুলি’, ‘আমায় প্রশ্ন করে’, ‘ও নদী রে’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা’, ‘এই রাত তােমার আমার’, ‘আয় খুকু আয়’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘নীড় ছােটো ক্ষতি নেই’, প্রভৃতি গানগুলি এখনো সমান জনপ্রিয়।

শুধুমাত্র ছায়াছবির গান বা বাংলা আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে নয়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রসঙ্গীতেরও একজন খ্যাতনামা শিল্পী ছিলেন। হেমন্তর কন্ঠে রবি ঠাকুরের গান বাঙালি শ্রোতার হৃদয় স্পর্শ করে।

১১)বাংলা গানের ধারায় কিশোর কুমারের অবদান আলোচনা করো।

উত্তর: বাংলা তথা ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে এক উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক হলেন কিশোর কুমার (১৯২৯ – ১৯৮৭)। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং রেকর্ড প্রযোজক। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বাধিক সফল এবং সর্বকালের সেরা নেপথ্য গায়ক হিসেবে বিবেচিত হন। 

১৯২৯ সালের চৌঠা আগস্ট মধ্যপ্রদেশের এক বাঙালি পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়।

তাঁর দাদা অশোক কুমার বোম্বের একজন সফল অভিনেতা ছিলেন। অভিনয়ে কিশোর কুমারের কোনো আগ্রহ ছিল না, তিনি বরাবর গান গাইতেই চাইতেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গীতের প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছিল না। প্রথম জীবনে তিনি কে এল সায়গলকে অনুকরণ করতেন। পরে, বিখ্যাত সুরকার শচীনদেব বর্মনের পরামর্শে তিনি তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে গান গাওয়া শুরু করেন।

১৯৪৮ সালে ‘জিদ্দি’ ছবির মাধ্যমে তিনি নেপথ্য গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে ষাটের দশক থেকেই তিনি গায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং সত্তরের দশকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যান।

তিনি বাংলা, হিন্দি, ভোজপুরি, অসমিয়া-সহ অনেকগুলি ভারতীয় ভাষায় মোট ২০০০-এরও বেশি গান গেয়েছেন। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তিনি ৮ বার ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তবে, শিল্পী হিসেবে কিশোর কুমারের সবথেকে বড় প্রাপ্তি হল তার বিপুল জনপ্রিয়তা, যে কারণে তিনি সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সঙ্গীতের প্রথাগত প্রশিক্ষণ না থাকা স্বত্বেও তিনি যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর।


উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা গানের ধারা পাঁচ নম্বরের বড়ো প্রশ্ন-উত্তরের সাজেশন Pdf Download  করতে এখানে ক্লিক করুন , Click  Here 



HS English Report Writing Suggestion -এর জন্য এখানে Click করুন।


1 thought on “বাংলা গানের ইতিহাসের বড়ো প্রশ্ন উত্তর”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *