একাদশ শ্রেণীর কর্তার ভূত গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর। প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা তোমরা যারা এবছর একাদশ শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষা দেবে তোমাদের সকলকে WWW.PARIKSHAPRASTUTI.ORG এক্সপার্ট টিমের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। তোমরা যাতেএকাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে ১০০% নাম্বার পেতে পারো তার জন্য আমাদের টীম তোমাদের জন্য বিষয় ভিত্তিক chapter wise সাজেশন নিয়ে আসবে ধারাবাহিক ভাবে। আজকে একাদশ শ্রেণীর ‘কর্তার ভূত’ গল্পের সঠিক উত্তর নির্বাচনধর্মী (MCQ ),সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী(SAQ ) এবং রচনাধর্মী বড় (LAQ ) প্রশ্ন ও উত্তরের সাজেশন তুলে ধরা হল। আমাদের এই প্রচেষ্টা ভালো লাগলে তোমাদের বন্ধুদের মাঝে আমাদের এই ওয়েব পেজটি শেয়ার করবে। কর্তার ভূত গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর
কর্তার ভূত গল্পের বিষয় সংক্ষেপ
‘লিপিকা’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘কর্তার ভূত‘ একটি রাজনৈতিক রূপক কাহিনী। রূপক কাহিনি বলতে সেই কাহিনিকে বোঝায় যার একটি অন্তর্নিহিত অর্থ থাকে। আলোচ্য গল্পে লেখক গল্পচ্ছলে উনিশ শতকের ভারতীয় সমাজের চালচিত্র তুলে ধরেছেন। গল্পটি আয়তনে ছোটো হলেও এর বিষয় ভাবগম্ভীর এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
‘কর্তার ভূত’ গল্পের সঠিক উত্তর নির্বাচনধর্মী (MCQ )
1)“একে বলে অদৃষ্টর চালে চলা “- কাকে বলে?
[A]চোখ বুজে চলাকে
[B]যুক্তিবাদী ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে চলাকে
[C]ভূতগ্রস্থ হয়ে চলাকে
[D] তত্বজ্ঞ্যানীদের প্রদর্শিত পথে চলাকে
2)“দেশের লোক ভারী নিশ্চিত হলেন”- কেন?
[A]ভূতকে মানলে কোনো ভাবনাই নেই
[B]বুড়ো কর্তা বেঁচে গেলেন
[C]তারা অভিভাবক হীন রইল না
[D]ভূতের রাজত্বে সবাই সুখী
3)তবু স্বভাব দোষে যারা ভাবতে যায় তাদের পেতে হয়-
[A]ভূতের প্রশংসা
[B]অভ্যর্থনা
[C]ভূতের কান মলা
[D]কোনোটিই নয়
4)জগৎ – এর সবচেয়ে আদিম চলার রীতিটি হল –
[A]যুক্তিবাদী ভাবনা নিয়ে চলাকে
[B]ভূতগ্রস্থ হয়ে চলাকে
[C]তত্বজ্ঞ্যানীদের প্রদর্শিত পথে চলাকে
[D]চোখ বুজে চলাকে
5)“একে বলে অদৃষ্টর চালে চলা “- কাকে বলে?
[A]চোখ বুজে চলাকে
[B]যুক্তিবাদী ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে চলাকে
[C]ভূতগ্রস্থ হয়ে চলাকে
[D]তত্বজ্ঞ্যানীদের প্রদর্শিত পথে চলাকে
6)জগতের সবচেয়ে আদিম চলার রীতি প্রথম দেখা যায় –
[A]প্রাগৈতিহাসিক মানুষের মধ্যে
[B]চক্ষুহীন কীটানুদের মধ্যে
[C]ধার্মিক ব্যাক্তিদের মধ্যে
[D] ওঝাদের মধ্যে
7)ভুতুরে জেলখানার দারোগা হলেন –
[A]ভূতের নায়েব
[B]তত্বজ্ঞ্যানী
[C]অর্বাচীন
[D]মাসিপিসি
8)ভূতের জেলখানার ঘানি থেকে নির্গত হয় –
[A]শিতল জল
[B]তেল
[C]মানুষের তেজ
[D]মানুষের ঘর্ম
9)পৃথিবীর অন্য সব দেশে ভূতের বাড়াবাড়ি হলে মানুষ অস্থির হয়ে খোঁজ করে –
[A]চিকিৎসককে
[B] কবিরাজকে
[C]ওঝা-কে
[D]মাসি পিসিকে
10)” এটা ভূতের দোষ নয়, ভূতুরে দেশরও দোষ নয়, একমাত্র বর্গিরই দোষ ” – কাদের উক্তি?
[A]বুড়ো কর্তা
[B]শিরোমণি চূরামণি
[C]ভূতের নায়েব
[D]শিরোমণি চূরামণি
11) “একমাত্র বর্গিরই দোষ” – এখানে যে দোষের কথা বোঝানো হয়েছে, সেটি হলো –
[A]বর্গি আসে কেনো
[B]মানুষ ভূতগ্রস্থ হয় কেন
[C]খাজনা দেব কিসে
[D]ভূতের শাসনটাই কি অনন্তকাল চলবে
12)” গেরস্তের খিড়কির আনাচে কানাচে ঘোরে ” –
[A]অভূতের পেয়াদা
[B]ভূতের পেয়াদা
[C]মাসি পিসি
[D]শিরোমণি চূড়ামণি
13)“অভূতের পেয়াদা ঘোরে ” –
[A]হাটে
[B]শহরে
[C]সদরের রাস্তায় – ঘাটে
[D]গেরস্তের উঠানে
14)” একদিক থেকে এ হাঁকে খাজনা দাও আর একদিক থেকেও হাঁকে খাজনা দাও “, ‘এ ‘ এবং ‘ও’ বলতে বোঝনো হয়েছে –
[A]ভূতের নায়েব ও মাসি পিসি
[B]ভূতের পেয়াদা ও অভূতের পেয়াদা
[C]ভূতের নায়েব ও তত্বজ্ঞ্যানী
[D]শিরোমণি চূড়ামনি ও মাসি পিসি
15)শিরোমণি চূড়ামনি দলের মতে ভূতগ্রস্থ দেশে পবিত্র হল –
[A]হুঁশিয়ার বা সাবধানী মানুষ
[B]বেহুঁশ বা অজ্ঞ
[C]ভূতগ্রস্থ মানুষ
[D]আধুনিক যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল মানুষ
16)“প্রবুদ্ধমিব সুপ্তঃ “কথাটির অর্থ হল –
[A]প্রকৃষ্ট জ্ঞানীদের মতো জেগে থাক
[B]প্রকৃষ্ট জ্ঞানীদেরমতো ঘুমিয়ে থাক
[C]প্রকৃষ্ট জ্ঞানীদের মতো তর্কবাগিশ হয়ে থাক
[D]প্রকৃষ্ট জ্ঞানীদের মতো শুধু দুপুরে ঘুমিয়ে থাক
17)“প্রশ্ন মাত্রেই দোষ এই যে ” –
[A]বুড়ো কর্তার মানুষের গায়ে ভূত হয়ে চেপে থাকা
[B]বুড়ো কর্তার অত্যাচারে শান্তি বিঘ্নিত হওয়া
[C]ভূতের নায়েবের কঠোর নজরদারিতে মানুষের জীবন বিঘ্নিত হওয়া
[D]যখন আসে একা আসে না
18)“যেমন করে পারি ভূত ছাড়াব” – কার উক্তি?
[A]ওঝা
[B]তত্বজ্ঞ্যানী
[C]অর্বাচীন
[D]মাসিপিসি
19)” বুলবুলির ঝাঁক কে কৃষ্ণ নাম শোনাব ” – কে শোনাবে?
[A]ভূতের নায়েব
[B]শিরোমণি চূরামনি
[C]তত্বজ্ঞ্যানী
[D]মাসিপিসি
20) ” সেখানেই তো ভূত ” – ‘ সেখানে’ বলতে বোঝানো হয়েছে –
[A]শশ্মানের কথা
[B]মশানের কথা
[C]পোড়োবাড়ির কথা
[D]ভয়ের কথা
‘কর্তার ভূত’ গল্পের সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী(SAQ ) প্রশ্ন উত্তর
১)” কর্তার ভূত “-গল্পে ভূত বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ“কর্তার ভূত”- গল্পে ‘ভূত’ বলতে কোনো অশরীরী আত্মাকে বোঝানো হয়নি। পুরনো জরাজীর্ণ কুসঙস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতাকে ভূত বলা হয়েছে।
২)”ভূতের কানমলা”- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ কর্তার ভূত গল্পে ভুতের কানমলা বলতে প্রাচীন পন্থীদের কাছ থেকে আসা নানান অপমান ,অবমাননা ও দৈহিক শাস্তিকে বোঝানো হয়েছে।
৩)” ভয় করে যে কর্তা “- কারা কখন এ প্রশ্ন করে।
উত্তরঃদেশের মধ্যে দুই একটা মানুষ যারা গভীর রাত্রে এ কথা বলে বুড়ো কর্তাকে।
৪)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সনাতন ঘুম বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর-‘কর্তার ভূত’ রচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সনাতন ঘুম’ বলতে পরিবর্তনহীন অন্ধ সংস্কারকে চিহ্নিত করেছেন।
৫)”মোদ্দা কথাটা হচ্ছে”- মোদ্দা কথাটা কী?
উত্তরঃকর্তার ভূত গল্পে ‘মোদ্দা কথা’ বলতে বুড়ো কর্তার অবস্থান ও কৃতকর্মকে নিয়ে অর্থাৎ বুড়ো কর্তা বেঁচেও নেই মরেও নেই ,ভুত হয়ে আছে।
৬)ভূতের জেলখানার ঘানি থেকে কী বের হয় ?
উত্তরঃ ভূতের জেলখানার ঘানি নিরন্তর ঘুরে ।সেখান থেকে একফোঁটাও তেল বের হয় না । কিন্তু মানুষের তেজ বেরিয়ে যায়।
৭)”নইলে ছন্দ মেলেনা”- ছন্দ মেলাতে কোন দুটি পঙক্তি উল্লেখ করা হয়েছে ?
উত্তরঃ“কর্তার ভূত”- গল্পে ছন্দ মেলাতে যে দুটি পঙ্ক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা হল -‘খোকা ঘুমোলো/ পাড়া জুড়োলো।”
৮)”ভুতের রাজত্বে আর কিছু না থাক শান্তি থাকে”- কেন?
উত্তর- ভুতের রাজত্বে আর কিছু না থাকলেও শান্তি থাকে। কেননা সেখানে কেউ প্রতিবাদ করার লোক নাই ।
৯)”দেশের লোক ভারি নিশ্চিন্ত হল”- নিশ্চিন্ত হওয়ার কারণ কী?
উত্তরঃরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্তার ভূত গল্পে দেশের লোক ভারি নিশ্চিন্ত হয়ে ছিল, কেননা বুড়ো কর্তার মৃত্যুর পর তিনি প্রথমে তাদের ঘাড়ে চেপে থাকবেন।
১০)কর্তার কথা শুনে সকলের অত্যন্ত আনন্দ হয় কেন?
উত্তর -কর্তার মৃত্যুর পরেও দেশের মধ্যে থেকে যাবেন ,দেশের মানুষের কথা ভাববেন ।তাই কর্তার কথা শুনে সকলের অত্যন্ত আনন্দ হয়।
১১)“হুঁশিয়ার যারা তারাই অশুচি”— এ কথা কেন বলেছেন ?
উত্তরঃভূতগ্রস্ত অলস মানুষ যাতে সচেতন প্রাজ্ঞ মানুষের কাছে না আসে তাই একথা বলা হয়েছে।
১২)“শ্মশান থেকে মশান থেকে ঝোড়ো হাওয়ায় হা হা করে তার উত্তর আসে।”প্রশ্নের উত্তর কী আসে ?
উত্তরঃ‘কর্তার ভূত’ নামাঙ্কিত গদ্যাংশ থেকে উক্তিটি উদ্ধৃত হয়েছে। এখানে প্রশ্নের যে উত্তর আসে তা হলো আৱু দিয়ে,
ইজ্জত দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে খাজনা মিটিয়ে দিতে হবে।
১৩)“কী সর্বনাশ।”— সর্বনাশ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তরঃ ভূতগ্রস্ত দেশে অনন্তকাল ধরে ভূতের শাসন ব্যবস্থাটাই বহাল থাকবে কি না- এই প্রশ্নটিকেই সর্বনাশ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
১৪)“নইলে ছন্দ মেলে না”- মেলাতে কোন দু’টি পক্তির উল্লেখ করা হয়েছে ?
উত্তরঃছন্দ মেলানোর জন্য “খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়ালো” পদের সঙ্গে “বর্গি এল দেশে” পঙক্তি দু’টির উল্লেখ করা হয়েছে।
১৫)মরণকালে বুড়ো কর্তার দুঃখ হলো কেন ?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘কর্তার ভূত’ গল্পে বুড়ো কর্তার মরার সময় হয়েছে। দেশের সবাই বুড়োকে জানাল যে,
বুড়ো মারা গেলে তাদের কী দশা হবে। এ কথা শুনেই বুড়ো কর্তার বড়ো দুঃখ হলো।
‘কর্তার ভূত’ গল্পের রচনাধর্মী বড় (LAQ )প্রশ্ন উত্তর
১)“ওরে অবোধ, আমার ধরাও নেই, ছাড়াও নেই, তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া”- এখানে কে. কাদের অবোধ বলেছেন ? উক্তির গুরুত্ব ব্যাখ্য করো।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘লিপিকা’ গল্পগ্রন্থ থেকে গৃহীত ‘কর্ত্রর ভূত’ গল্পে বুড়ো কর্তা দেশের দুটো-একটা মানুষের প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্য করেন।
যারা দিনের বেলায় নায়েবের ভয়ে কথাই বলে না, তারাই গভীর রাতে কর্তার কাছে হাতজোড় করে জানতে চায়,
“কতা এখনো কি ছাড়বার সময় হয়নি।” তখন কর্তা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
গুরুত্ব : যারা ভবিষ্যৎকে মানতে ভয় পায়, তাদের মনের মধ্যেই ভূতের অস্তিত্ব। এরা একপ্রকার চোখ বন্ধ করেই সমাজে প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেষ্টা করে। এ
দের মধ্যে যারা হুঁশিয়ার তারাই অশুচি। দেশের লোক এই ভেবে আনন্দে থাকে যে, মাথার উপরে কর্তা আছেন। ফলে ভূতের শাসন হয় সর্বগ্রাসী।
মানুষ নিজের দোষেই এর থেকে মুক্তি চায় না। কেউ যদি অন্য ভাবনা ভাবতে যায়, তাহলে তাকে ভূতের কানমলা খেতে হয়।
ফলে ভূতের শাসন চলতেই থাকে। এজন্যই কর্তা বলেন, “তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।” এভাবেই উক্তিটি হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ।
২)“তার মাথা নেই, সুতরাং কারও জন্য কোনো মাথাব্যথা নেই।”— কার সম্বন্ধে বলা হয়েছে ? একথা বলার কারণ কী ?
উত্তরঃ উপরোক্ত উদ্ধৃতিটি বুড়ো কর্তার ভূত সম্বন্ধে করা হয়েছে।
বলার কারণ : ‘কর্তার ভূত’ হয়ে বুড়ো কর্তার মরণকালে সকলে চিন্তায় পড়লে দেবতা বলেন, কর্তার মৃত্যু হলেও ভূত হয়েই দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে থাকবেন।
এমনিতে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলেই মাথায় দুশ্চিন্তা ভিড় করে। সব ভাবনাচিন্তা ভূতের উপর ছেড়ে দিলে কোনো চিন্তা থাকে না।
কারণ লেখকের মতে, দেহহীন ভূতের মাথা নেই। তাই অন্যের জন্য মাথাব্যথাও নেই।
প্রাচীন সভ্যতার প্রেতই বর্তমান সমাজকে চালনা করছে। শাস্ত্রীয় বিধান, অন্ধবিশ্বাস অপরিবর্তনীয় বলেই মানুষের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। তাই ভূতেরও কোনো মাথাব্যথার প্রশ্নই নেই।
৩)“মানুষের মৃত্যু আছে, ভূতের তো মৃত্যু নেই।” – কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ?
ভূতের স্বরূপ উল্লেখ করে কেন তার মৃত্যু নেই, লেখো।
উত্তরঃপ্রসঙ্গ: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘কর্তার ভূত’ নামক গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
এখানে রুপকের আড়ালে লেখক সমাজ ব্যবস্থায় অদ্ভূত পরিস্থিতির প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এখানে কর্তা সামাজিক বিধানের রূপক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। প্রাচীন প্রথা যুগ পাল্টাবার সঙ্গে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
একইভাবে ক্ষমতাবানরা প্রয়োজনে ক্ষমতার প্রয়োগ করতে দু’বার ভাবে না। ‘ভূত’ বলতে বোঝায় প্রচলিত ক্ষয়িষ্ণু প্রথা ও ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা ধরে রাখার চিরন্তন প্রবণতা। সেই প্রসঙ্গেই এই উক্তি।
মৃত্যু না হওয়ার কারণ : মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তাই ‘ভূত’ বা অতীত যে আসলে প্রাচীন নীতিশাস্ত্রসম্মত বিধান এবং তা বর্তমানে অচল জেনেও তার কবল থেকে মুক্ত হতে ভয় পায়। এভাবেই বেঁচে থাকে ভূত’।
অতীতের জীর্ণ লোকাচার সংস্কার কখনোই নতুনের অধিকার হরণ করতে পারে না।
কিন্তু সাহস করে কোনো মানুষ নতুনের জয় ঘোষণা করছে না। সমবেত কণ্ঠে আওয়াজ উঠছে না— “জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে।”
এজন্যই বহাল তবিয়তে ভূত তার শাসনতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়।
৪)ভূতের রাজত্বে কীভাবে শান্তি বজায় থাকে, ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্প থেকে নেওয়া এই উদ্ধৃতাংশে ভূত শাসনতন্ত্রে বসবাসকারী মানুষের অবস্থা বিষয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা মানেই যত দুশ্চিন্তা। আর ‘ভূত’ অর্থাৎ অতীতের
উপর সব চাপিয়ে দিলে নিশ্চিত। অতীত যখন বর্তমানকে গ্রাস করে তখন দেশে একটা অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করে।
দেশের মানুষ ভূতের উপর সব দায় চাপিয়ে আনন্দে দিন কাটায়। তাই কোনো অশান্তি হয় না। অবশ্য এতে দেশের উন্নতিও থমকে যায়।
সেক্ষেত্রে স্বভাবদোষে যারা প্রতিবাদ করতে যায় তারাই খায় ভূতের কানমলা’। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যা কিছু স্থবির,
যা কিছু জীর্ণ তাকে অতিক্রম করতে ভয় পায়। ভূতের রাজত্বে সব ঘটনাকেই মানুষ ভবিতব্য বলেই জানতে অভ্যস্ত।
গল্পকার এভাবেই ব্যঙ্গের চাবুকে সমকালীন সমাজকে বিদ্ধ করেছেন। ভারতে যত অভাবই থাক, শান্তির কোনো অভাব কোনোদিনই নেই।
কারণ এখানকার মানুষের প্রতিবাদের ভাষা গেছে হারিয়ে।
৫)”কেন না ভবিষ্যৎকে মানলেই তার জন্যে যত ভাবনা, ভূতকে মানলে কোনাে ভাবনাই নেই;”-কোন্ প্রসঙ্গে এই কথাটি বলা হয়েছে? ভুতকে মানলে ভাবনা নেই কেন? উদ্ধৃতিটির অন্তনিহিত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ রচনার বুড়ােকর্তা মারা যাওয়ার সময় দেশের সমস্ত লােক তাকে জানায় যে, তিনি চলে যাওয়ার পর তাদের অবস্থা আরও সঙ্গিন হয়ে পড়বে, তারা অভিভাবকহীন হয়ে পড়বে। এ কথা শুনে মর্মাহত মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ দেশের লােকেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ভগবান তাই দয়াপরবশ হয়ে দেশবাসীকে জানান যে, চিন্তার কিছুই নেই, মৃত্যুর পর কর্তা ভূত হয়েই দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে থাকবেন। মানুষের মরণ থাকলেও প্রেতের তাে মৃত্যু নেই। ভূতদশাপ্রাপ্ত বুড়াে কর্তার অভিভাবকত্বে থাকার নিশ্চয়তা পেয়ে তাই দেশবাসী নিশ্চিন্ত হয়। দেশবাসীর এই চিন্তাহীনতার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়েই লেখক প্রশ্নোত্ত উদ্ধৃতিটির অবতারণা করেছেন।
ভূতকে মানলে সমস্ত ভাবনা ভূতের মাথায় চাপে বলে দেশবাসীর কোনাে ভাবনা থাকে না।
সাধারণ মানুষ ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’ | তাই সে সহজে পুরােনাে ব্যবস্থাকে বর্জন করে নতুন ব্যবস্থাকে গ্রহণ করতে চায় না| অজানা নতুনের প্রতি ভয় এবং জরাগ্রস্ত মানসিকতাই তাকে ভবিষ্যৎবিমুখ করে রাখে|আধুনিকতাকে গ্রহণ করতে গেলে সবকিছুকেই বিচারবিশ্লেষণ করতে হয়, যুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। কিন্তু ভূতরূপী ধর্মতন্ত্রকে অন্ধভাবে মানলে তাে কোনাে ভাবনাই থাকে না-—সব ভাবনাচিন্তা ধর্মতন্ত্র তথা অদৃষ্টের ওপর চাপিয়ে মানুষ দায়িত্বশূন্য হয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারে।
৬)“তারা বলে, ভয় করে যে কর্তা।”—কারা এ কথা বলে ? তাদের কীসের ভয় ? কর্তা জবাবে কী বলেন ?
উত্তরঃ‘কর্তার ভূত’ রচনাটিতে রবীন্দ্রনাথ স্থবিরতার বেড়াজালে আবদ্ধ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ভারতবর্ষের স্বরূপ উদ্ঘাটন করেছেন।
তারই বাস্তব চিত্র তুলে ধরে ভূতগ্রস্ত দেশের ভূত শাসনতন্ত্রের বিধানে পরিচালিত এবং আদিম চলনে অভ্যস্ত দেশের
দু-চারটে মানুষ প্রশ্নোধৃত কথাটি বলে।
ভূতগ্রস্ত দেশের মানুষ ভূতশাসনতন্ত্র মেনে চলে। তাদের মনে কোনো প্রশ্ন নেই। তথাকথিত বুড়োকর্তা অকেজো হয়ে গেলেও,
তারই বিধিমতো তারা চলতে আগ্রহী হয়। তারা নতুন কিছুর সম্মুখীন হতে ভয় পায়। তাদের মনে প্রশ্ন বা যুক্তিবোধ নেই বলে কর্তার নির্দেশ তারা নির্বিবাদে মেনে চলে। আর এভাবে চলার ফলেই তাদের যুক্তিবাদী মন আড়ষ্ট ও বিবশ হয়ে পড়ে।
তবুও কিছু কিছু মানুষ আছে যারা বেপরোয়া, তারা সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে নতুনের ছোঁয়ায় আলোকিত হতে চায় যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে
সব কিছুকে গ্রহণ করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু দীর্ঘকালের অভ্যাস তাদের মনে জড়তা, দ্বিধা ও সংশয় আনে। তারা নিজের ব্যাপারে
সংশয়ান্বিত হয়ে ওঠে। ফলে যুক্তিবাদ তাদের কাঙ্ক্ষিত হলেও সংস্কারবশত তারা সন্দিহান ও ভীত হয়ে ওঠে। মনের ভয় তাদেরকে সংশয়ের দোলায় ঝুলিয়ে রাখে।
তা ছাড়া, সমাজের দণ্ডমুণ্ডের কর্তাদেরকেও তারা ভয় পায়। তাদের শাসনতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এলে, দেশ পরিচালনার কার্য সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে কি না—সেই নিয়েও তারা ভীত থাকে।
কর্তা জবাবে বলেন—“সেইখানেই তো ভূত”। আসলে কর্তা বলতে চান, নতুন কিছু করার ব্যাপারে বাধা আসবেই।
কিন্তু চুপ করে থাকলে চলবে না। ভয় মানুষকে নতুন কিছু করতে বাধা দেয়। তাকে কাটিয়ে সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়াই জীবন।
৭)“স্বভাবদোষে যারা নিজে ভাবতে যায় তারা খায় ভূতের কানমলা।”—‘ভূতের কানমলা’ খাওয়া ব্যাপারটা কী ? ‘নিজে ভাবতে’ যাওয়া মানুষদের সম্পর্কে গল্পকারের এরকম উক্তির কারণ কী ?
উত্তরঃ ‘ভূতের কানমলা’ কথার অর্থ হল অবাধ্যতার শাস্তি। ভূতগ্রস্ত দেশে অর্থাৎ, সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলাই রীতি।
রক্ষণশীলরা যুক্তিবাদ পছন্দ করেন না, প্রশ্নের সম্মুখীন হলে ক্ষমতার প্রাবল্যে তাকে দাবিয়ে রাখতে সচেষ্ট হন।
আর প্রশ্নকারীদের শাস্তি প্রদান করতে সচেষ্ট হন। প্রচলিত চলার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা এলে এরা সহ্য করতে পারেন না।
কঠোর হাতে প্রতিবাদীকে দমন করেন। রক্ষণশীলদের এই কঠোর মনোবৃত্তিকেই লেখক ‘ভূতের কানমলা’ বলেছেন।
‘স্বভাবদোষে যারা নিজে ভাবতে যায়’—তারা হল আসলে দেশের চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী, প্রকৃত মানবপ্রেমিক।
এরাই দেশের নিপীড়িত জনসাধারণকে যুক্তির আলোকে আলোকিত করে দেশের প্রাচীন সংস্কার, রীতি, নিয়ম থেকে বের করে আনতে চাইছে।
কিন্তু রক্ষণশীল শাসকশ্রেণি কখনও প্রচলিত ধ্যানধারণার বদল চায় না। সংস্কার, নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটলে তাদের ক্ষমতার অবলুপ্তি ঘটবে।
ফলে মৌলিক চিন্তার অধিকারী এইসব চিন্তাশীল মানুষদেরকে তথাকথিত শাসকরা সহ্য করতে পারে না।
তাদের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে নিজেদের অধীনস্থ রাখতে চায়। আসলে যুক্তিবাদী, উদারমনা, জ্ঞানপিপাসু,
সমাজসেবক মানবতাবাদীরাই চিরকাল শাসকশ্রেণির মাথাব্যথার কারণ হয় বলেই, তারা শাস্তির ভয় দেখিয়ে তাদেরকে দমন করে রাখে।
আর এই কারণেই গল্পকার আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
৮)“শুনে ভূতগ্রস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে।”—কার, কোন্ কথায়, কেন ‘আদিম আভিজাত্য’ অনুভূত হয় ? ‘আদিম আভিজাত্য’ ব্যাপারটি কী ?
উত্তরঃ দেশের তত্ত্বজ্ঞানীদের মতে অদৃষ্টের চালে চোখবুজে চলাই বিশ্বের আদিমতম চলা। এর মাধ্যমেই জাতির আবহমানতা রক্ষা পায়।
তাঁদের এই কথার মাধ্যমে ভূতগ্রস্ত দেশ আদিম আভিজাত্য অনুভব করে। তত্ত্বজ্ঞানীদের বলা কথার মধ্যে আমরা একটি রূপকার্থ খুঁজে পাই।
আর এখানেই রবীন্দ্র-ভাবনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা বলতে পারি—আমাদের সর্বাঙ্গসুন্দর প্রাচীন সভ্যতার পঞ্চত্বপ্রাপ্তির পর
এখন যা বর্তমানে আছে তা তারই ভূত বা প্রেতযোনি মাত্র। এর মাথা নেই বলে ধর্মতন্ত্ররূপ সংস্কার, লোকাচার তথা মৌল ভাবনার কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতাও নেই,
মানবিক কল্যাণচেতনাও নেই। লোকসাধারণ প্রশ্নহীনভাবে শাস্ত্রনির্দেশ ও শাস্ত্রোল্লিখিত মানবকল্যাণমুখী কর্ম করছে।
এই কারণেই রক্ষণশীল বিধানের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধাপড়া যুক্তিহীন, বিবেচনাহীন মানুষগুলি বহু প্রাচীন ঐতিহ্যানুসরণ করে চলেছে ভেবে তারা
‘আদিম আভিজাত্য’ অনুভব করে।
‘আদিম আভিজাত্য’ কথার সাধারণ অর্থ হল— অতি প্রাচীন সনাতন কৌলীন্যবোধ বা বংশমর্যাদা। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই এই বোধ থাকে।
ভূতগ্রস্ত দেশের মানুষ তত্ত্বজ্ঞানীদের বলা কথার মাধ্যমে নিজেদের অতীত ঐতিহ্যের মর্যাদা অনুভব করে এবং তা পালন করে চলাকেই পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করে।
তার প্রায়জেন বা প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ভাবে না। ভাবে—তারাই জগতের সবচেয়ে পুরোনো, সবচেয়ে আদিমতম মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিত্ব।
নিজেদের বংশকৌলীন্যের প্রাচীনত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলতে গিয়েই রচনায় ‘আদিম আভিজাত্য’ ব্যাপারটি বলা হয়েছে।
৯)‘কর্তার ভূত’ কি নিছক ভূতের গল্প, নাকি রাজনৈতিক রূপককাহিনি? ব্যাখ্যা-সহ লেখাে। অথবা, কর্তার ভূত’ কি নিছক ভূতের গল্প, নাকি একটি সামাজিক বক্তব্য সম্বলিত রূপক-কাহিনিব্যাখ্যাসহ লেখাে।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ রচনাটি আসলে একটি কথিকা। এর মধ্য দিয়ে লেখক মানুষের চিরকালীন অভ্যাসের সমালােচনা করেছেন। ভূতের কথা বললেও এটি কোনাে ভৌতিক রহস্যময় গল্প নয়। এখানে রূপকের আড়ালে লেখক মানুষের ওপর চেপে বসা চিরকালীন কুসংস্কারের তীব্র সমালােচনা করেছেন।
‘ভূত’ বলতে এখানে অতীতকে বােঝানাে হয়েছে|অতীতকাল থেকেই আদিম মানুষ গােষ্ঠীবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত।তখন তারাতাদের যাবতীয় ভাবনাচিন্তা অর্পণ করেছিল দলের প্রবীণ ও নেতাস্থানীয় ব্যক্তির ওপর| সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্তার মৃত্যু ঘটলেও তার ভূত অর্থাৎ ‘অতীত ধারণা’ এদেশের মানুষকে ছেড়ে যায়নি। সে প্রতি পদে পদে এদের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই জেলখানায় অনেক নিয়মের চাপে পড়ে ঘানি ঘােরাতে ঘােরাতে মানুষ তার তেজ এবং অগ্রগতির পন্থাকে হারিয়ে ফেলে। আসলে মানুষের মনের ভয়ই তাকে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে দেয় না। আধুনিক চিন্তাভাবনার পথে এক পা বাড়ালে তার মনের ভয় তাকে বলে ওঠে সে অশুদ্ধ হয়ে যাবে, প্রকৃত প্রাচীন ঐতিহ্যের গর্বকে হারিয়ে ফেলবে|এই ভয় ত্যাগ করে নতুনকে গ্রহণ করতে পারলেই যে পুরােনােব্যবস্থার বদল ঘটবে—সে কথার ইঙ্গিত এ রচনার শেষে আমরা পাই। সুতরাং, ‘কর্তার ভূত’ ভূতের গল্পের মােড়কে সামাজিক ও রাজনৈতিক রূপক-কাহিনিই।
Most related post :
বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর