মাধ্যমিক লাস্ট মিনিট সাজেশন ২০২২ || বাংলা রচনা

madhyamik-rachna-last-minute-suggestion-2021

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা তোমরা যারা ২০২২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে parikshaprastuti .org এক্সপার্ট  টিমের  পক্ষ পক্ষ থেকে তোমাদের অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।  আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি মাধ্যমিক  বাংলা রচনার LAST  MINUTE  সাজেশন। আমরা এখানে মাত্র পাঁচটি রচনা নিয়ে আলোচনা করেছি  , যা ২০২২ পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  আশা করছি তোমরা এই পাঁচটি রচনা ভালো করে প্রস্তুতি নিবে, তাহলে একটি রচনা ফাইনাল পরীক্ষায় অবশ্যই কমন পাবে। 

(১) বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

ভূমিকা

প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ ছিল নিতান্তই প্রকৃতি নির্ভর। প্রকৃতির নির্মম ঝড় ঝঞ্ঝায়, প্রবল বন্যা ও ক্ষরায় এবং ভূমিকম্পের বিধবংসী আলোড়নে মানবজীবন ক্ষণে ক্ষণে বিপর্যস্ত হয়েছে। চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহন এ সব কিছুকে সে দৈব নির্ভর বলে মেনে নিয়েছে। আর দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু ভালো মন্দ ঘটেছে সব কিছুর পিছনে দেব-দেবীর সবাকু দৃষ্টির প্রভাব আছে বলে বিশ্বাস করেছে।

কুসংস্কারের স্বরূপ

যে বিশ্বাসের পিছনে কোন যুক্তি নির্ভরতা নেই, কোন তথ্যভিত্তিক প্রমাণাদি নেই , তাকেই আমরা কুসংস্কার বলি। অর্থাৎ যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসই হল কুসংস্কার।

বিজ্ঞানের স্বরুপ

বিজ্ঞান কথাটির অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান। অর্থাৎ কোন কিছু অজানা বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে কোন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহন। সেক্ষেত্রে একই কার্যকরণের ফলে একই ফল হয়। সেটাই অমোঘ সত্য। সেটাই বিজ্ঞান। এখানে আছে শুধু বিচার-বিবেচনা, যুক্তি দিয়ে বিশেষ জ্ঞানে পৌছানো।

কুসংস্কারের বিভিন্ন প্রকাশ

একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে, কম্পিউটার, রোবট ইত্যাদির যুগে পাহাড়ের মত উচু করে দাঁড়িয়ে আছে হাচি, টিকটিকি, পিছু ডাকা আরও কত কী। ভোরের স্বপ্ন নাকি বিফল হয় না, মেয়েদের বাম চোখ নাচলে নাকি শুভ হয় অপরপক্ষে ডান চোখ নাচা নাকি ভারি অপায়া, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া মেয়েদের চুল কাটা ভূতের উপস্থিতি প্রভূতি। এছাড়া এমনকি পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যক্ষ বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সময় ঝাঁট দেখেছিলেন বলে সেদিনটি আর কাজেই যাওয়া হল না, এইরকম অনেক হাজার হাজার নাগপাশে আমাদের দিনক্ষণ বাঁধা।

কুসংস্কার দূরীকরণে আমাদের করণীয়

কুসংস্কার দূরীকরণের প্রধান হাতিয়ার হল বিজ্ঞান। মানুষের বিজ্ঞান চেতনাকে বৃদ্ধি করতে পারলেই এই দূরারোগ্য ব্যধি থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান পরিচালিত বিতর্ক সভা, আলোচনা চক্র, প্রদর্শনাদি অনেক সুফল দিতে পারে।

উপসংহার

বিজ্ঞান চেতনাই পারে মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্তি দিতে। তাই সব কিছুকে যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, বিচার করে গ্রহন করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আর তার জন্য চাই শিক্ষা , সার্বিক শিক্ষা । শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কুসংস্কারের অপসারণসম্ভব।

(2) বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

ভূমিকা:

মানবজীবনে যেকোনো সাফল্যের অগ্রগতিকে আশীর্বাদ বলে গণ্য করা যায়।বহুকাল আগে মানব সভ্যতার আদিযুগে মানুষ ছিল প্রকৃতির দাস।থাকার মতো ঘর ছিলনা।পশু মাংস ফলমূল ছাড়া আর কোনো আহার্য ছিলনা।আত্মরক্ষার অস্ত্র ছিলনা।আগুন জ্বালানোর কৌশল ছিল অজানা।তখন মানুষের কাছে এই বিশাল বিশ্বপ্রকৃতি ছিল রহস্যে ভরা।সেই তখন থেকেই শুরু হয়েছিল মানুষের প্রকৃতিকে জয় করার সাধনা।
আজ মানুষ বিস্ববিজয়ী।মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সমৃদ্ধি সাধনে,তার বৃহত্তর কল্যাণ কর্মে নিরন্তর নিরলস সেবায় অতুলনীয় নজির স্থাপন করেছে বিজ্ঞান।কল্যাণময়ী বিজ্ঞানের এই বিপুল দান সত্বেও দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের পরমাণু বোমার দূর্ধর্ষ ধ্বংসলীলার দিকে তাকিয়ে কল্যাণকামী মানুষের মনে বার বার একটাই প্রশ্ন জেগে উঠেছে “বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ?”

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান:

বিজ্ঞান সাধনার মুলেই রয়েছে মানবকল্যাণ।বিজ্ঞান বলে বলীয়ান মানুষ দুরন্ত নদীর স্রোতকে বশীভূত করে তার অমৃত প্রবাহে উষর মরুকে করেছে শস্য শ্যামলা।সুবিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর দূরতম ঘাটে নামিয়ে দিয়েছে পণ্য সম্ভার।তার চিন্তা ভাবনা,কামনা বাসনা,প্রয়াস প্রচেষ্টা আজ কেবল মর্তসীমার গণ্ডিতেই আবদ্ধ নয়,মহাকাশের নীল সীমান্ত অতিক্রম করে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে প্রসারিত।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সহযোগিতায় সফল হয়েছে সবুজ বিপ্লব।শিল্পক্ষেত্রে যন্ত্র দানবের আসুরিক শক্তির প্রয়োগ সৃষ্টি করেছে অতুল বিভব।কঠিন কঠিন অসুখ সব প্রায় সকল সংক্রামক ব্যাধির নিরাময় সম্ভব হয়েছে।ইন্টারনেট ও দূরদর্শন দূরকে করেছে নিকট, অদৃশ্য কে করেছে দৃশ্যমান।এমন কল্যাণমুখী বিজ্ঞানকে আমরা কোন সংশয়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করবো?বিজ্ঞানের ভালো অথবা মন্দ,অর্থাৎ বিজ্ঞান আমাদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ সবটা নির্ভর করে মানুষ বিজ্ঞানকে কিভাবে প্রয়োগ করছে তার উপর।

বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলার কারণ:

বিজ্ঞান যখন মানব সভ্যতার সুস্থ জীবন যাত্রার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, জীবনের শান্তিকে নষ্ট করে নিয়ে আসে সংঘাত আর মৃত্যু,সুস্থ পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে।একমাত্র তখনই বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করা যায়।
যেহুতু বিজ্ঞান কোনো সচেতন বস্তু নয় তাই নিজের ইচ্ছে মতো কিছু করবার ক্ষমতা নেই তার।বিজ্ঞানকে আমরা যেভাবে ব্যাবহার করবো ঠিক সেই মতোই ফল পাবো।সবকিছুরই ভালো মন্দ দুটো দিক থাকে,বিজ্ঞান এর ব্যতিক্রম কিছু নয়।

উপসংহার:

বিজ্ঞান হল মানবজাতির হাতিয়ার।হাতিয়ার ব্যাবহার করে ভালো বা খারাপ যেকোনো কাজই করা যায়।আসলে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রয়োগকর্তার মনোভাবের উপর।যেমন পরমাণু শক্তি ধ্বংসের কাজে না লাগিয়ে তা মানবকল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে।
তাই বিজ্ঞানের উপর অহেতুক দোষ চাপানো ঠিক নয়।সবার আগে প্রয়োজন মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন।যতদিন পর্যন্ত না মানুষের খারাপ মনোভাব পরিবর্তিত করে বিজ্ঞান বলের অসৎ ব্যাবহার বন্ধ করে বিজ্ঞানকে মঙ্গলময় দেবতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে,ততদিন বিজ্ঞান সম্পর্কে এই প্রশ্নটি থেকেই যাবে যে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?

(৩) দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

ভূমিকা:

আধুনিক জীবনে যুক্তিবােধ ও কার্যকারণ পরম্পরা জ্ঞান থেকেই শুরু হল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। আর সেই জয়যাত্রা থেকে প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে দিল মধ্যযুগীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তি, জগৎ ও জীবনের প্রতি এক আলাদা মমত্ব। এই মমত্ব থেকে দেবতাই সব করতে পারে—এই বােধ অপসৃত হল, তার জায়গায় এল মরজগতের মানুষের অপার মহিমার প্রতি আস্থা। মানুষ আর অযথা দেবতার উপর ভরসা না করে কিম্বা প্রকৃতির উপর শুধুমাত্র আস্থা না করে বিকল্পের সন্ধান করতে লাগল। ফলে ব্যবহারিক জীবনে কিম্বা নিত্য-নৈমিত্তিক কার্যে বিজ্ঞানের অবদানকে গ্রহণ করতে থাকল মানুষ। অবশ্য একথাও ঠিক যে, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান-নির্ভরতা মানুষকে করল কৃত্রিম, বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ কেড়ে নিল মানুষের শান্তি।

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান :

সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত একজন মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞানের অস্তিত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনাে উপায় নেই। প্রাত্যহিক জীবনচর্যা, অফিস-কাছারি, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অবদান। শুধু একটি দিনের জীবনচর্যাকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাব বিজ্ঞানের কি প্রভাব আমাদের উপর বর্তমান। যেমন এলার্ম বেল শুনে ঘুম থেকে উঠতে হয়, তারপর দাঁত মাজার ব্রাশ ও পেস্ট ও বাথরুম করা। ফোয়ারার জলে স্নান, প্রাতরাশ করা, পরিবহনে চেপে কর্মস্থলে যাওয়া, পরিশুদ্ধ জল পান করা, কলিং বেল টিপে ডাকা, এয়ার কণ্ডিশন ঘরে আরাম অনুভব করা ও লিফটের মাধ্যমে বহুতল বাড়িতে ওঠা, দূরভাষে নিত্য নৈমিত্তিক প্রয়ােজনীয় কথা সেরে নেওয়া, পাখার তলায় বসে আরাম করা, অবসর বিনােদনের জন্য রেডিও ও টিভি দেখা, খাদ্য তৈরি করার জন্য প্রেসার কুকার, মাইক্রোওভেন ব্যবহার করা, অসুস্থ হলে কি ধরনের অসুস্থতা নির্ণয় করা—সবক্ষেত্রেই প্রতিদিনের কাজে বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আমরা চলতে পারি না। এমনকি গ্রামের মানুষেরা বৈদ্যুতিক আলাে ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে কাজে লাগাচ্ছে, কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষাবাদ করছে, গ্যাসের উনুন, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি ব্যবহার করছে। অফিস আদালতে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-মেল প্রভৃতি বিজ্ঞানের অবদান—যার দ্বারা দৈনন্দিন জীবনের কাজ সুচারু ও সুন্দর হয়ে উঠছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :

দৈনন্দিন জীবনকে যদি কয়েকটি ক্ষেত্রে ভাগ করে আমরা বিজ্ঞানের অবদান আলােচনা করি, তাহলে উপলব্ধি করতে পারব, বিজ্ঞানকে আমরা জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে হাে কতটা গ্রহণ করেছি। প্রতিদিনের গৃহকার্য থেকে শুরু করে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বাচ্ছন্দ্য, আমােদ-প্রমােদ, কৃষি, শিল্প ও প্রযুক্তি পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে দৈনন্দিন জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে।

গৃহকাজে বিজ্ঞান :

নিত্য-নৈমিত্তিক গৃহকাজে বাড়ির মেয়েরা আগে ঘর ঝটি দিত, মশলা বাটত, পুকুরে কাপড় কাচত, খড় কেটে গরুকে দিত, উনুনে ফুঁ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রান্না-বান্না করত। এখন বিজ্ঞানের কল্যাণে এসবের পরিবর্তে এসেছে ঘর পরিষ্কার করা মেশিন, খড় কাটা মেশিন, ওয়াশিং মেশিন, গ্যাসের উনুন, মিক্সি মেশিন, ফ্রিজ ইত্যাদি।

খাদ্য :

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুষম খাদ্য সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট ধারণা গড়ে উঠেছে পুষ্টি বিজ্ঞানের প্রভাবে। প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে কীভাবে খাদ্য প্রস্তুত করা যায় এবং তাতে খাদ্য কীভাবে পুষ্টিকর হয় তার শিক্ষা গ্রহণ করেছে মানুষ। বিশুদ্ধ জল কীভাবে পান করতে হয়, কীভাবে বাড়তি খাদ্য ফ্রিজে রেখে খাওয়া যায় তার শিক্ষা দিয়েছে বিজ্ঞান।

শিক্ষা :

পুঁথিপােড়ােদের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই একজন শিক্ষার্থী দৈনন্দিন জীবনে ছাপাখানার প্রভাবে বিভিন্ন পুস্তক পেতে পারছে। এমনকি দুষ্প্রাপ্য বইয়ের পৃষ্ঠা জেরক্সের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারছে। গ্রহণ করছে কম্পিউটার, ক্যালকুলেটার, ইন্টারনেট—যার দ্বারা দেশ-বিদেশের কোথায় কি ঘটছে জানতে পারছে। এমনকি বিদেশের কোন বইয়ের পৃষ্ঠায় কি লেখা রয়েছে তা জানা দৈনন্দিন জীবনেই সম্ভব হয়ে উঠেছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এমনকি একজন শিক্ষার্থীকে হ্যারিকেনের আলাের কার্বন- ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করতে হচ্ছে না, তার পরিবর্তে বৈদ্যুতিক আলাে গ্রহণ করতে পারছে।

কৃষি :

দৈনন্দিন জীবনে কৃষিক্ষেত্রে যে সবুজ বিপ্লব ঘটেছে, তাও আধুনিক বিজ্ঞানের অবদান। আমাদের দেশের মতাে বিশাল জনসংখ্যার দেশে সাধারণ মানুষের মুখে আহার তুলে দিতে কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের প্রয়ােজন ছিল। যে দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তর আগে আমাদের সমাজে ছিল, বিজ্ঞানের দানে তার আর সম্ভাবনা নেই। কারণ দৈনন্দিন জীবনে মানুষের আর আহারের অভাব নেই।

উপসংহার :

সুতরাং দৈনন্দিন জীবনের যেদিকেই তাকাই না কেন বিজ্ঞানের প্রভাবকে অস্বীকার করার উপায় কারাের নেই। তবে একথাও ঠিক, অতিমাত্রায় যন্ত্র-নির্ভরতা মানুষকে করে দিচ্ছে যান্ত্রিক। কৃত্রিম মানুষ তাই বিজ্ঞানের শুভশক্তিকে ভুলে গিয়ে অশুভ শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে নিজেদের জীবনে। ফলে মানুষ হয়ে পড়েছে অমানুষ। মানুষের আন্তরিকতা, মানবত্ব আজ আর তেমন করে চোখে পড়ে না—কারণ মানুষ আজ বড় স্বার্থপর। অবশ্য এই স্বার্থপরতার কারণ বিজ্ঞান নয়, বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ।

(৪) আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম

অথবা

আমার স্মরণীয় ব্যক্তি

ভুমিকা :

আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম দেশে-বিদেশে বিদ্রোহী কবি, বুলবুল কবি বলে পরিচিত। তাঁর কাব্যে পরাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মানব মর্যাদা ও সৌন্দর্যচেতনা সমন্বিত হয়েছে।

জন্ম :

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসােল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের কাজী পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।

কেন তিনি আমার প্রিয় :

নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা আমাকে মুগ্ধ ও আকর্ষণ করে। “বল বীর চির উন্নত মম শির’ একথা বলেই তাঁর ‘বিদ্রোহী’ নামক প্রসিদ্ধ কবিতা আরম্ভ। এ কথা কয়টি উচ্চারণ করার সাথে সাথে পাঠক ও শ্রোতা মাত্র যেন অন্য জগতে নীত হয়। আবার দুনিয়ায় অবিচার ও জুলুমবাজির প্রবাহ চলছে। মানুষের পরাধীনতা ও গােলামীর জিঞ্জির আজও ছিন্ন হয়নি। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মক্ষেত্রের অবিচার-অনাচার আজ আকাশপর্শী হয়ে উঠেছে। মূর্তিমান অন্যায় ও অকল্যাণ জগদ্দল পাষাণের মত মানুষের বুকে চেপে আছে। মজলুম মানুষের কান্নার জলে আজ আকাশ-বাতাস আবিল হয়ে ওঠেছে। তার বিরুদ্ধে মানুষ বিদ্রোহ না করে থাকতে পারে না। যতদিন পৃথিবীর বুক হতে পাপ-তাপ দূর না হবে, ততদিন কোন সমাজ-সচেতন মানুষ শান্ত হতে পারে না।
তাই কবির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমাকেও বলতে ইচ্ছা হয়-

“যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রােল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত।
আমি সেই দিন হবো শান্ত।”

নজরুল ইসলামের বিদ্রোহের সুর তার প্রথম দিকের কাব্য রচনার প্রায় সবগুলােতেই অল্প-বিস্তর রয়েছে। তাঁর ‘অগ্নিবীণা, ‘ভাঙ্গার গান’ প্রভৃতি গ্রন্থে এর পরিচয় পাই। আগুনের মত উজ্জ্বল ও প্রােজ্জ্বল এসব বইয়ের কবিতাগুলােতে ভাবের সাথে। ভাষার সংগতি ও মিল অনবদ্য। মানুষের কবি নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাকে কাব্য ও গানে রূপ দান করেছেন। তাঁর রচিত দেশাত্মবােধক গান আজ ভারত উপমহাদেশের মানুষের মুখে মুখে, সভায় সভায় , আসরে আসরে গীত হয়।

মৃত্যু :

ইংরেজি ১৯৪৫ সালের দিকে কবি কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। ১৯৭২ সালে কবিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে আনা হয় এবং নাগিরিকত্ব দেয়া হয়। ২৯শে আগস্ট ১৯৭৬ সালে (১২ই ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি ঢাকায় শেষ নিস্বাশ ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়।

উপসংহার :

কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় শক্তি সাহস এবং চরিত্রের বাস্তব প্রতিমর্তি। আমাদের জাতীয় সমৃদ্ধিতে তার বহু অবদান রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তাঁর নামে ঢাকায় নজরুল ইনস্টিটিউট স্থাপন হয়েছে। আমাদের উচিত তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা।

(৫)আমার প্রিয় ঋতু।

ভূমিকা:

আমাদের দেশ ঋতু বৈচিত্র্যে সৌন্দর্যময়।ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতি বছর বয়ে যায় প্রকৃতির নতুন নতুন পর্যায়। বাংলার প্রকৃতি নবজীবনের সংস্পর্শে বারবার জেগে ওঠে নতুন আনন্দে। ভিন্ন ভিন্ন রূপে ও বৈচিত্র্যে বাংলার প্রত্যেকটি ঋতুই আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়।

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য:

ঋতুদের সবার মধ্যে অগ্রজ হল গ্রীষ্ম। ’নববর্ষের পুণ্যবাসরে’ তার শুভারম্ভ, জৈষ্ঠ্যের শেষ অবধি এর ব্যাপ্তি। জৈষ্ঠের শেষে, আষাঢ় এর প্রথম দিনে আকাশ কালো করে আগল ভেঙেচুরে আসে ‘উন্মাদ বরষা’; জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে তপ্ত ধরিত্রীর বুকে তৃষ্ণার অঞ্জলী হয়ে।
শ্রাবণে তার ‘ধারা ঝরে ঝরঝর’; ভাদ্রের আঙিনায় শরৎ দেয় উকিঝুকি, আশ্বিন মাসের শেষ দিকে হিমেল অঙ্কে রচিত হয় তার বিদায় শয্যা। এবার দীপালীর আলো হাতে হেমন্ত আসে কার্তিকে, অঘ্রানে শীতের ডাক দিয়ে উত্তরা হিমেল বাতাসে তার বিদায়।
কুয়াশার ঘোমটা মাথায় নিয়ে শীত হাজিরা দেয় পৌষে, মাঘেও সে তার হিমেল চাদর বিছিয়ে রাখে বাংলার বুকে। এ হলো সোনার বাংলার পাতাঝরার মরশুম। বৃক্ষরাজি তাদের শরীর থেকে সকল শুকনো পাতা ঝরিয়ে ফেলে নতুন রূপে সেজে ওঠবার নিমিত্ত প্রস্তুত হয়। এ যেনো পুরাতন জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগ করে নতুনের আহ্বান করার মরশুম। এভাবেই হয়তো প্রকৃতি নিজেকে রিক্ত করে রাজার আগমন হেতু সিংহাসন সাজিয়ে দেয় বারবার।

বসন্ত বরণ:

অবশেষে সকল প্রতীক্ষার অবসানে, শীতার্ত প্রকৃতির ঘুম ভাঙিয়ে আসে আমার প্রিয় ঋতু বসন্ত। চৈত্রের শেষ পর্যন্ত তার গৌরবময় অবস্থিতি। এসময় বাংলার প্রকৃতি সত্যই হয়ে ওঠে ঋতুরাজের রঙ্গশালা।

বসন্তে প্রকৃতির রূপ:

বসন্তের রূপ-সৌন্দর্য আমার মনকে হরণ করে সেই ছেলেবেলা থেকেই। শীত যায় বসন্ত আসে, বসন্ত মানুষের কাছে সমাদৃত হয় ঋতুরাজ রূপে। বসন্তের রূপের সত্যিই কোনো অন্ত নেই। সে যেন পৃথিবীতে নবজাতকের প্রতীক। শীতের জীর্ণ সাজ ফেলে দিয়ে আমাদের প্রকৃতি এই সময়ে কি এক আশ্চর্য মায়ার সংস্পর্শে হয়ে ওঠে অপরূপা।
মায়াময় বসন্ত:এই ঋতু বাংলার কৃষিজীবী মানুষের কাছেও বিশেষ গুরুত্ব রাখে।রবি শস্যের ফলনে ভরে ওঠে কৃষিজমি। সরষের হলুদ রঙের ফুলের উজ্জ্বলতা এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে।বাংলার ফলের রাজা আম,এই আমের মুকুল আসে বসন্তে।

উপসংহার:

বসন্তকালের বৈচিত্র্যে বিভোর হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই লাইনগুলি মনে পড়ে যায়। বসন্তের কথা বলতে গিয়ে বার বার প্রকৃতির কথাই মনে আসে। পাখির কলকাকলিতে সকাল শুরু, রাতে কুয়াশার আচ্ছন্নতাহীন জোৎস্না।সব মিলিয়ে এক একটি দিন যেন অপার সৌন্দর্যময় বিশাল সমুদ্রের এক একটি তরঙ্গ।

(৬) পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

ভূমিকা:

পরিবেশ দূষণ আধুনিক বিশ্বের এক অগ্নিগর্ভ বিষয় ও সমস্যা। আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার বিষবাষ্পে দিশেহারা মানুষের এখন একটাই প্রার্থণা _’বাঁচো এবং বাঁচাও’। একসময় মানুষ সবুজ পৃথিবী মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে দিনযাপন করেছে।কিন্তু আজ সে মা অসহায়,সে মা হয়েছে দূষণের অক্টোপাসে বন্দি। আমাদের সকলের সুন্দর পরিবেশ দূষণ হয়েছে মূলত দুই ভাবে:

  1. প্রাকৃতিক দূষণ।
  2. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূষণ।

প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশ দূষণ:

প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশ দূষণে অন্যতম কারণ গুলি হল জনসংখ্যা বৃদ্ধির তাগিদে জল মাটি বায়ুর উপর পড়ছে প্রচন্ড চাহিদার চাপ ফলত প্রকৃতি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে।প্রতিদিন কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ গৃহস্থের বাড়ির আবর্জনা, কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থ,নদী কিংবা হ্রদের জলে মিশে প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়িয়ে চলেছে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূষণ:

মানুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক গুলিও পরিবেশের আলোচ্য বিষয়।সমাজে আজও সুখে দুঃখে উৎসবে আনন্দে মানুষে মানুষে প্রীতির সম্পর্ক থাকলেও সেখানে আন্তরিকতার দিক গুলো ক্রমাগত লোপ পাচ্ছে। রুচিহীন আমোদ প্রমোদ, আশ্লিল সাহিত্য, অশ্লীল ছায়া ছবি আমাদের শিক্ষা সংস্কৃিবিষয়ক পরিবেশকে সম্পূর্ণ গ্রাস করেছে।

পরিবেশ রক্ষার উপায়:

প্রাকৃতিক পরিবেশকে উপযুক্ত ভাবে গড়ে তোলার স্বপ্নে পরিবেশ প্রেমী সচেতন মানুষকে নতুন চেতনালোকের জোয়ারে ভেসে উঠতে হবে। বিদ্যালয়ে শিশুকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।যুব সমাজকে যে ভাবেই হোক ফিরিয়ে আনতে হবে অপসংস্কতির পথ থেকে।
সমাজে শিশু দের লাইবেরী ও পুনাঙ্গ পাঠাগার প্রকল্প বেশি করে গড়ে তুলতে হবে উপযুক্ত দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠনে সমাজের সকলস্থরের মানুষকে দৃঢ় সংকল্প বদ্ধ হতে হবে। বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে পরিবেশ বিদ্যার বিষয় বাধ্যতামূলক ভাবে অন্তর ভুক্ত করতে হবে।

উপসংহার:

জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে ও পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে আমাদের জীবনে নেমে আসবে মৃত্যুর কালো মেঘ।সুস্থ পরিবেশ দেয় সুন্দর জীবনের পরিশ্রুতি তাই প্রকৃতি ,পরিবার,বিদ্যালয়, এমনকি সমাজ – সর্বত্রই পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা দরকার।

 

*******মাধ্যমিক ইতিহাস ২০২৩ প্রথম অধ্যায়ের ৪ নম্বরের প্রশ্ন উত্তরের সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন। 

 

******CLASS XI  ফাইনাল পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নের গ্রামার অংশের ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের সমাধান পেতে এখানে ক্লিক করুন। 

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *