পরীক্ষা প্রস্তুতি: মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর। মাধ্যমিক ২০২৩ সালের পরীক্ষার্থীদের কাছে madhyamik ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায় থেকে প্রতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। তাই ২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরিক্ষার্থীদের জন্য এখানে মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় থেকে অত্যন্ত গুরুত্বেপূর্ন ৪ নাম্বারের এবং ৮ নাম্বারের প্রশ্ন উত্তর গুলি আলোচনা করা হল। মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর।
মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন
মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন উত্তর
(১)কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?এই অরণ্য আইনের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল?
উত্তরঃ অরণ্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য : ভারত ছিল ব্রিটিশ সরকারের একটি উপনিবেশ । ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত অরণ্য গুলির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য অরণ্য সনদ ভারতীয় অরণ্য আইন পাশ করেন। লর্ড ডালহৌসি 1855 খ্রিস্টাব্দে অরণ্য সনদ জারি করেন ভারতীয় অরণ্য গুলির উপর ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ফলে অরন্যের মূল্যবান কাঠ সরকারের সম্পত্তিতে পরিণত হয় ।পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার 1863 খ্রিস্টাব্দে পৃথক বন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং 1865 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় অরণ্য আইন পাশ করেন।
উপনিবেশিক অরণ্য আইন এর বিরুদ্ধে আদিবাসীদের প্রতিক্রিয়া/ বিদ্রোহ : সরকারের অরণ্য আইন আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর দারুণভাবে প্রভাব পড়েছিল ।এর ফলে অরণ্য অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া বা বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল।
আদিবাসীদের অরণ্য আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূল কারণ গুলি ছিল –
১)দৈনন্দিন কার্যকলাপে ব্যাঘাত: অরণ্য অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রথাগতভাবে অরণ্য গাছপালাকে নানা দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারতেন । কিন্তু অরণ্য আইনে গাছ কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া আদিবাসী সম্প্রদায় কাঠ বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারত না ।এর ফলে অরণ্যবাসী আদিবাসীরা রেগে যায়।
২)পশুচারনে ব্যাঘাত: অরণ্য আইন প্রণয়ন এর ফলে অরণ্য আদিবাসীদের পশুচারণ এ ব্যাঘাত ঘটে । এই আইনের মাধ্যমে অরণ্য অঞ্চল গুলি সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এই অঞ্চলে প্রবেশ করাকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এর ফলে আদিবাসীদের অসন্তোষ বৃদ্ধি পায় ।
৩)চাষবাসের ক্ষতি : অরণ্য আইন চালু হওয়ায় ঝুম, রেওয়া ইত্যাদি পদ্ধতিতে চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে আদিবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়
(২). ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে সংঘটিত কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহের কারণ কি ছিল অথবা ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে সংঘটিত বিভিন্ন কৃষক ও আদিবাসী বিদ্রোহের কারণ কি ছিল
উত্তরঃ সূচনা: ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার পর প্রায় 100 বছর ধরে 1757 থেকে 1857খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে অনেক কৃষক এবং উপজাতি বিদ্রোহ হয়েছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ, চুয়াড় বিদ্রোহ ও ফরাসি আন্দোলন , কোন বিদ্রোহ ,সাঁওতাল বিদ্রোহ প্রভৃতি। বিদ্রোহের কারণ :ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ ঘোষণার পিছনে অনেক কারণ ছিল-
১.অত্যাধিক রাজস্ব আদায় : 1765 খ্রিস্টাব্দে বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভের পর ইংরেজ কোম্পানি কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে শুরু করে। এর ফলে কৃষকরা কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
২. সরকারি কর্মচারী ও পুলিশি অত্যাচার: সরকারি কর্মচারী এবং পুলিশ কারণে-অকারণে কৃষক ও উপজাতি দের উপর অত্যাচার করত। এর ফলে কৃষক ও উপজাতিরা ইংরেজবিরোধী হয়ে উঠেছিল।
৩. জমিদার ও মহাজনদের শোষণ : জমিদার ও মহাজনদের শোষণ উপজাতি বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। ইংরেজ কোম্পানি এবং জমির খাজনা আদায়ের ফলে কৃষকরা মহাজনদের কাছে ঋণ নিতে বাধ্যহতো। এর ফলে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে তারা অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হতো।
৪.নীলচাষে বাধ্য করা: ইংরেজ কোম্পানির জোর করে কৃষকদের কম লাভে নীল , তুলো ,পাট প্রভৃতি বাণিজ্যিক ফসল চাষে বাধ্য করলে কৃষকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
(৩) উনিশ শতকের উপজাতি বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য গুলি কী ছিল?
উত্তর: সূচনাঃ ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে কৃষক উপজাতীরা বিদ্রোহ করেছিল। এই বিদ্রোহ গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ, চুয়াড় বিদ্রোহ,কোল বিদ্রোহ ,সাঁওতাল বিদ্রোহ ,ফকির বিদ্রোহ,ওয়াহাবি ও ফরাজি আন্দোলন প্রভৃতি।
বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য : ইংরেজদের বিরুদ্ধে উপজাতি বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য গুলি ছিল-
১. এ বিদ্রোহে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল।
২. এগুলি আসলে ছিল ব্রিটিশ সরকারের ভূমি রাজস্ব নীতি, কৃষি নীতি প্রভৃতির বিরুদ্ধে কৃষক- উপজাতিদের প্রতিবাদ।
৩. এই বিদ্রোহ গুলির মাধ্যমে কৃষক উপজাতি শ্রেণীর মানুষেরা জমিদার ও মহাজনদের বিরোধিতা করেছিল।
৪. এই বিদ্রোহ গুলি আসলে ছিল ক্ষমতাবান ইংরেজদের সঙ্গে সাধারণ কৃষক ও উপজাতি দের অসম লড়াই।
(৪) টিকা লেখ : চুয়াড় বিদ্রোহ।
উত্তরঃ সূচনা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ,ধলভূম এবং বর্তমান ঘাটশিলা অঞ্চলে অর্থাৎ জঙ্গলমহলের অধিকাংশ আদিবাসীদের ইংরেজ এবং ইংরেজ সমর্থকরা চুয়ার বলে ডাকত। ইংরেজ কোম্পানি জঙ্গলমহল অঞ্চলের রাজস্ব বৃদ্ধি করলে চুয়াড় সম্প্রদায়ের মানুষেরা ক্ষিপ্ত হয়ে যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাই ইতিহাসে চুয়াড় বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ : চুয়াড় বিদ্রোহের কারণগুলি ছিল –
১. উচ্চহারে রাজস্ব আদায়: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে জমির উপর উচ্চহারে রাজস্ব ধার্য করে। এর ফলে চুয়ার সম্প্রদায়ের মানুষেরা কোম্পানির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
২. সূর্যাস্ত আইন :1793 খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ম এর মাধ্যমে জমিদারেরা বছরের নির্দিষ্ট দিনে সূর্য ডোবার আগেই রাজস্ব দিতে না পারলে জমিদারদের জমিদারি কেড়ে নেওয়া হতো। একে সূর্যাস্ত আইন বলা হয়। এর ফলে জমিদার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাজনা আদায়ের জন্য কৃষকদের উপর জুলুম অত্যাচার শুরু করে। তাই কৃষকেরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে. ৩.রাজস্ব আদায়কারীদের অত্যাচার : কোম্পানি এবং জমিদারদের রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়ের নামে চুয়ার দের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু করলে চুয়ার সম্প্রদায়ের মানুষেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
বিদ্রোহের বিস্তার: উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য 1798 খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরের রায়পুর পরগনায় চুয়াড় বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এই চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন রায়পুরের ক্ষমতাচ্যুত জমিদার দুর্জন সিংহ। এ ছাড়া গোবর্ধন দিকপতি , লাল সিং এবং মোহন সিং প্রমুখদের নেতৃত্বেও চুয়াড় বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে.
গুরুত্ব বা ফলাফল : ব্রিটিশ সরকার সেনাবাহিনীর সাহায্যে চুয়াড় বিদ্রোহ দমন করতে না পেরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আপোষ মীমাংসার পথ বেছে নেয়। 1805 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার পৃথক জঙ্গলমহল জেলা গঠন করে এবং নিলামের মাধ্যমে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নীতি ত্যাগ করে।
(৫) টীকা লেখ: কোল বিদ্রোহ।
উত্তরঃ সূচনা : বিহারের ছোটনাগপুর অঞ্চলের এক বিশেষ উপজাতি কোল নামে পরিচিত। 1832 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ , মহাজন এবং বহিরাগত মানুষদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই উপজাতির মানুষেরা যে বিদ্রোহের সূচনা করে তা ইতিহাসে কোল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
কোল বিদ্রোহের কারণ: কোল বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ গুলি ছিল –
১. ইংরেজ কোম্পানি জমিদার ও ইজারাদারদের মাধ্যমে কোলদের কাছ থেকেই অত্যধিক হারে রাজস্ব আদায় শুরু করেছিল।
২. জমিদার ও মহাজনদের বিভিন্নভাবে কোলদের অর্থনৈতিক শোষণ করত এবং অত্যাচার করত।
৩. ইংরেজ কোম্পানি বিভিন্ন আইন প্রয়োগ করে কোলদের শোষণ করতে শুরু করলে কোলরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
বিদ্রোহের বিস্তার : কোলদের উপর শোষণ ও অত্যাচারের প্রতিবাদে 1832 খ্রীস্টাব্দে বুদ্ধ ভগত, জোয়া ভগত ,সুই মুন্ডা,ঝিন্দার রাই প্রমুখদের নেতৃত্বে রাচি, সিংভূম, হাজারীবাগ ,পালামৌ এবং মানভূমের পশ্চিম অঞ্চলের কোল বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে।
গুরুত্ববা ফলাফল : কোলরা এই বিদ্রোহ গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। যেমন -আম গাছের শাখা গ্রামে গ্রামে পাঠানো হতো, যুদ্ধের জন্য তীর বিলি করা হতো, বিদ্রোহীদের হাতে ধৃত মহাজনদের দেবতাদের সামনে নিয়ে গিয়ে বলি দেওয়া হতো। এর ফলে ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহ দমনের জন্য কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বিদ্রোহীদের চাপে জমিদারদের হাত থেকেই গ্রামপ্রধানের হাতে জমি ফেরত দেওয়া হয় এবং জমিদাররা যাতে পুনরায় জমি দখল করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হয়.
(৬) সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর। মান ৪ / ৮
অথবা সাঁওতাল বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর : ভূমিকা: সাঁওতালরা ছিল বীরভূম, মানভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর ,মুর্শিদাবাদের প্রাচীন আদিবাসী সম্প্রদায়। এরা ছিল কঠোর পরিশ্রমী ও শান্ত প্রিয় কৃষিজীবী জনগোষ্ঠী। ভাগলপুরের রাজমহল পাহাড় এর প্রান্তদেশে বনভূমি পরিষ্কার করে বসবাস করত। এই অঞ্চল দামিন-ই-কোহ নামে পরিচিত , যার অর্থ হলো পাহাড়ে প্রান্তদেশ। ইংরেজদের শোষণ নীতির চাপে তারা 1811 থেকে 1881 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সাতবার বিদ্রোহ করে , এর মধ্যে 1855-56 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ইতিহাসে এই বিদ্রোহ সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত
বিদ্রোহের কারণ: এই অঞ্চলের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ জমিদার ও কর্মচারীদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তাই তারা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন নিম্নে বিদ্রোহের কারণগুলি উল্লেখ করা হলো। –
১.খাজনা বৃদ্ধি : বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হলে তাদের তৈরি করা পাথরের জমি থেকে আবাদি জমিতে নতুন ভূমি ব্যবস্থায় খাজনা ধার্য করা হয়। বিনা খাজনায় চাষ করতে অভ্যস্ত সাঁওতালদের খাজনা ক্রমে বৃদ্ধি পেলে তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
২.মহাজনদের শোষণ : নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় সাঁওতালদের নগদ অর্থে খাজনা দিতে হত। সাঁওতালরা নগদ অর্থের জন্য মহাজনদের কাছে ঋণ নিতে বাধ্য হতো। যার সুদ প্রায় 50 শতাংশ থেকে 500 শতাংশ ছিল। একবার ঋণ নিলে তারা আর বেরিয়ে আসতে পারত না। মহাজনরা তাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাত। সর্বস্ব হারানোর পরেও নিজেকে দাসে পরিণত হতে হতো।
৩. বহিরাগত ব্যবসায়ীদের কারচুপি : বিদেশি ব্যবসায়ীরা দোকান খুললে ফসলের বিনিময় চড়া দামে কিনতে গিয়ে সাঁওতাল শ্রেণীর মানুষেরা সর্বস্বান্ত হত। ব্যবসায়ীরা ভূয়ো বাটখারা ( কেনারাম ও বেচারাম ) ব্যবহার করে সাধারণ সাঁওতালদের ঠকাত। এই কারচুপি জানতে পারলে সাঁওতালরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
বিদ্রোহের সূচনা : এইসব অত্যাচারের প্রতিবাদে তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন এর মাধ্যমে সমস্যা মিটবে না বুঝতে পারে। তাই তারা 1855 সালের 30 শে জুন ভাগনা ডিহির মাঠে সিধু ও কানু নামে দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে 10000 সাঁওতাল স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করে।
বিদ্রোহের দমন : আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে লাঠি , টাঙ্গি, তীর-ধনুক নিয়ে সাঁওতালরা লড়াইয়ে পরাজিত হয়। ব্রিটিশ সরকার বহু বিদ্রোহীকে হত্যা করে সিধু কানু সহ অন্যান্য নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ছিল। এইভাবে 1856 সালে ইংরেজরা নির্মমভাবে এই বিদ্রোহ দমন করেছিল।
ফলাফল: এই বিদ্রোহের ফলে –
১. সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে সাঁওতাল পরগনা জেলা গঠন করা হয়।
২.সাঁওতালদের পৃথক উপজাতি বলে ঘোষণা করা হয় এবং বলা হয় ব্রিটিশ আইন এখানে কার্যকর হবে না।
৩. খ্রিস্টান মিশনারীরা ছাড়া সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
উপসংহার : এই বিদ্রোহ ছিল একটি তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদ। নরহরি কবিরাজের মতে – এই বিদ্রোহ ছিল সকল সম্প্রদায়ের দরিদ্র মানুষদের মুক্তিযুদ্ধ। কালীকিংকর বলেন -’ বাংলা বিহার ইতিহাসে এই বিদ্রোহ নবযুগের সূচনা করে।’ সুপ্রকাশ রায় বলেন-’সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল ভারতের প্রথম মুক্তিসংগ্রাম।’
(৭) মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর: সূচনা : বর্তমান ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুরের রাঁচি এবং সিংভূম অঞ্চলে মুন্ডারা বসবাস করত। 1899 থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ইতিহাসে তা মুন্ডা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ : মুন্ডা বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য কারণ গুলি ছিল –
১. মুন্ডাদের যৌথ কৃষিব্যবস্থার ভাঙ্গন: মুন্ডারা জঙ্গল পরিষ্কার করে কৃষি কাজ করতো। তারা যৌথভাবে কৃষি কাজ করতো যা খুৎকাঠি প্রথা নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ সরকার মুন্ডাদের এই খুৎকাঠি প্রথা ভেঙে দিলে মুন্ডারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
২.মুন্ডা অঞ্চলে ব্রিটিশ শোষণ : মুন্ডারা জঙ্গল পরিষ্কার করে কৃষি কাজ করতো। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে মুন্ডাদের নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে জোরপূর্বক ব্রিটিশ আইন ও বিচার ব্যবস্থা চালু করলে মুন্ডারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে।
বিদ্রোহের বিস্তার : বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডা বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ কর্মচারী , জমিদার , ধর্মপ্রচারক প্রভৃতি উপর আক্রমণ চালায় এবং খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল বা গুরুত্ব: মুন্ডা বিদ্রোহের কারণে ব্রিটিশ সরকার মুন্ডা অঞ্চলে 1908 খ্রিস্টাব্দে ‘ছোটনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন ‘ পাশ করে এবং মুন্ডাদের খুৎকাঠি প্রথা কে স্বীকৃতি জানায়। এছাড়া মুন্ডা অঞ্চলে বেগার প্রথার অবসান ঘটে এবংমুন্ডাদের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।
(৮) বিরসা মুন্ডা কেন বিখ্যাত ছিলেন ?
উত্তরঃ সূচনাঃ বিরসা মুন্ডা ছিলেন মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান নেতা। 1899 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ছোটনাগপুর এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের মানুষেরা মুন্ডা বিদ্রোহের শামিল হয়েছিল।
ব্যক্তিগত জীবন: বিরসা মুন্ডা 1875 খ্রিস্টাব্দে রাঁচি জেলার উলিহাতু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন উলিহাতু গ্রামের একজন ভাগচাষী। বাল্যকালে বিরসা মুন্ডা খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে লেখাপড়া করেন।
বিরসা মুন্ডা এবং মুন্ডা বিদ্রোহ : বিরসা মুন্ডা ধীরে ধীরে মুন্ডাদের নেতায় পরিণত হন। তিনি 1893 খ্রিস্টাব্দে থেকে 1894 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গ্রামের জমি জবর দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। 1895 খ্রিস্টাব্দে তিনি ভগবানের দর্শন পেয়েছেন বলে দাবি করেন এবং নিজেকে অবতার বলে ঘোষণা করেন। এর ফলে মুন্ডা সমাজের মানুষ তাকে ভগবানের মতো সম্মান করতো। ব্রিটিশ সরকার বিভিন্নভাবে মুন্ডাদের উপর শোষণ এবং অত্যাচার চালাত। বিরসা মুন্ডা মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করে মুন্ডা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বিদ্রোহীরা রাঁচি , সিংভূম প্রভৃতি এলাকাগুলিতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে এবং অফিস থানা ও ইংরেজ কর্মচারীদের আক্রমণ করে।
আন্দোলনের অবসান : বিরসা মুন্ডার বিদ্রোহে আতঙ্কিত হয়ে সরকার মুন্ডা বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে এবং বিরসা মুন্ডা কে বন্দি করে রাঁচি জেলে রাখা হয়। সেখানে 1900 খ্রিস্টাব্দে মাত্র 25 বছর বয়সে বিরসা মুন্ডার মৃত্যু হলে মুন্ডা বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
(৯)ভিল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল লেখ।
উত্তর: সূচনা: ভিলরা ছিল মধ্য ও পশ্চিম ভারতের উপজাতি সম্প্রদায়। তারা ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন অত্যাচারের বিরুদ্ধে 1889 খ্রিস্টাব্দে যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তা ইতিহাসে ভিল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
বিদ্রোহের কারণ: বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য কারণ গুলি ছিল-
১. মাড়োয়ারি মহাজনদের শোষণ : ভিল সম্প্রদায় তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে মাড়োয়ারি মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করত। এই মহাজন শ্রেণী ভিলদের থেকে অত্যন্ত চড়া সুর আদায় করত। এর ফলে ভিলরা দুর্দশার সম্মুখীন হত।
২. ইংরেজদের খান্দেশ অধিকার : 1818 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা খান্দেশ অধিকার করে। এই অঞ্চলে ইংরেজদের নিয়ম-কানুন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ভিলরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
৩. কোম্পানির আধিপত্য স্থাপন : ভিল অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়া ভিলদের চিরাচরিত আইন ও বিচার ব্যবস্থা বাতিল করে কোম্পানি নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা চালু করলে ভিলরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
৪. ভূমি রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি: ব্রিটিশ কোম্পানি ভিল অধ্যুষিত অঞ্চলে ভূমির রাজস্বের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করলে ভিলরা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
(১০)সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা করো। মান ৪ / ৮
উত্তর: সূচনা: ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনে ইংরেজদেরশোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও ফকিররা 1763 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1800 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যে বিদ্রোহের শামিল হয়েছিল তা ইতিহাসে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ নামে পরিচিত। মুঘল যুগের শেষ দিকে ভ্রাম্যমান সন্ন্যাসী ও ফকিরগণ বাংলা ও বিহার অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করে কৃষির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো। কোম্পানির আমলে বিভিন্ন কারণে তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ: সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণগুলি ছিল-
১. অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়: ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারীরা কৃষিজীবী সন্ন্যাসী দের কাছ থেকেই অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করার ফলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
২. তীর্থকর; বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য সরকার থেকে সন্ন্যাসী ও ফকির দের উপর তীর্থকর আদায় করা শুরু করা হলে সন্ন্যাসী ও ফকিররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে.
৩. কোম্পানির কর্মচারীদের জুলুম: ফকির সন্ন্যাসী দের মধ্যে অনেকে রেশম ব্যবস্থার সঙ্গেই যুক্ত ছিল। কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের এই ব্যবস্থায় নানাভাবে জুলুম-অত্যাচার ও বাঁধা প্রদান করতো।
৪.মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ ও অত্যাচার : কোম্পানির কর্মচারীরা ছাড়াও ইজারাদার, পাওনাদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ অত্যাচার সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।
৫. নিষেধাজ্ঞা:ফকিরদের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কোম্পানি তাদের দরগায় যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ফকিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
৬. মন্বন্তর: ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় (1770 খ্রিস্টাব্দে) বহু মানুষের মৃত্যু হলেও সরকার দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে কৃষকদের উপর রাজস্বের চাপ সৃষ্টি করলে সন্ন্যাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
মূল্যায়ন : ওয়ারেন হেস্টিংস এই বিদ্রোহকে ‘পেশাদারী ডাকাতের উপদ্রব ‘ বলে অভিহিত করলেও উয়িলিয়াম হান্টার সর্বপ্রথম সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে ‘ কৃষক বিদ্রোহ ‘ বলে অভিহিত করেন।
(১১)টিকা লেখা : ওয়াহাবি আন্দোলন। মান ৪ / ৮
অথবা বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের কারণ ও বৈশিষ্ট্য লেখ।
অথবা বাংলাদেশে ওয়াহাবি আন্দোলনে তিতুমীরের অবদান লেখ।
অথবা বারাসাত বিদ্রোহের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: সূচনাঃ আঠারো শতকে মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব আরব দেশে ইসলাম ধর্মের এর জন্য যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা ইতিহাসে ওয়াহাবি আন্দোলন নামে পরিচিত। ভারতে এই আন্দোলন শুরু করেন শাহ ওয়ালিউল্লাহ ,তার পুত্র আজিজ এবং রায়বেরেলি সৈয়দ আহমেদ। বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর। তিতুমীর মূলত বাংলার বারাসাত অঞ্চলকে কেন্দ্র করেই ওয়াহাবি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাই তিতুমীর পরিচালিত ওয়াহাবি আন্দোলনকে ‘ বারাসাত বিদ্রোহ ‘ বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
তিতুমীরের নেতৃত্বে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের কারণ অথবা বাংলায় ওহাবী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য অথবা বারাসাত বিদ্রোহের কারণ অথবা বারাসাত বিদ্রোহের গুরুত্ব :-
(ক) ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণ করা : বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা তিতুমীর ইসলাম ধর্মের শুদ্ধিকরণের জন্য আন্দোলন করেন। তিনি বলেন – একমাত্র আল্লাহকে মান্য করতে হবে।
(খ)কৃষকদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করা : তিতুমীরের অনুগামীরা জমিদার ও ব্রিটিশ সরকারের শাসন অত্যাচারে জর্জরিত ছিল। তিতুমীর তার অনুগামী এবং সাধারন কৃষকদের উপর সরকারের এই অত্যাচারের প্রতিবাদে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন।
(গ ) ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করা : তিতুমীর বাংলায় বিদেশি ব্রিটিশ শাসনের ঘোর বিরোধী ছিলেন। অত্যাচারী জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ,নীলকর সাহেব এবং ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার জন্য তিনি নারকেলবেরিয়া গ্রামে বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে একটি স্বাধীন সরকার গড়ে তোলেন এবং দেশবাসীর মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলেন .
(১২)টীকা লেখ: ফরাজি আন্দোলন।
উত্তর: সূচনা : ভারতে ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন হাজী শরীয়তউল্লাহ। 1820 খ্রিস্টাব্দে তিনি ফরাজী নামে এক ধর্মীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে ধর্ম সংস্কারের কাজে হাত দেন। এর ফলে ভারতে ফরাজি আন্দোলনের সূচনা হয়। ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন হিসেবে ফরাজি আন্দোলন শুরু হলেও আসলে এই আন্দোলন ছিল মূলত কৃষক আন্দোলন।
ফরাজি আন্দোলনের লক্ষ্য বা কারণ :
(ক )ফরাজি কথাটির অর্থ হল ইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য। তাই ফরাজি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ইসলাম ধর্মের পবিত্র আদর্শের রক্ষা করা।
(খ )ফরাজির ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারতকে দারুল চিহ্নিত করেছিল তাই তারা এদেশ থেকে ইংরেজদের বিতারিত করে ভারতকে দার – উল – হারব বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল। তাই তারা এদেশ থেকেইংরেজদের বিতাড়িত করে ভারতকে দাঁড়-উল-ইসলামে পরিণত করতে চেয়েছিল।
(গ ) হাজী শরীয়ত উল্লাহ অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল জমিদারদের উচ্ছেদ করা।
ফরাজি আন্দোলনের বিস্তার : শরীয়তউল্লাহের আদর্শে মুগ্ধ হয়ে অনেক মুসলমান তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। এর ফলে খুব শীঘ্রই ফরাজি আন্দোলন বরিশাল, ঢাকা ময়মনসিংহ এবং ফরিদপুরের লক্ষ লক্ষ মুসলিম চাষী কারিগর ও যুব সম্প্রদায় তার অনুগামী হয়। এরা অত্যাচারী জমিদারদের কর দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
(১৩) দুদুমিয়া স্মরণীয় কেন ? অথবা মোহাম্মদ মহসিন এর নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন।
উত্তরঃ হাজী শরীয়তুল্লাহ মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র মোহাম্মদ মহসীন ওরফে দুদু মিয়া ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন বৈপ্লবিক আকার ধারণ করে। তিনি বলতেন জমি আল্লাহর দান। সুতরাং জমির উপর কর ধার্য করার অধিকার কারো নেই। সুদক্ষ সংগঠক দুদুমিয়া তার প্রভাবিত অঞ্চলে ফরাজ-ই – খিলাফত নামে একটি নতুন প্রশাসন গড়ে তুলেন। তিনি বাংলাদেশকে কয়টি অঞ্চলে বা হলকায় বিভক্ত করেন। প্রতিটি হলকায় একজন করে খলিফা নিযুক্ত করেন, যার দায়িত্ব ছিলো ঐ হলকার জমিদার এবং নীলকরদের অত্যাচার প্রতিহত করা। দুদু মিঞার নেতৃত্বে ফরাজীর জমিদার এবং নীলকরদের উপর আক্রমন করে। এর ফলে তাদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু 1862 খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞার হঠাৎ মৃত্যু হলে ফরাজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে ব্যর্থ হলেও দুদু মিঞার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন সাধারণ জনগণের মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছিল।
(১৪)নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। ,
অথবা নীল বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর: ভূমিকা : উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নীল চাষীদের উপর নীলকর সাহেবদের অমানবিক অত্যাচার ও নির্মম শোষণের বিরুদ্ধে নীলচাষীদের সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনকে ইতিহাসে নীল বিদ্রোহ বলে। 1859 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
নীল বিদ্রোহের কারণ : নীল বিদ্রোহ ছিল বিভিন্ন কারণ সম্মিলিত ফলাফল। এর কারণগুলি হল –
১. নীলকর সাহেবদের অত্যাচার : নীল বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল সাধারণ চাষীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নীল চাষ করানো হত। নীলকরদের অত্যাচার , শোষণ ছিল এই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।
২.উৎকৃষ্ট জমিতে নীলচাষ : নীলকর সাহেবরা সবসময় কৃষকদের উৎকৃষ্ট জমিতেই নীলচাষ করিযে নিতো। কোনো কৃষকেই তাদের খাদ্যশস্য ছেড়েওই উৎকৃষ্ট জমিতে নীলচাষে আগ্রহী ছিল না।
৩. দাদন প্রথা : দাদন শব্দের অর্থ হলো অগ্রিম অর্থলাভ। নীলকর সাহেবরা নীল চাষের জন্য বিঘাপ্রতি দুই টাকা করে দাদন বা অগ্রিম অর্থ কৃষকদের দিত। আর একবার দাদন নিলে শোধ হত না।
৪.পঞ্চম আইন : 1830 খ্রিস্টাব্দে লর্ড বেন্টিঙ্ক পঞ্চম আইন পাশ করেন। এই আইনে বলা হয় দাদন নিয়ে চাষ না করলে তাকে বেআইনি বলে গণ্য করা হবে এবং অপরাধীর জেলহবে .
নীল বিদ্রোহের ফলাফল :
১.নীল কমিশন গঠন : নীল বিদ্রোহের ব্যাপকতা লক্ষ্য করে সরকার বাধ্য হয়ে 1860 খ্রিস্টাব্দে নীল কমিশন গঠন করে। এই কমিশনে নীল চাষ কে নীলচাষীদের ইচ্ছাধীন বলে ঘোষণা করে।
২. কৃষকদের সাফল্য: নীল বিদ্রোহের ফলে কৃষকরা নীল চাষ থেকে রেহাই পায়। নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে কৃষকদের এই সাফল্য বাংলার ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।
৩. রাজনৈতিক আন্দোলন : অমৃতবাজার পত্রিকায় শিশির কুমার ঘোষ লেখেন যে, নীল বিদ্রোহ সর্বপ্রথম ভারতবাসীকে সঙ্ঘবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শিখিয়েছিল এবং এই বিদ্রোহের ফলে লোকেদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
৪.মহাজনদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা : ব্লেয়ার ক্লিন তার ‘ BLUE MUTING’ গল্পে দেখান যে নীলকর সাহেবদের পতনের ফলে নিম্নবর্গের কর্তৃত্ব সুদখোর মহাজনদের হাতে চলে আসে।
৫. শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যোগান: নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র। শিশির কুমার ঘোষ সহ বহু শিক্ষিত ব্যক্তি তাদের লেখনীর মাধ্যমে জনমত গঠনে এগিয়ে এসেছিল। এর ফলে কৃষকদের সঙ্গে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যোগসূত্র গড়ে ওঠে।
৬. জাতীয়তাবাদী মনোবল বৃদ্ধি : নীল বিদ্রোহ ছিল বাঙালির সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন। এই আন্দোলনে জয়লাভ করার ফলে বাঙালি জাতির মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছিল।
মূল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায় নীল বিদ্রোহ বাঙালি সমাজে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বাঙালি শিক্ষিত সম্প্রদায় নীলচাষীদের বিদ্রোহ কে সমর্থন করেছিল। দিগম্বর বিশ্বাস , বিশ্বনাথ সর্দার , বিষ্ণুচরন বিশ্বাস প্রমুখদের নেতৃত্বে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে এক বিস্ফোরক প্রতিবাদ ছিল এই নীল বিদ্রোহ।
(১৫)পাবনা বিদ্রোহ (১৮৭০) সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা ,পাবনা কৃষক বিদ্রোহ (1870 )সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর: সূচনা : 1870 খ্রিস্টাব্দে বাংলার পাবনা উপজেলার কৃষকরা জমিদারদের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ সংঘটিত করেছিল ইতিহাসে তা পাবনা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
পাবনা বিদ্রোহের কারণ: পাবনা কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার পিছনে উল্লেখযোগ্য কারণ গুলি ছিল-
১. অতিরিক্ত খাজনা আদায় : 1859 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার দশম আইন চালু করে। এই আইনে বলা হয় জমিদার কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে পারবে না।কিন্তু পাবনার জমিদার কৃষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে থাকে। এর ফলে এই অঞ্চলের কৃষকেরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
২.জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ : পাবনা অঞ্চলের জমিদার পুরনো কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে নতুন কৃষকদের সেই জমি বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করলে পুরানো কৃষকেরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
৩. মিথ্যা মামলা : পাবনা অঞ্চলের জমিদার কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের জন্য অনেক সময় কৃষকদের মিথ্যা মামলায় জড়িযে দিত। এর ফলে কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
বিদ্রোহের বিস্তার : উপরোক্ত কারণগুলির জন্য পাবনা অঞ্চলের কৃষকেরা ঈশান চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে পাবনা বিদ্রোহ সংঘটিত করে। শম্ভূনাথ পাল এবং ক্ষুদিমোল্লা -এই দুই জন নেতা এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। খুব শীঘ্রই এই বিদ্রোহ ময়মনসিংহ, ঢাকা ফরিদপুর প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
বিদ্রোহের অবসান : ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি এবং বিদ্রোহীদের অপরিকল্পিত কর্মসূচির কারণে এই বিদ্রোহ জনসমর্থন হারায়। ফলে এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।
(১৬) টীকা লেখ পলিগার বিদ্রোহ।
অথবা ,পলিগার কারা ছিল ? এই বিদ্রোহের কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ সূচনা : তামিলনাড়ু অঞ্চলের জমির মালিকদের বলা হতো পলিগার। পলিগার নামটি ইংরেজদের দেওয়া। ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে পলিগাররা 1803 খ্রিস্টাব্দে যে বিদ্রোহ সংঘটিত করে , তা পলিগার বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
পলিগার বিদ্রোহের কারণ: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাচার ,উচ্চ হারে ভূমি রাজস্ব সমগ্র ভারতের মতো দক্ষিণ ভারতের মানুষকেও ব্রিটিশ কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উৎসাহিত করেছিল। 1803 খ্রিস্টাব্দে উচ্চহারে রাজস্ব আদায় করার প্রতিবাদে দক্ষিণ ভারতের তিনেভেলি , কারনল, অনন্তপুর,বেলারী ,কুডাপ্পা প্রভৃতি অঞ্চলের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল। পলিগারদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও এই বিদ্রোহের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যোগ দিয়েছিল।
বিদ্রোহের অবসান: ইংরেজদের আধুনিক অস্ত্র শস্ত্র এবং সেনাবাহিনীর কাছে শেষ পর্যন্ত পলিগাররা পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছিল।
(১৭) পাগলাপন্থী বিদ্রোহ (1824 থেকে 1827 খ্রিস্টাব্দ) সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর : সূচনা : ময়মনসিংহ জেলার শেরপুর পরগনার ফকির করিম শাহ এর পুত্র টিপু শাহ এর নেতৃত্বে 1824 খ্রিস্টাব্দে জমিদার এবং ব্রিটিশ বিরোধী যে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল, ইতিহাসে তা পাগলাপন্থী আন্দোলন নামে পরিচিত।করিম শাহ ছিলেন পাগলাপন্থী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলতেন সব মানুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি সুতরাং সবাই সমান এবং পরস্পরের ভাই। এর ফলে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ তার আন্দোলনে শামিল হয়।
পাগলাপন্থী বিদ্রোহের কারণ: বাংলায় ব্রিটিশ শাসন চালু হলে গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত রীতি নীতি অচল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ব্রিটিশ ও জমিদার শ্রেণী উচ্চ হারে ভূমি রাজস্ব আদায় করতে থাকলে সাধারণ কৃষকদের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। উপরন্তু ইঙ্গ – ব্রহ্ম যুদ্ধের সময় কোম্পানির খরচ বেড়ে গেলে কোম্পানি কৃষকদের উপর অতিরিক্ত খাজনা ধার্য করে। এর ফলে পাগলাপন্থীরা বিদ্রোহ হয়ে উঠে।
বিদ্রোহের বিস্তার : 1813 খ্রিস্টাব্দে ফকির করিম শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র টিপু শাহ পাগলাপন্থীদের নেতা হন। তার নেতৃত্বে পাগলাপন্থী আন্দোলন সরাসরি জমিদার বিরোধী এবং সরকার বিরোধী কৃষক বিদ্রোহের রূপ নেয়। কৃষকেরা জমির খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশ অগ্রাহ্য করতে থাকে। থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়, সরকারি সম্পদ লুটপাট করা হয়। ফলে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে পাগলা পন্থীদের লড়াই শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এই লড়াইয়ে টিপুর বাহিনী পরাজিত হয় এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছে ধরা পড়ে। বিচারে তার 25 বছর জেল হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।
(১৮) টিকা লেখ : রংপুর বিদ্রোহ।
উত্তরঃ সূচনা : গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস দেবী সিংহকে রংপুরের ইজারাদার হিসেবে নিযুক্ত করলে দেবী সিংহ এর অত্যাচার ও শোষণ গোটা রংপুর-দিনাজপুর ছড়িয়ে পড়ে। 1783 সালে নুরুল উদ্দিনের নেতৃত্বে দেবী সিং এর বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ হয়েছিল ,তা রংপুর বিদ্রোহ নামে পরিচিত। কারণ রংপুর বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি হল –
(১) ইজারাদার দেবীসিংহ কৃষকদের উপর চড়া ভূমি রাজস্ব ধার্য করেছিলেন।
(২)কৃষকদের জমি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হত।
(৩)দেবী সিংয়ের সহকারি হরিরামের প্রচন্ড অন্যায় অত্যাচার।
(৪)উচ্চ করের জন্য মহাজনদের কাছে ঋণ গ্রহণ এবং মহাজনদের শোষণ।
(৫) অনাদায়ে ঘরবাড়ি লুট করে নেওয়া।
বিদ্রোহের সূত্রপাত : এইসব কারণে 1783 সালে নূর-উল উদ্দিনের নেতৃত্বে মহাজন ও দেবী সিংহের বিরুদ্ধে কৃষকরা বিদ্রোহ করে। নুরুলউদ্দিন কে নবাব ও দয়ারাম শীল কে নবাবের দেওয়ান বলে ঘোষণা করা হয়। হিন্দু-মুসলিম যৌথভাবে বিদ্রোহ করেন।
বিদ্রোহের প্রসার : রংপুরে বিদ্রোহ শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা কোচবিহার , দিনাজপুর প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
দমন নীতি : বিদ্রোহ দমনে ইংরেজ সরকার সেনাবাহিনী নিযুক্ত করে এবং নির্মম অত্যাচারে এই বিদ্রোহ দমন করে। নুরুদ্দিন আহত হয়ে বন্দী হন ও পরে তার মৃত্যু হয়। এরপর দয়ারাম শীলেরও মৃত্যু হলে 1783 সালের মার্চ মাসে বিদ্রোহ দমন হয়। 1 লক্ষ টাকা ঘুষ এর মাধ্যমে দেবীসিংহ মুক্তি পায়।
গুরুত্ব : বিদ্রোহটি ক্ষুদ্র সময়ের জন্য হলেও এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ইজারাদারির কুফলের প্রকাশ ঘটে। এটি ছিল হিন্দু মুসলিম এর মিলিত বিদ্রোহ। অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ বলেন 1783 সালের রংপুর বিদ্রোহ ছিল একটি সফল অভিযান।
আরো পড়ুনঃ
মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর।