মাধ্যমিক বাংলা বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর

bhurupi

পরীক্ষা প্রস্তুতি : মাধ্যমিক বাংলা বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর।মাধ্যমিক ২০২৩ সালের পরীক্ষার্থীদের  কাছে বাংলা গল্প বহুরূপী ‘ একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক। এই ‘বহুরূপী ‘ গল্পটি থেকে ১ নম্বরের সঠিক উত্তর নির্বাচনধর্মী প্রশ্ন উত্তর( MCQ) ,১ নম্বরের অতি  সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন উত্তর(VSAQ ) ,৩ নম্বরের সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন  উত্তর (SAQ )এবং ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (LAQ ) নিয়ে ২০২৩ সালের মাধ্যমিক  পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন  উত্তর  আলোচনা করা হল। এই প্রশ্ন উত্তর গুলি ভালো করে প্রস্তুতি নিলে তোমার অবশ্যই ‘বহুরূপী ‘ গল্পটি থেকে সমস্ত ধরনের প্রশ্ন উত্তর ১০০% কমন পাবেই পাবে। মাধ্যমিক বাংলা বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক বাংলা বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর

‘বহুরূপী ‘ গল্পটি থেকে ১ নম্বরের সঠিক উত্তর নির্বাচনধর্মী প্রশ্ন উত্তর( MCQ)

1)“সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস”—‘ভয়ানক দুর্লভ জিনিসটি হল—
[A]সন্ন্যাসীর দেখা পাওয়া   
[B] সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ পাওয়া।
[C]সন্ন্যাসীর কমঙুল পাওয়া
[D]সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলাে পাওয়া

Show Ans

Correct Answer:[D]সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলাে পাওয়া 

2)ঠিক দুপুরবেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল
[A]চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে 
[B]শ্যামবাজার মােড়ের কাছে
[C]নয়াবাজারের কাছে 
[D]রাস্তার মোড়ে 

Show Ans

Correct Answer:[A]চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে 

3)জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসী ছিলেন।
[A]তিনদিন  
[B]চারদিন
[C]পাঁচদিন
[D]সাতদিন

Show Ans

Correct Answer:[D]সাতদিন

4)সপ্তাহে হরিদা বহুরূপী সেজে বাইরে যান —
[A] দু দিন
[B]তিন দিন
[C]পাঁচ দিন
[D]এক দিন

Show Ans

Correct Answer:[D]এক দিন

5)বহুরূপী’ গল্পের লেখক হলেন-
[A]সুবােধ ঘােষ  
[B]তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
[C] শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
[D]বিমল মিত্র

Show Ans

Correct Answer:[A]সুবােধ ঘােষ  

6) “… কিছুই শুনিনি”—কথাটা বলেছেন-
[A]অনাদিবাবু  
[B]জগদীশবাবু
[C] হরিদা  
[D]হরেন দা

Show Ans

Correct Answer:[C] হরিদা  

7)জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসী সারা বছর যা খেতেন সেটা হল—
[A]একটি হরিতকী  
[B]একটি বহেরা
[C]একটি আমলকী
[D]এক মুঠো তিল

Show Ans

Correct Answer:[A]একটি হরিতকী  

8)সন্ন্যাসীকে খড়ম দিয়েছিলেন-
[A]হরিদা    
[B]জগদীশবাবু 
[C]অনাদি
[D] ভবতােষ

Show Ans

Correct Answer:[B]জগদীশবাবু 

9)হরিদা পেশায় ছিলেন একজন-
[A]কনেস্টেবল
[B] বহুরূপী 
[C]সন্ন্যাসী   
[D]পূজারি ব্রাক্ষ্মণ

Show Ans

Correct Answer:[B] বহুরূপী 

10)হরিদার মতে সব তীর্থ—
[A]মানুষের বুকের ভিতর 
[B]গভীর অরণ্যে
[C]শূন্য আকাশে 
[D] হিমালয়ের চূড়ায়

Show Ans

Correct Answer:[A]মানুষের বুকের ভিতর 

11) বাইজির ছদ্মবেশে হরিদার রোজগার হয়েছিল—
[A]আট টাকা দশ আনা
[B]আট টাকা তিন আনা 
[C]দশ টাকা আট আনা 
[D] তিন টাকা আট আনা

Show Ans

Correct Answer:[A]আট টাকা দশ আনা

12)দয়ালবাবুর লিচু বাগানের ভিতরে হরিদা দাঁড়িয়েছিল— 
[A]ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব সেজে 
[B]পুলিশ সেজে 
[C]স্কুলের মাস্টারমশাই সেজে 
[D]বাউল সেজে

Show Ans

Correct Answer:[B]পুলিশ সেজে 

13)লিচু বাগানে নকল পুলিশ স্কুলের যে কয়  টি ছেলেকে ধরেছিলেন , তার সংখ্যা হল – 
[A]পাঁচ 
[B]চার 
[C]তিন
[D]দুই 

Show Ans

Correct Answer:[B]চার

14)বিরাগীর ঝোলার ভিতর যে – বইটি ছিল , সেটি হল— 
[A] গীতা 
[B]কোরান
[C]মহাভারত 
[D]উপনিষদ

Show Ans

Correct Answer:[A] গীতা 

15)জগদীশবাবুর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল— 
[A]বারো লক্ষ টাকার 
[B] কুড়ি লক্ষ টাকার 
[C]আঠারো লক্ষ টাকার
[D]এগারো লক্ষ টাকার 

Show Ans

Correct Answer:[D]এগারো লক্ষ টাকার 

16)জগদীশবাবু বিরাগীজিকে প্রণামী দিয়েছিলেন— 
[A]পঞ্চাশ টাকা 
[B]পঁচিশ টাকা
[C]একশো টাকা 
[D]দেড়শো টাকা 

Show Ans

Correct Answer:[C]একশো টাকা 

17)লেখকের কানের কাছে ফিশফিশ করে যে – বলেছিল — ‘ না না , হরিদা নয় । হতেই পারে না । ‘ তার নাম হল – 
[A]ভবতোষ
[B]সুবোধ
[C]অনাদি
[D]সুবোধ

Show Ans

Correct Answer:[A]ভবতোষ

18)বিরাগীরুপী হরিদার গায়ে ছিল কেবলমাত্র একটি— 
[A]জামা 
[B]পাঞ্জাবি 
[C]শাল
[D]উত্তরীয়

Show Ans

Correct Answer:[D]উত্তরীয়

19)জগদীশবাবু কেমন স্বভাবের মানুষ ছিলেন ? 
[A]উদার 
[B]কৃপণ
[C]কপট
[D]বিকৃত

Show Ans

Correct Answer:[B]কৃপণ

20)বিরাগী জগদীশবাবুর বাড়িতে খেয়েছিলেন?
[A]ঠান্ডা জল
[B]লুচি
[C]ভাত
[D]রুটি

Show Ans

Correct Answer:[A]ঠান্ডা জল

বহুরূপী গল্পের অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী ছোট প্রশ্ন উত্তর(VSAQ )১ নম্বরের

১)“সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস” দুর্লভ জিনিসটি কী?

উত্তরঃ দুর্লভ জিনিসটি হল জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো।

২) হরিদা সন্ন্যসীর পায়ের ধুলো নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে কী বলা হয়েছিল?

উত্তরঃ হরিদা সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে বলা হয়েছিল সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো দুর্লভ জিনিস। একমাত্র জগদীশবাবু ছাড়া কাউকেই সন্ন্যাসী তার পায়ের ধুলো দেননি।

৩) “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।”—হরিদার কোন্ ভুল অদৃষ্ট কখনাে ক্ষমা করবে না?
 
উত্তর : শিল্প মর্যাদার স্বার্থে বহুরূপী হরিদা জগদীশবাবুর দিতে চাওয়া অর্থ প্রত্যাখান করে ভুল করেছিলেন বলে লেখক মনে করেছেন। সেই ভুলই অদৃষ্ট কখনাে ক্ষমা করবে না বলে লেখকের মনে হয়েছিল।
 
৪)“পরম সুখ কাকে বলে জানেন?”—বক্তা স্বয়ং ‘পরম সুখ’ বলতে কী বােঝাতে চেয়েছেন?
 
উত্তর : কথাসাহিত্যিক সুবােধ ঘােষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে বা বিরাগী স্বয়ং সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়াকেই ‘পরম সুখ’ বলে বােঝাতে চেয়েছেন।

৫)কীভাবে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পেয়েছিলেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর জন্য একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে খড়মজোড়া সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরতেই সন্ন্যাসী বাধ্য হয়ে নিজের পা এগিয়ে দেন। সেই সুযোগে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়ে নেন।

৬)“বাঃ এ তাে বেশ মজার ব্যাপার!”—কোন্ ঘটনাকে মজার ব্যাপার বলা হয়েছে?
 
উত্তর : একদিকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণকারী আগন্তুক সন্ন্যাসী হিমালয়বাসী সর্বত্যাগী। অন্যদিকে কাঠের খড়মে সােনার বােল লাগানাে দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি পা বাড়িয়ে দিলেন জগদীশবাবুর দিকে—এমন পরস্পর বিরােধী ঘটনাকে উদ্ধৃতাংশের বক্তা হরিদা একে মজার ব্যাপার বলে উল্লেখ করেছেন।
 
৭)“কী অদ্ভুত কথা বলেন হরিদা!”—হরিদার কোন্ কথাকে অদ্ভুত মনে হয়েছিল?
 
উত্তর : হরিদা জানিয়েছিলেন যে, শত হােক একজন বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে টাকা-ফাকা করলে তার ঢং নষ্ট হয়ে যায়। তার এই কথাকে গল্প লেখকের অদ্ভুত মনে হয়েছিল।

৮)“এইবার সরে পড়ো”- কে, কাকে সরে পড়তে বলে?

উত্তরঃ বাস ড্রাইভার জানত হরি বহুরূপী সাজে। আর তাই সেদিন হরি পাগল সাজলে বাস ড্রাইভার তাকে চিনতে পেরে সেখান থেকে সরে যেতে বলেছিল।

৯)নইলে আমি শান্তি পাব না”—কী পেলে বা শান্তি পাবেন?
 
উত্তর : বক্তা জগদীশবাবুর একান্ত ইচ্ছা যে বিরাগী তাকে কিছু উপদেশ দিয়ে প্রস্থান করলে তিনি শান্তি পাবেন।
 
১০)“এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা।”—“বহুরূপী’ গল্পে হরিদার বহুরূপী সাজার কয়েকটি উল্লেখ করাে।
 
উত্তর : কথাসাহিত্যিক সুবােধ ঘােষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদার বহুরূপী সাজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলি হল—উন্মাদ পাগল, রুপসি বাইজি, বাউল, কাপালিক, পুলিশ, বুড়াে কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব, সন্ন্যাসী বিরাগী প্রভৃতি।
 
১১) “জটাজুটধারী কোনাে সন্ন্যাসী নয়”।-উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে সন্ন্যাসী বলার কারণ কী?
 
উত্তর : আগন্তুককে সন্ন্যাসী না বলার কারণ হল, তার হাতে সন্ন্যাসীদের ব্যবহৃত কমলু ও চিমটে ছিল না। তার সঙ্গে বসার জন্যে মৃগচর্মের আসনও ছিল না। তিনি। গৈরিক সাজে সজ্জিত ছিলেন না, তাছাড়া জটাজুটের পরিবর্তে তার মাথায় ছিল স্বাভাবিক শুভ্র চুল।
 
১২) “জগদীশবাবুর দুই বিস্মিত চোখ অপলক হয়ে গেল”—কী দেখে জগদীশবাবুর এমন অবস্থা হয়েছিল?
 
উত্তর : জগদীশবাবু সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে যখন দেখেছিলেন আদুড় গায়ে সাদা উত্তরীয় পরে এক বিরাগী সামনে দাঁড়িয়ে তখন তিনি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইলেন।
 
১৩)লেখক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদার কাছে কোন্ ঘটনা শােনাতে এসেছিলেন ?
 
উত্তর : জগদীশবাবুর বাড়িতে খুব উঁচুদরের এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন এবং তিনি সেখানে সাতদিন ধরে অবস্থান করেছিলেন। এই খবরটাই লেখক ও তার বন্ধুরা হরিদাকে শােনাতে এসেছিলেন।
 
১৪)“মাঝে মাঝে সত্যিই উপােস করেন হরিদা।”—হরিদা মাঝে মাঝে উপােস। করেন কেন?
 
উত্তর : হরিদার জীবনের একমাত্র পেশা বহুরূপী সেজে রােজগার করা। যৎসামান্য রােজগারে এক সপ্তাহের ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ করা সম্ভব হয় না। তাই হরিদাকে মাঝে মাঝেই সত্যিই উপােস করে দিন অতিবাহিত করতে হয়।

১৫) হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যটি কী?

উত্তরঃ হরিদা ছিল পেশায় বহুরূপী। সে কখনও পাগল সাজত, কখনও বাউল, কোনোদিন কাপালিক, কখনও বা বোঁচকা কাঁধে বুড়ো কাবুলিওয়ালা। এটাই তার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য।

বহুরূপী গল্পের সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী ছোট প্রশ্ন উত্তর(SAQ )৩ নম্বরের

১)“পরম সুখ কাকে বলে জানেন?”- কার উক্তি? ‘পরম সুখ’ বলতে বক্তা কী বুঝিয়েছেন? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত বিরাগী একথা বলেছিলেন। আসলে এই বিরাগী ছিলেন বহুরূপী হরিদা।

হরিদা একজন দক্ষ বহুরূপী। সবাইকে একটা ‘জবর খেলা’ দেখাবেন বলে একদিন সন্ধ্যায় তিনি বিরাগীর সাজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেদিন শুধু সাজে-পোশাকে নয়, কথাবার্তাতেও তিনি বিরাগী হয়ে উঠেছিলেন। বিরাগীরূপী হরিদার মতে, সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়াই হল পরমসুখ।

২) “অদৃষ্ট কখনও… এই ভুল ক্ষমা করবে না।” – ‘অদৃষ্ট’ শব্দের অর্থ কী? এমন মন্তব্যের কারণ কী? ১+২

উত্তরঃ ‘অদৃষ্ট’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল নয় দৃষ্ট যা। তবে, উদ্ধৃত অংশে শব্দটির অর্থ হল ভাগ্য।

সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর সাজে গিয়েছিলেন। তাকে প্রকৃতই বিরাগী মনে করে জগদীশবাবু একশো এক টাকা প্রণামী হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন। টাকাটা নিলে তার কয়েকদিনের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা হয়ে যেত। কিন্তু বিরাগী হয়ে তিনি সেই টাকা স্পর্শ করেন নি। এইজন্য বলা হয়েছে “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।” অর্থাৎ, তার ভাতের হাড়িতে শুধুই জল ফুটবে, ভাত ফুটবে না।

৩)“তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়।”- কার ঢং নষ্ট হয়ে যেত? বক্তার এমন মনে হওয়ার কারণ কী? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে বহুরূপী হরিদার ঢং নষ্ট হয়ে যেত।

হরিদা একজন বহুরূপী। তবে, তার বহুরূপতা কেবল সাজ-পোশাকে নয়; তিনি যখন যা সাজতেন তখন মন থেকেও তাই হয়ে উঠতেন। তিনি পুলিশ সেজে স্কুলের মাস্টারমশায়ের কাছে আট আনা ঘুষ নিয়েছিলেন কিন্তু বিরাগীর সাজে জগদীশবাবুর দেওয়া একশো এক টাকা নিতে পারেন নি। কারণ, বিরাগী হয়ে টাকা স্পর্শ করা অশোভনীয়। তার মতে, টাকাটা নিলে তার ‘বিরাগীর ঢং’ নষ্ট হয়ে যেত।

৪)“ গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা ” – হরিদা কে ছিলেন ? কোন গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ লেখক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ নামক গল্পের কেন্দ্রীয় পেশাদার বহুরূপী চরিত্র ছিলেন হরিদা। 

লেখক সহ অন্য বন্ধুরা হরিদাকে জানিয়েছিলেন যে, সাতদিন ধরে এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন। খুব উঁচুদরের সন্ন্যাসী, হিমালয়ের গুহাতে থাকেন। সারাবছর শুধু একটি ‘ হরীতকী ‘ খান, এছাড়া আর কিছুই খান না। সন্ন্যাসীর বয়স হাজার বছরের বেশি বলে মনে করা হয়। সন্ন্যাসী কাউকেই পদধূলি দেন না। জগদীশবায়ু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল  লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ে ধরলে বাধ্য হয়ে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিলেন। এই নতুন খড়ম পরার ফাঁকেই জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন। 

৫) “এবার মারি তো হাতি, লুঠি তো ভাঙার ” –বক্তা কে? তিনি কোন উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন ?

উত্তরঃ প্রখ্যাত লেখক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা হলেন বহুরূপী হরিদা।

‘বহুরূপী’ সেজে হরিদা যে উপার্জন করতেন তা ছিল অত্যন্ত সামান্য। আর তাই যখন জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর খাতির – যত্নের কথা শোনের তখন সিদ্ধান্ত নেন সেখানেই বহুরূপী সেজে গিয়ে মোটা কিছু আদায় করে নেবেন। পুরোদিনটা ঘুরে বেড়িয়েও তার উপার্জন হয় সামান্যই। এজন্য কাঙালের মতো বকশিশ নেওয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে একেবারে এমন উপার্জন করবেন যাতে তার সারাবছর চলে যায় – এই উদ্দেশ্যেই তিনি প্রশ্নোধৃত কথাটি বলেছেন।


৬)হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন? তিনি কীভাবে মাস্টারমশাইকে বােকা বানিয়েছিলেন? ১+২ [মাধ্যমিক ২০১৭]

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে বহুরূপী হরিদা পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

স্কুলের চারটি ছেলে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে গিয়েছিল লিচু চুরি করতে। সেখানে আগে থেকেই হরিদা পুলিশ সেজে দাঁড়িয়েছিলেন। পুলিশ দেখে ছেলেরা ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল। পরে মাস্টারমশাই গিয়ে নকল-পুলিশ হরিদার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং ছেলেগুলোকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু পুলিশের সাজে হরিদা মাস্টারমশায়ের কাছে আট আনা ঘুষ নিয়ে তবেই ছেলেদের ছেড়েছিলেন। এভাবেই হরিদা মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন।

৭) “সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস।”- কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে? তা দুর্লভ কেন? ১+২ [মাধ্যমিক ২০২০]

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলোর কথা বলা হয়েছে। সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ছিল ভয়ানক দুর্লভ জিনিস।

পুণ্য সঞ্চয়ের ব্যাপারে জগদীশবাবু অত্যন্ত হিসেবি ছিলেন। তার বাড়িতে যে সন্ন্যাসী এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি নাকি হিমালয়ের গুহাতে থাকতেন এবং সারা বছরে শুধু একটি হরিতকী খেতেন। এইরকম একজন সন্ন্যাসীর পদসেবা করলে যে অনেক পুণ্য অর্জন করা যাবে সে কথা জগদীশবাবু জানতেন। তাই তার পদধূলি যাতে অন্য কেউ না পায় সেইজন্য জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেন এবং সন্ন্যাসী সেই খড়ম পরা মাত্রই জগদীশবাবু তার পদধূলি গ্রহণ করেন। এজন্য বলা হয়েছে যে, সেই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ‘ভয়ানক দুর্লভ জিনিস’ ছিল।

৮) “হরিদার উনানের হাঁড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না।” – হরিদার জীবিকা কী? কেন তার হাঁড়িতে কেবল জলই ফোটে? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদার একজন বহুরূপী। তিনি বহুরূপী সাজে মানুষের মনোরঞ্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

হরিদার জীবনদর্শন ছিল একটু অন্যরকম।দশটা-পাঁচটার বাঁধাধরা চাকরিতে তার ছিল তীব্র অনীহা। নাহলে চেষ্টা করলে কোনো একটা স্থায়ী কাজ জুটে যেত তার। কিন্তু সেসব কিছু করেন নি হরিদা। তিনি বহুরূপী সেজে মানুষকে আনন্দ দিয়ে যেটুকু উপার্জন করতেন তাই দিয়েই তার দিন চলে যেত। তবে, সপ্তাহে মাত্র একদিন তিনি বহুরূপী সেজে পথে বেরোতেন এবং খুব সামান্যই রোজগার করতেন। এইজন্য তার উনানের হাঁড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না।

৯) “কিন্তু দোকানদার হেসে ফেলে” – কার কী কাণ্ড দেখে দোকানদার হেসেছিল? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদার কান্ড দেখে দোকানদার হেসে ফেলেছিল।

সেদিন হরিদা এক রূপসী বাইজির সাজে পথে নেমেছিলেন। দু’পায়ে ঘুঙ্গুরের রুমঝুম শব্দ তুলে সেই বাইজি প্রায় নাচতে নাচতে এগিয়ে যাচ্ছিল। হাতে ছিল তার ফুলসাজি। একেকটা দোকানের সামনে গিয়ে সে মুচকি হেসে, চোখ টিপে ফুলসাজিটা এগিয়ে দিচ্ছিল আর দোকানদাররা তাতে একটা করে সিকি ফেলে দিচ্ছিল। হরিদার এই কাণ্ড দেখেই দোকানদার হেসে ফেলেছিল।

১০)“আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়াে?” – কাকে একথা বলা হয়েছিল? এমন উক্তির কারণ কী? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে জনৈক ধনী ব্যক্তি জগদীশবাবুকে একথা বলা হয়েছিল।

একদিন জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা গিয়েছিলেন বিরাগীর ছদ্মবেশে। সেই সময় পাড়ার ছেলেরা স্পোর্টের চাঁদা আদায়ের জন্য জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিল। বারান্দায় একটা মস্ত আলোর সামনে তিনি চেয়ারে বসেছিলেন, এমন সময় সেখানে বিরাগীর আবির্ভাব ঘটে। বারান্দা থেকেই তাঁর উদ্দেশ্যে জগদীশবাবু বলেন, “আসুন”। বিরাগীকে দেখে জগদীশবাবু নেমে আসেন নি বলেই বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদা এমন উক্তি করেছিলেন।

বহুরূপী গল্পের রচনাধর্মী বড় প্রশ্ন উত্তর(L AQ )৫ নম্বরের

১)” খুব উঁচু দরের সন্ন্যাসী। ” — সন্ন্যাসী পরিচয় দাও.
উত্তর :সুবোধ ঘোষ রচিত বহুরূপী গল্পে, গল্পে শুরুর দিকেই আমরা একজন সন্ন্যাসীর কথা জানতে পারি। সন্ন্যাসী হলেন হিমালয় ফেরত। তিনি সারাবছর হিমালয়ের গুহাতে থাকেন। কদিন হলে তিনি পাড়ার ধনী ব্যক্তি জগদীশ বাবুর বাড়িতে এসে রয়েছেন। সন্ন্যাসীর বয়স সম্পর্কে এও জানা যায়,অনেকে মনে করেন সন্ন্যাসীর বয়স নাকি হাজার বছরের চেয়েও বেশি। তার খাবারের মধ্যে সারাবছরে শুধু মাত্র তিনি একটি হরতকী খান। এসব জিনিসের মধ্যে সন্ন্যাসীর সবচাইতে বড়ো কথা হলো তিনি কাউকেই নিজের পায়ের ধুলো নিতে দেন না। সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো অত্যন্ত দুর্লভ জিনিস। কিন্তু জগদীশবাবু যখম সোনার বোল লাগানো একজোড়া খড়ম সন্ন্যাসীর পায়ের সামনে তুলে ধরেছিলেন, তখন সেই ফাঁকে সন্ন্যাসী সেদিকে পা বাড়িয়ে দেন এবং তখন জগদীশবাবু তার পায়ের ধুলো নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান।। এর থেকেও বড় কথা হলো তিনি একজন সন্ন্যাসী হওয়া সত্ত্বেও যখন জগদীশবাবু তার ঝোলার ভেতরে একশো টাকার নোট রেখে দেন তখন সেই সন্ন্যাসি একটু মুচকি হাসেন এবং তা গ্রহণ করেন। 
২) ” আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো?? ”  — কাকে এ কথা বলা হয়েছে??  তাঁকে এ কথা বলা হয়েছে কেন? 
উত্তর :  সুবোধ ঘোষ রচিত ” বহুরূপী”  গল্পে বিরাগী সন্ন্যাসী পাড়ার ধনী ব্যক্তি জগদীশবাবুকে একথা বলেছিলেন।  

বিরাগী সন্ন্যাসীর জগদীশবাবু কে একথা বলার কারণ ছিল চাঁদের আলোয় আলোকিত হওয়া এক  সুন্দর সন্ধ্যায় একজন বিরাগী সন্ন্যাসী জগদীশ বাবুর বাড়িতে এসে হাজির হন। জগদীশবাবু যখন সে বিরাগীকে দেখতে পান তখন জগদীশবাবুর সিঁড়ি থেকে উঠে সেখান থেকেই তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। বিরাগী সন্ন্যাসী যখন জগদীশবাবু এরকম ব্যবহার দেখেন, তখন বিরাগী জগদীশবাবুকে, নিজেকে ভগবানের থেকেও বড়ো মনে করার কথা বলেছেন। বিরাগীর মতে জগদীশবাবু হয়তো তার এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তি অহংকারে  নিজেকে ভগবানের চেয়েও বড়ো বলে মনে করেন। যদি তা না হত তাহলে জগদীশবাবুর বিরাগী সন্ন্যাসীকে দেখতে পেয়ে তিনি তাঁর বারান্দার সিঁড়ি থেকে সন্ন্যাসীর কাছে এসে তাকে অভ্যর্থনা জানাতেন। 

৩)” হরিদার জীবনের সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র আছে ” — হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্রটি কী?

অথবা 

 হরিদার জীবন এরকম বহুরূপের খেলা দেখিয়েই এরকম চলে যাচ্ছে। — হরিদারজীবনের বহুরূপের খেলার পরিচয় দাও। 

উত্তর :  সুবোধ ঘোষের রচিত বহুরূপী গল্পের প্রধান চরিত্র হলেন আমাদের হরিদা। হরিদা পেশায় একজন বহুরূপী।  হরিদার জীবনটা বিভিন্ন বহুরূপী সাজের অদ্ভুত খেলা দেখিয়েই চলে যায়। হরিদার বহুরূপী এই পেশায় তিনি সপ্তাহে খুব বেশি হলে একদিন বাইরে বের হতেন।  এবং তার এই বহুরূপী সাজে কেউ তাকে চিনে ফেলে বা কেউ তার বহুরূপী সাজ দেখে খুশি হয়ে তাকে সামান্য কিছু বকশিশ দিতেন।  এতে হরিদার উপার্জন হত খুব খুবই সামান্য।  কিন্তু তবুও হরিদার এই অভাবের জীবনে বহুরূপীর পেশাই একটি  নাটকীয় বৈচিত্রের সৃষ্টি করে।
৪) ” একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল। ” – কোথায়, এবং কেন আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল? 
উত্তর : সুবোধ ঘোষের রচিত বহুরূপী গল্পে একদিন ঠিক দুপুর বেলার দিকে চকের  বাসস্ট্যান্ডের কাছে হরিদার এক উন্মাদ পাগলের ছদ্মবেশ ধরে বাসের যাত্রীদের কাছে হাজির হন।  

চকের বাসস্ট্যান্ডে দুপুরবেলা এক উন্মাদ পাগল এর আবির্ভাব হওয়ায় সেখানে সবাই ভীত হয়ে পড়ে।।সেই উন্মাদ পাগল এর মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল। চোখ ছিল একদমই টকটকে লাল. কোমরে একটা ছেঁড়া কম্বল জড়ানো ছিল তার সঙ্গে গলায় কয়েকটা টিনের কৌটার মালাও ছিল। যখন সেই উন্মাদ পাগল হাতে থান ইট নিয়ে বাসের যাএীদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন বাসের যাত্রীরা এতে আতঙ্কিত হয়ে পরে। এবং এই আতঙ্কে জেরেই  সেখানে আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল।

৫) আজ তোমাদের একট জবর খেলা দেখার / – বক্তার এই জবর খেলা দেখানোর উদ্দেশ্য কী ছিল ? শেষপর্যন্ত এই খেলার পরিণতিই বা কী হয়েছিল ? 
উত্তর : সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ‘ গল্প থেকে উপরের উদ্ধৃতিটি নেওয়া । পাঠ্য কাহিনি অনুসারে গ্রামের বিখ্যাত ধনী , জনৈক জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয়ের গুহা থেকে এক উঁচু দরের সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে । বহুরূপী হরিদা পাড়ার ছেলেদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা শুনে টের পান যে , তিনি প্রকৃত সন্ন্যাসী নন । সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর প্রকৃত স্বরূপ কেমন হওয়া উচিত তা বোঝাতেই , এরপর হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন । বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদা সকলকে বিস্মিত করেছিলেন । জ্যোৎস্নালোকিত রাতের স্নিগ্ধ পরিবেশে তাঁর আদুড় গায়ের ওপর সাদা উত্তরীয় এবং পরনে ছোটো বহরের থান আর হাওয়ায় উড়তে থাকা চুল ও কাঁধে ঝোলার মধ্যে থাকা গীতা— সব মিলিয়ে মনে হয়েছিল যেন তিনি জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে এসেছেন । হরিদার চোখের উদাত্ত উজ্জ্বল দৃষ্টি , কণ্ঠস্বর ও মুখের ভাষায় ; জগদীশবাবুর হৃদয় করুণাময় সজল হয়ে উঠেছিল । তিনি এই সর্বত্যাগী বিরাগীকে তুষ্ট করতে তীর্থ ভ্রমণের অজুহাতে প্রণামী হিসেবে একশো এক টাকা নিবেদন করেন । কিন্তু বহুরূপী হরিদার অন্তরের বৈরাগ্য এবং নিজ শিল্পের প্রতি আন্তরিক সততার কারণে তিনি , সেই টাকার থলি হেলায় ফেলে দিয়ে চলে আসেন । তাতে যে তার ঢং নষ্ট হয়ে যেত । তবে সত্যিকারের বিরাগী সন্ন্যাসী দর্শন করানোর জন্য জগদীশবাবুর কাছ থেকে সামান্য বকশিশ আদায়ের দাবিটুকুকেই হরিদা , পাথেয় বলে স্থির করেছিলেন ।
৬)জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল , তা বর্ণনা করো । 
উত্তর :  সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে এক স্নিগ্ধ ও শান্ত জ্যোৎস্নালোকিত উজ্জ্বল সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বারান্দার চেয়ারে বসেছিলেন । হঠাৎ বারান্দার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । কারণ সিঁড়ির কাছে এমন একজন দাঁড়িয়েছিলেন যিনি জটাজুটধারী , হাতে কমণ্ডলু , চিমটে , মৃগচর্মের আসনসহ গৈরিক বসন পরিহিত কোনো সন্ন্যাসী নয় , তিনি একজন বিরাগী , যার আদুড় গা , তার উপরে একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় । পরনে ছোটো বহরের থান । তার শীর্ণ শরীর দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী এবং তাঁর চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল উদাত্ত শান্ত এক উজ্জ্বল দৃষ্টি । ভক্তের সেবার ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়ে গ্রহণ করেছেন মাত্র এক গ্লাস জল । থাকার ও দান গ্রহণের অনুরোধ সবই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করেছেন তিনি । জগদীশবাবু উপদেশ শুনতে চাইলে তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই বলেছেন । পরমেশ্বরের দেখা পেলেই সমস্ত ঐশ্বর্য পাওয়া যায় । তাঁকে তীর্থ ভ্রমণের অজুহাতে প্রণামী দিতে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বলেন হৃদয়ের মধ্যেই তো সব তীর্থ । বিরাগী চরিত্রটি পূর্ণতা পায় তাঁরই উক্তিতে , ‘ আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ‘ সত্যিই তা করতে জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামীর টাকার থলিটা সিঁড়িতে পড়ে থাকলেও সেদিকে না তাকিয়ে তিনি চলে যান ।
৭) ‘ গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা / -কোন্ গল্পের কথা বলা হয়েছে ? গল্প শুনে হরিদার গম্ভীর হয়ে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করো । 
উত্তর : উদ্ধৃতাংশটি সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ‘ গল্পের অংশ – বিশেষ । গল্পকথক ও তাঁর চার বন্ধু গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদাকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর গল্প বলেছিলেন । সেই সন্ন্যাসী হিমালয়ের গুহায় বাস করতেন । তাঁর সারাবছরের খাদ্য বলতে একটি মাত্র হরীতকী । বয়স হাজারেরও বেশি । তাঁর পদধূলি পাওয়া দুর্লভ একমাত্র জগদীশবাবুরই সেই পদধূলি পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল । তাও আবার জগদীশবাবু যখন তাঁকে সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম পরাতে গিয়েছিলেন সেই ফাঁকে তা সংগ্রহ করতে হয়েছিল । সেই সন্ন্যাসী বিদায় নেওয়ার সময় জগদীশবাবুর জোর করে দেওয়া একশো টাকার নোট সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করেছিলেন । হওয়ার কারণ কথক ও তাঁর বন্ধুদের মুখে গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে যান । হরিদার এই গাম্ভীর্যের কারণ কথকরা বুঝে উঠতে পারেননি । তাঁদের সন্দেহ হয়েছিল হরিদার মাথায় নিশ্চয় নতুন কিছু মতলব এসেছে । তাঁদের এই ভাবনা বাস্তবায়িত হয় যখন হরিদা তাঁদের সন্ধ্যায় জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানান । তাঁর গম্ভীর হওয়ার পিছনে দুটি কারণ উঠে আসে । প্রথমত , জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখিয়ে কিছু হাতাবার চিন্তায় নির্লোভ হরিদার মানবিক বিচ্যুতি । দ্বিতীয়ত , বিষয়সম্পদে নিরাসক্ত সন্ন্যাসীর দান গ্রহণের ব্যাপারটাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না ।
৮)বহুরূপী গল্প অবলম্বনে হরিদার চরিত্রের বর্ণনা দাও?
উত্তর : ভূমিকা : সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের নামাঙ্কিত ছোট গল্পের প্রধান তথা কেন্দ্রিয় চরিত্র বহুরূপী হরি তাকে ও তার শিল্পী সত্তার সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যগুলিকে অবলম্বন করে সমগ্র কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। চরিত্রটি একটি একমুখী কাহিনি। বিশ্বের উত্থানপতন যা ঘটলেও চরিত্রটির মধ্যে বৈচিত্র অবশ্যই আছে।

সাধারণ পরিচয় : খুবই দরিদ্র ছিলেন হরিদা। শহরের সবথেকে সরু একটা ছোট ঘরে তিনি থাকতেন। দারিদ্র দূর করার জন্য মাঝে মাঝে তাকে বহুরূপী সাজাতে হত।

স্বাধীনতা বোধ : হরিদা অন্যের অধীনে কাজ করতে চান না। কারণ তার মধ্যে অদ্ভুত এক স্বাতন্ত্রবোধ ছিল। আর এই স্বাধীনচেতা স্বভাবের জন্য ঘড়ি মিলিয়ে কাজ তিনি করেননি।

মিসুকে স্বভাবের মানুষ : তিনি লোকজনের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন। তাই তার ঘরে পাড়ার ছেলেরা আড্ডায় বসত।

আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ : হরিদার মনের মধ্যে এক আধ্যাত্মিক জগৎ ছিল। তাই সন্ন্যাসীর বার্তা জানতে পেরে তিনি বলেন- “থাকলে একবার গিয়ে পায়ের ধুলো নিতে পারতাম”।

কৌতুক প্রিয়তা : হরিদার মধ্যে এক সাধারণ কৌতুকময়তা ছিল। তাই বহুরূপীর ছদ্মবেশে তিনি মানুষকে এমনভাবে তৃপ্তি দিতেন যা সাধারণভাবে তার দক্ষতার পরিচয় বহন করত।

নিপুণ শিল্পী : নিজের বহুরূপী পেশায় তিনি নিপুণ শিল্পী। তাই অনেকে চিনতে পারত না। তার বহুরুপী পেশাকে অনেকে আসল ভেবেছে।

মূল্যায়ন : বহুরূপীর জীবনের মূল চাহিদা হল মনরঞ্জনের চাহিদা। প্রতারণার দ্বারা অর্থ উপার্জন নয়। মানুষকে আনন্দ দান করা আর একমাত্র প্রাসঙ্গিক বিষয়। তাই যে হাসি মূলত বলতে পারে- মানুষ তো নয় এই বহুরূপী জীবন এর বেশি কী কী আশা করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ

হারিয়ে যাওয়া কালিকলম  প্রবন্ধের পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক পরীক্ষার সাজেশন।

কোনি উপনাস্যের প্রশ্ন উত্তরের পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক পরীক্ষার সাজেশন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *