মাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা সাজেশন ২০২৩

বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পরীক্ষা প্রস্তুতি : মাধ্যমিক বাংলা  প্রবন্ধ রচনা সাজেশন ২০২৩ প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা তোমরা যারা ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে parikshaprastuti .org এক্সপার্ট  টিমের  পক্ষ পক্ষ থেকে তোমাদের অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।  আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি মাধ্যমিক  বাংলা প্রবন্ধ রচনার   সাজেশন। আমরা এখানে মাত্র ছয় টি রচনা নিয়ে আলোচনা করেছি  , যা ২০২৩ সালের  পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  আশা করছি তোমরা এই ছয় টি রচনা ভালো করে প্রস্তুতি নিবে, তাহলে একটি রচনা ফাইনাল পরীক্ষায় অবশ্যই কমন পাবে। আমাদের এই পেজে আরো অনেক সাজেশন দেওয়া হবে।  বলো লাগলে আমাদের এই WWW.PARIKSHAPRASTUTI .ORG ওয়েব পেজটিকে বন্ধুদের মাঝে অবশ্যই  শেয়ার করবে। মাধ্যমিক বাংলা  রচনা সাজেশন ২০২৩

মাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা সাজেশন ২০২৩

(১) বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

ভূমিকা

প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ ছিল নিতান্তই প্রকৃতি নির্ভর। প্রকৃতির নির্মম ঝড় ঝঞ্ঝায়, প্রবল বন্যা ও ক্ষরায় এবং ভূমিকম্পের বিধবংসী আলোড়নে মানবজীবন ক্ষণে ক্ষণে বিপর্যস্ত হয়েছে। চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহন এ সব কিছুকে সে দৈব নির্ভর বলে মেনে নিয়েছে। আর দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু ভালো মন্দ ঘটেছে সব কিছুর পিছনে দেব-দেবীর সবাকু দৃষ্টির প্রভাব আছে বলে বিশ্বাস করেছে।

কুসংস্কারের স্বরূপ

যে বিশ্বাসের পিছনে কোন যুক্তি নির্ভরতা নেই, কোন তথ্যভিত্তিক প্রমাণাদি নেই , তাকেই আমরা কুসংস্কার বলি। অর্থাৎ যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসই হল কুসংস্কার।

বিজ্ঞানের স্বরুপ

বিজ্ঞান কথাটির অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান। অর্থাৎ কোন কিছু অজানা বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে কোন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহন। সেক্ষেত্রে একই কার্যকরণের ফলে একই ফল হয়। সেটাই অমোঘ সত্য। সেটাই বিজ্ঞান। এখানে আছে শুধু বিচার-বিবেচনা, যুক্তি দিয়ে বিশেষ জ্ঞানে পৌছানো।

কুসংস্কারের বিভিন্ন প্রকাশ

একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে, কম্পিউটার, রোবট ইত্যাদির যুগে পাহাড়ের মত উচু করে দাঁড়িয়ে আছে হাচি, টিকটিকি, পিছু ডাকা আরও কত কী। ভোরের স্বপ্ন নাকি বিফল হয় না, মেয়েদের বাম চোখ নাচলে নাকি শুভ হয় অপরপক্ষে ডান চোখ নাচা নাকি ভারি অপায়া, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া মেয়েদের চুল কাটা ভূতের উপস্থিতি প্রভূতি। এছাড়া এমনকি পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যক্ষ বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সময় ঝাঁট দেখেছিলেন বলে সেদিনটি আর কাজেই যাওয়া হল না, এইরকম অনেক হাজার হাজার নাগপাশে আমাদের দিনক্ষণ বাঁধা।

কুসংস্কার দূরীকরণে আমাদের করণীয়

কুসংস্কার দূরীকরণের প্রধান হাতিয়ার হল বিজ্ঞান। মানুষের বিজ্ঞান চেতনাকে বৃদ্ধি করতে পারলেই এই দূরারোগ্য ব্যধি থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান পরিচালিত বিতর্ক সভা, আলোচনা চক্র, প্রদর্শনাদি অনেক সুফল দিতে পারে।

উপসংহার

বিজ্ঞান চেতনাই পারে মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্তি দিতে। তাই সব কিছুকে যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, বিচার করে গ্রহন করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আর তার জন্য চাই শিক্ষা , সার্বিক শিক্ষা । শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কুসংস্কারের অপসারণসম্ভব।

(2) বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

ভূমিকা:

মানবজীবনে যেকোনো সাফল্যের অগ্রগতিকে আশীর্বাদ বলে গণ্য করা যায়।বহুকাল আগে মানব সভ্যতার আদিযুগে মানুষ ছিল প্রকৃতির দাস।থাকার মতো ঘর ছিলনা।পশু মাংস ফলমূল ছাড়া আর কোনো আহার্য ছিলনা।আত্মরক্ষার অস্ত্র ছিলনা।আগুন জ্বালানোর কৌশল ছিল অজানা।তখন মানুষের কাছে এই বিশাল বিশ্বপ্রকৃতি ছিল রহস্যে ভরা। সেই তখন থেকেই শুরু হয়েছিল মানুষের প্রকৃতিকে জয় করার সাধনা। আজ মানুষ বিশ্ববিজয়ী ।মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সমৃদ্ধি সাধনে নিরলস সেবায় অতুলনীয় নজির স্থাপন করেছে বিজ্ঞান।কল্যাণময়ী বিজ্ঞানের এই বিপুল দান সত্বেও দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের পরমাণু বোমার দূর্ধর্ষ ধ্বংসলীলার দিকে তাকিয়ে কল্যাণকামী মানুষের মনে বার বার একটাই প্রশ্ন জেগে উঠেছে “বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ?”

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান:

বিজ্ঞান সাধনার মুলেই রয়েছে মানবকল্যাণ।বিজ্ঞান বলে বলীয়ান মানুষ দুরন্ত নদীর স্রোতকে বশীভূত করে তার অমৃত প্রবাহে উষর মরুকে করেছে শস্য শ্যামলা।সুবিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর দূরতম ঘাটে নামিয়ে দিয়েছে পণ্য সম্ভার ।তার চিন্তা ভাবনা,কামনা বাসনা,প্রয়াস ,প্রচেষ্টা আজ কেবল মর্তসীমার গণ্ডিতেই আবদ্ধ নয়,মহাকাশের নীল সীমান্ত অতিক্রম করে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে প্রসারিত।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সহযোগিতায় সফল হয়েছে সবুজ বিপ্লব।শিল্পক্ষেত্রে যন্ত্র দানবের আসুরিক শক্তির প্রয়োগ সৃষ্টি করেছে অতুল বিভব।কঠিন কঠিন অসুখ সব প্রায় সকল সংক্রামক ব্যাধির নিরাময় সম্ভব হয়েছে।ইন্টারনেট ও দূরদর্শন দূরকে করেছে নিকট, অদৃশ্য কে করেছে দৃশ্যমান।এমন কল্যাণমুখী বিজ্ঞানকে আমরা কোন সংশয়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করবো  ?  বিজ্ঞানের ভালো অথবা মন্দ,অর্থাৎ বিজ্ঞান আমাদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ সবটা নির্ভর করে মানুষ বিজ্ঞানকে কিভাবে প্রয়োগ করছে তার উপর।

বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলার কারণ:

বিজ্ঞান যখন মানব সভ্যতার সুস্থ জীবন যাত্রার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, জীবনের শান্তিকে নষ্ট করে নিয়ে আসে সংঘাত আর মৃত্যু,সুস্থ পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে।একমাত্র তখনই বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করা যায়।
যেহুতু বিজ্ঞান কোনো সচেতন বস্তু নয় তাই নিজের ইচ্ছে মতো কিছু করবার ক্ষমতা নেই তার।বিজ্ঞানকে আমরা যেভাবে ব্যাবহার করবো ঠিক সেই মতোই ফল পাবো।সবকিছুরই ভালো মন্দ দুটো দিক থাকে,বিজ্ঞান এর ব্যতিক্রম কিছু নয়।

উপসংহার:

বিজ্ঞান হল মানবজাতির হাতিয়ার।হাতিয়ার ব্যাবহার করে ভালো বা খারাপ যেকোনো কাজই করা যায়।আসলে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রয়োগকর্তার মনোভাবের উপর। যেমন পরমাণু শক্তি ধ্বংসের কাজে না লাগিয়ে তা মানবকল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে।
তাই বিজ্ঞানের উপর অহেতুক দোষ চাপানো ঠিক নয়। সবার আগে প্রয়োজন মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন। যতদিন পর্যন্ত না মানুষের খারাপ মনোভাব পরিবর্তিত করে বিজ্ঞান বলের অসৎ ব্যাবহার বন্ধ করে, বিজ্ঞানকে মঙ্গলময় দেবতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে,ততদিন বিজ্ঞান সম্পর্কে এই প্রশ্নটি থেকেই যাবে যে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?

(৩) আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম

অথবা

আমার স্মরণীয় ব্যক্তি

ভুমিকা :

আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম দেশে-বিদেশে বিদ্রোহী কবি, বুলবুল কবি বলে পরিচিত। তাঁর কাব্যে পরাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মানব মর্যাদা ও সৌন্দর্যচেতনা সমন্বিত হয়েছে।

জন্ম :

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসােল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের কাজী পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।

কেন তিনি আমার প্রিয় :

নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা আমাকে মুগ্ধ ও আকর্ষণ করে। “বল বীর চির উন্নত মম শির’ একথা বলেই তাঁর ‘বিদ্রোহী’ নামক প্রসিদ্ধ কবিতা আরম্ভ। এ কথা কয়টি উচ্চারণ করার সাথে সাথে পাঠক ও শ্রোতা মাত্র যেন অন্য জগতে নীত হয়। আবার দুনিয়ায় অবিচার ও জুলুমবাজির প্রবাহ চলছে। মানুষের পরাধীনতা ও গােলামীর জিঞ্জির আজও ছিন্ন হয়নি। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মক্ষেত্রের অবিচার-অনাচার আজ আকাশপর্শী হয়ে উঠেছে। মূর্তিমান অন্যায় ও অকল্যাণ জগদ্দল পাষাণের মত মানুষের বুকে চেপে আছে। মেহনতি  মানুষের কান্নার জলে আজ আকাশ-বাতাস আবিল হয়ে ওঠেছে। তার বিরুদ্ধে মানুষ বিদ্রোহ না করে থাকতে পারে না। যতদিন পৃথিবীর বুক হতে পাপ-তাপ দূর না হবে, ততদিন কোন সমাজ-সচেতন মানুষ শান্ত হতে পারে না।
তাই কবির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমাকেও বলতে ইচ্ছা হয়-

“যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রােল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত।
আমি সেই দিন হবো শান্ত।”

নজরুল ইসলামের বিদ্রোহের সুর তার প্রথম দিকের কাব্য রচনার প্রায় সবগুলােতেই অল্প-বিস্তর রয়েছে। তাঁর ‘অগ্নিবীণা, ‘ভাঙ্গার গান’ প্রভৃতি গ্রন্থে এর পরিচয় পাই। আগুনের মত উজ্জ্বল ও প্রােজ্জ্বল এসব বইয়ের কবিতাগুলােতে ভাবের সাথে ভাষার সংগতি ও মিল অনবদ্য। মানুষের কবি নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাকে কাব্য ও গানে রূপ দান করেছেন। তাঁর রচিত দেশাত্মবােধক গান আজ ভারত উপমহাদেশের মানুষের মুখে মুখে, সভায় সভায় , আসরে আসরে গীত হয়।

মৃত্যু :

ইংরেজি ১৯৪৫ সালের দিকে কবি কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। ১৯৭২ সালে কবিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে আনা হয় এবং নাগিরিকত্ব দেয়া হয়। ২৯শে আগস্ট ১৯৭৬ সালে (১২ই ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি ঢাকায় শেষ নিস্বাশ ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়।

উপসংহার :

কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় শক্তি সাহস এবং চরিত্রের বাস্তব প্রতিমর্তি। আমাদের জাতীয় সমৃদ্ধিতে তার বহু অবদান রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তাঁর নামে ঢাকায় নজরুল ইনস্টিটিউট স্থাপন হয়েছে। আমাদের উচিত তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা।

(৪)আমার প্রিয় ঋতু।

ভূমিকা:

আমাদের দেশ ঋতু বৈচিত্র্যে সৌন্দর্যময়।ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতি বছর বয়ে যায় প্রকৃতির নতুন নতুন পর্যায়। বাংলার প্রকৃতি নবজীবনের সংস্পর্শে বারবার জেগে ওঠে নতুন আনন্দে। ভিন্ন ভিন্ন রূপে ও বৈচিত্র্যে বাংলার প্রত্যেকটি ঋতুই আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়।

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য:

ঋতুদের সবার মধ্যে অগ্রজ হল গ্রীষ্ম। ’নববর্ষের পুণ্যবাসরে’ তার শুভারম্ভ, জৈষ্ঠ্যের শেষ অবধি এর ব্যাপ্তি। জৈষ্ঠের শেষে, আষাঢ় এর প্রথম দিনে আকাশ কালো করে আগল ভেঙেচুরে আসে ‘উন্মাদ বরষা’; জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে তপ্ত ধরিত্রীর বুকে তৃষ্ণার অঞ্জলী হয়ে।শ্রাবণে তার ‘ধারা ঝরে ঝরঝর’; ভাদ্রের আঙিনায় শরৎ দেয় উকিঝুকি, আশ্বিন মাসের শেষ দিকে হিমেল অঙ্কে রচিত হয় তার বিদায় শয্যা। এবার দীপালীর আলো হাতে হেমন্ত আসে কার্তিকে, অঘ্রানে শীতের ডাক দিয়ে উত্তরা হিমেল বাতাসে তার বিদায়।কুয়াশার ঘোমটা মাথায় নিয়ে শীত হাজিরা দেয় পৌষে, মাঘেও সে তার হিমেল চাদর বিছিয়ে রাখে বাংলার বুকে। এ হলো সোনার বাংলার পাতাঝরার মরশুম। বৃক্ষরাজি তাদের শরীর থেকে সকল শুকনো পাতা ঝরিয়ে ফেলে নতুন রূপে সেজে ওঠবার নিমিত্ত প্রস্তুত হয়। 

বসন্ত বরণ:

অবশেষে সকল প্রতীক্ষার অবসানে, শীতার্ত প্রকৃতির ঘুম ভাঙিয়ে আসে আমার প্রিয় ঋতু বসন্ত। চৈত্রের শেষ পর্যন্ত তার গৌরবময় অবস্থিতি। এসময় বাংলার প্রকৃতি সত্যই হয়ে ওঠে ঋতুরাজের রঙ্গশালা।

বসন্তে প্রকৃতির রূপ:

বসন্তের রূপ-সৌন্দর্য আমার মনকে হরণ করে সেই ছেলেবেলা থেকেই। শীত যায় বসন্ত আসে, বসন্ত মানুষের কাছে সমাদৃত হয় ঋতুরাজ রূপে। বসন্তের রূপের সত্যিই কোনো অন্ত নেই। সে যেন পৃথিবীতে নবজাতকের প্রতীক। শীতের জীর্ণ সাজ ফেলে দিয়ে আমাদের প্রকৃতি এই সময়ে কি এক আশ্চর্য মায়ার সংস্পর্শে হয়ে ওঠে অপরূপা।

মায়াময় বসন্ত  :

এই ঋতু বাংলার কৃষিজীবী মানুষের কাছেও বিশেষ গুরুত্ব রাখে।রবি শস্যের ফলনে ভরে ওঠে কৃষিজমি। সরষের হলুদ রঙের ফুলের উজ্জ্বলতা এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। বাংলার ফলের রাজা আম,এই আমের মুকুল আসে বসন্তে।

উপসংহার:

 বসন্তের কথা বলতে গিয়ে বার বার প্রকৃতির  অপরূপ সৌন্দর্যের কথাই মনে আসে। পাখির কলকাকলিতে সকাল শুরু, রাতে কুয়াশার আচ্ছন্নতাহীন জোৎস্না।সব মিলিয়ে এক একটি দিন যেন অপার সৌন্দর্যময় বিশাল সমুদ্রের এক একটি তরঙ্গ।

(৫) বাংলার উৎসব 

ভূমিকা:
 
উৎসব হলো আনন্দময় অনুষ্ঠান।আর আমরা বাঙালিরা উৎসব প্রিয়।উৎসবের মধ্যেই রয়েছে বাঙালির আনন্দ। তাই বাঙালির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের মেঘ বার বার ঘনিয়ে এলেও বাঙালির আনন্দস্রোতে ভাটা কখনো পড়েনি। বাঙালি নানান রঙে বার বার সাজিয়েছে তার উৎসবের ডালি।উৎসবের দিনের আনন্দের মুহূর্ত গুলোকে বাঙালি ছড়িয়ে রেখেছে তার বিস্তৃত জীবনের আঙিনায়।

কল্যাণী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ:

“বাঙালি ঘরকুনে” এ অপবাদ আমাদের সকলেরই জানা কিন্তু তাই বলে বাঙালি কখনই আত্মকেন্দ্রিক নয়। আত্মকেন্দ্রিক মানে আপনাতে আপনি বদ্ধ।কিন্তু বাঙালি যদি আপনাতে আপনি বদ্ধ হতো তাহলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ হতনা। আমার আনন্দে সকলের আনন্দ হোক,আমার আনন্দ আরো পাঁচ জন উপভোগ করুক – এই কল্যাণী ইচ্ছাই হলো উৎসবের প্রাণ।সকল বাঙালির মনে এই ইচ্ছে আছে বলেই সবাই মিলেমিশে উৎসবে মেতে উঠে।

উৎসবের শ্রেণীকরণ:

বাংলার উৎসব গুলিকে মূলত চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

  1. ধর্মীয় উৎসব
  2. সামাজিক উৎসব
  3. ঋতু উৎসব
  4. জাতীয় উৎসব

তবে উৎসবকে সুনির্দষ্টভাবে ভাবে বিভাজন করা যায়না।যেমন কিছু উৎসব ঋতু বিষয়ক উৎসব বলে গণ্য কিন্তু ভালো করে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে তার মুলে ধর্ম নিহিত রয়েছে।

ধর্মীয় উৎসব:

ধর্মীয় উৎসব গুলি বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবনাকে কেন্দ্র করে।হিন্দু মুসমান খ্রিস্টান বৌদ্ধ শিখ প্রতিটি ধর্মের নানান রকমের উৎসব।সারা বছর ধরে একই ভাবে বাঙালির উৎসবের আমেজ বজায় থাকে । হিন্দু ধর্মের রয়েছে  নানান রকমের পুজো পার্বণের উৎসব। যাদের মধ্যে অন্যতম দুর্গোৎসব। এই দুর্গোৎসব-ই হলো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। শরৎ কাল এলেই বাংলার বুকে বেজে ওঠে ঢাকের বাদ্যি।দুর্গাপুজোর এই উৎসব দীর্ঘ চারপাঁচ দিন ধরে চলে অন্য যেকোনো অনুষ্ঠান উৎসবের চেয়ে এর আড়ম্বর অনেক বেশি।এছাড়াও মুসলমানদের রয়েছে ঈদ মহরম প্রভৃতি। খ্রিস্টানদের গুড ফ্রাইডে, বড়দিন। বৌদ্ধ ধর্মের বুদ্ধ পূর্ণিমা ও গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে শিখ সম্প্রদায় উৎসবে মেতে ওঠে। 

সামাজিক উৎসব:

সামাজিক উৎসবেও একই ভাবে মেতে ওঠে বাঙালি। উপনয়ন, অন্নপ্রাশন,বাড়ি প্রতিষ্ঠা, থেকে বিয়ে বাড়ি এসবই পড়ে সামাজিক উৎসবের মধ্যে।ভাই ফোঁটা, জামাইষষ্ঠী এর মতো স্বজন উৎসব গুলিও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।এই সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠানের সমাজের এতো গভীরে নিবদ্ধ যে, সমাজের আরো পাঁচজনকে না নিলে এসব উৎসব অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয়না। তাই সকল উৎসবে বাঙালি সবাই মিলে একই ভাবে আনন্দে মেতে ওঠে।

ঋতু উৎসব:

বছরের ছয়টি ঋতুকে কেন্দ্র করে বাঙালির অসংখ্য উৎসব। নাচ গান সহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় শারদোৎসব, বাসন্তৎসব এমনকি বর্ষা বন্দনা। চাষবাসের সাথে যুক্ত কৃষির উৎসব গুলি ঋতু উৎসবের এক একটি অঙ্গ। এছাড়াও ঋতু উৎসবে উল্লেখযোগ্য বসন্তে হোলি, পৌষে মকর, আঘ্রানে নবান্ন ইত্যাদি।

জাতীয় উৎসব:

সর্বভারতীয় জাতীয় উৎসব গুলিতেও বাংলার বাঙালির আনন্দের ঘাটতি থাকেনা। শহর থেকে গ্রাম সারা সারা বাংলা মেতে ওঠে জাতীয় উৎসব গুলিতে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পতাকা উত্তোলন করা হয় ১৫ ই আগস্ট।২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসও সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য -রবীন্দ্র জয়ন্তী,নেতাজির জন্মদিন,গান্ধী জয়ন্তী, বিবেকানন্দের জন্মদিন ইত্যাদি।

উৎসবের মধ্য দিয়েই মিলন:

ব্যাক্তিগত দুঃখ কষ্ট ভুলে সবার সাথে আনন্দে মেতে ওঠায় উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য।উৎসবানুষ্ঠান  মেলামেশার সুযোগ করে দেয় আমাদের। উৎসবের ময়দানে জাতি ধর্ম অর্থ গত ভেদাভেদের কোনো কোনো প্রাচীর থাকেনা। পারস্পরিক আনন্দ প্রীতি বিনিময়ের মধ্য দিয়েই রচিত হয় সুন্দর সুন্দর বন্ধুত্ব। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের এই আনন্দে মেতে ওঠা বাঙালির উৎসব পালনকে করে তোলে সার্থক।

উপসংহার:

প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে কে না চায়, সকলেই চায় বৈচিত্রের স্বাদ। সকলেই চায় নিজের গণ্ডিবদ্ধ জীবনকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে মুক্তি দিয়ে অসংখ্য প্রাণের স্পর্শে সরস ও মাধূর্যমন্ডিত করতে।তাই জীবনে উৎসবের প্রয়োজন অপরিসীম। তাই বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ অনন্তকাল  অনুষ্ঠিত হবে।

(৬)বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য:

ভূমিকাঃ

বছরের বারো মাসে ছয় ঋতুতে বাংলা প্রকৃতির নতুন রূপে নতুন লীলা বাংলার মানুষের জীবনকে অনাবিল স্নিগ্ধ আনন্দে ভরিয়ে তোলে। বঙ্গভূমির প্রকৃতি প্রত্যেকটি ঋতুতে বাঙালির জীবনে এনে দেয় নব নব রূপ ও রসের অপরূপ ছন্দ। বাংলার এই অপরূপ রূপে মোহিত হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন –

“জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে – তুমি বিচিত্ররূপিনী।।”

ষড়ঋতুর বৈশিষ্ট্য:

গ্রীষ্মকাল

ঋতু-পরিক্রমার প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্ম হল রুদ্র তাপস। সূর্যের প্রখর তাপে প্রচণ্ড দাবদাহে বাংলার মাটি, খাল, বিল, নদী-নালা শুষ্ক হয়ে পরম তৃষ্ণায় সামান্য বর্ষার প্রতীক্ষা করতে থাকে। তবে এমন রুদ্র রূপ এর মধ্যেও প্রকৃতি গ্রীষ্মের ডালি ভরে দেয় চম্পক, রজনীগন্ধা সহ আম, জাম, কাঁঠালের মতো নানা সরেস ফল ফুল দিয়ে। অবশেষে প্রখর রুদ্র মূর্তিতে বর্ষার আবাহন করে জ্যৈষ্ঠের শেষে এর অবসান ঘটে। 

বর্ষাকাল

গ্রীষ্মের অবসানে হাজির হয় ‘ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা।’বর্ষা হল ঋতু-পরিক্রমার দ্বিতীয় ঋতু। রুদ্র তাপস গ্রীষ্মের রুক্ষ অগ্নিস্রাবি দৃষ্টি আর প্রখর দাবদাহে শুষ্ক প্রকৃতি যখন পরম তৃষ্ণায় কাতর, তখনই মেঘের দামামা বাজিয়ে আকাশ কালো করে ধরিত্রীর বুকে নেমে আসে অঝোর বর্ষণ। এই অঝোর বৃষ্টি ধারায় ভরে যায় খাল বিল ,নদী, নালা।এই সময়ে প্রকৃতি আবার নব কলবরে সজ্জিত হয়ে ওঠে। ফুটিফাটা মাটি, খাল-বিল, নদী-নালা, পশুপাখি সকলে প্রশান্তিময় শীতলতায় স্বস্তি ফিরে পায়। গ্রাম বাংলার বুকে কৃষকের মন নেচে ওঠে আনন্দে। জমিতে বীজ তোলা ও রোপণের ধুম পড়ে।

শরৎকাল

দুইমাস ব্যাপী বর্ষার অবসানে জল থৈ থৈ স্নিগ্ধ শীতল প্রকৃতির বুকে তৃতীয় ঋতু শরতের একটা আলাদা মাধুর্য ও বৈচিত্র রয়েছে। ঘনকালো মেঘে জমে থাকা বর্ষণের বাষ্প পৃথিবীর বুকে অঝোর ধারায় ঢেলে দিয়ে এসময় আকাশ হয়ে ওঠে ঘননীল। পেঁজা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ আকাশের বুকে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত ভেসে বেড়ায়। তারা অতি স্নিগ্ধ, প্রশান্ত; যেন আর তাদের কোন তাড়া নেই। মাঠে মাঠে প্রস্ফুটিত কাশবন প্রকৃতির  সাজসজ্জায় এক অনন্য মাত্রা এনে দেয়। এমন স্নিগ্ধ, শীতল প্রকৃতির বুকে জীবনের একঘেয়েমি দূর করে বাঙালি মেতে ওঠে পুজা পার্বনে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবগুলি এসময় পালিত হয়ে থাকে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দুর্গোৎসব। এছাড়া কালীপূজা , ভাইফোঁটার মতো উৎসব এই ঋতুতেই হয়ে থাকে।

হেমন্ত

কুয়াশার  ঘোমটা টেনে উপস্থিত হয়  বাংলার চতুর্থ ঋতু হেমন্ত । হেমন্ত যেন বাংলার একান্ত নিজস্ব সম্পদ। কারণ অন্য কোথাও এর উপস্থিতি তেমন লক্ষ্য করা যায় না। এই হেমন্তেরই অগ্রহায়ণ মাসে আসে বাঙালির চির আকাঙ্খিত নবান্ন উৎসব। এসময় ধান কাটা শেষ হয়ে শুরু হয় চৈতালি ফসলের আয়োজন। শুকনো বাতাসে থাকে এক মন্থরতা। কার্তিক এবং অগ্রহায়ণ এই দুই মাস ধরে হেমন্ত ঋতুর ব্যাপ্তি। এই দুই মাসে প্রকৃতি ধীরে ধীরে স্নিগ্ধ শীতল থেকে আরো শীতলতর হতে থাকে। অবশেষে প্রকৃতিকে ঘাসের ওপর হীরের মতন চিকচিকে শিশির উপহার দিয়ে হেমন্ত বিদায় নেয়।

শীতকাল

শিশির শয্যায় হেমন্তের অবসানে আসে শীত। শীতকালে পদে পদে জড়িয়ে থাকে শীতাতুর জড়তা। তবুও শীত বাঙালির উৎসবের; অত্যন্ত কাছের প্রিয় এক ঋতু। এই সময়ে বাঙালি মেতে ওঠে নানা ধরনের মিলন মেলায়। বাজারে আসে নতুন নতুন ফল ও সবজি। প্রকৃতির গাছপালা নিজের জীর্ণ পুরাতনকে ঝরিয়ে ফেলে নতুন রূপে সেজে ওঠার জন্য প্রস্তুত হয়।

ঋতুরাজ বসন্ত

সকল ঋতুর অবসানে বছরের অন্তিম লগ্নে আগমন ঘটে বসন্তের। এর উজ্জ্বল আলোর ধারায় চারিদিক হয় উদ্ভাসিত। শীতে ঝরে যাওয়া জীর্ণ প্রকৃতি নবকলবরে  সেজে ওঠে। গাছপালাতে লাগে নতুন সবুজের ছোঁয়া। প্রস্ফুটিত শিমুল পলাশের অর্ঘ্যে আগমন ঘটে বাগদেবী সরস্বতীর। বাঙ্গালী গৃহবাসী দ্বার খুলে মেতে ওঠে নতুন রঙের দোল  খেলায়। আর কোকিলের কুহুতান এই অনাবিল আনন্দে এক নতুন মাত্রা যোগ করে দেয়।

উপসংহার:

বাংলার ঋতু পরিক্রমা কেবল প্রকৃতির রূপ পরিবর্তনের ধরা বাঁধা পটচিত্র মাত্র নয়। বাংলার ঋতুচক্র বাঙালির চেতনাকে মায়াময় কবিত্বে ভরে দিয়ে যায়। প্রকৃতির এই ঋতুচক্রে বাঙালির জীবন সুখ দুঃখে মিলেমিশে আবর্তিত হয়। 

আরো পড়ুনঃ
*****CLASS XI  ফাইনাল পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নের গ্রামার অংশের ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের সমাধান পেতে এখানে ক্লিক করুন। 

*********মাধ্যমিক ইতিহাস ২০২৩ প্রথম অধ্যায়ের ৪ নম্বরের প্রশ্ন উত্তরের সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। 

5 thoughts on “মাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা সাজেশন ২০২৩”

  1. Pingback: FABLE- CLASS 10 - MADHYAMIK 2023 | Pariksha Prastuti

  2. Pingback: AFRICA -BENGALI KABITA-CLASS 10 - MADHYAMIK-2023 | Pariksha Prastuti

  3. Pingback: MY OWN TRUE FAMILY- CLASS 10 -MADHYAMIK 2023 | Pariksha Prastuti

  4. Pingback: মাধ্যমিক বাংলা অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর | Pariksha Prastuti

  5. Pingback: মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ সাজেশন ২০২৩ | Pariksha Prastuti

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *