পরীক্ষা প্রস্তুতি :মাধ্যমিক বাংলা নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্ন উত্তর। প্রিয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা তোমরা যারা এবছর ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষাদেবে ,তোমাদের সম্পূর্ণ সিলেবাসের উপর পরীক্ষা হবে। তাই মাধ্যমিক বাংলা ”নদীর বিদ্রোহ ” ছোট গল্প থেকে এবছর পরীক্ষায় আসতে পারে এইরকম অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর (MCQ ,SAQ এবং LAQ ) গুলি এখানে আলোচনা করা হল। তোমার এই প্রশ্ন উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য ভালো করে প্রস্তুতি করলে অবশ্যই ”নদীর বিদ্রোহ ” গল্পাংশ থেকে সমস্ত ধরনের প্রশ্ন উত্তর গুলি তোমরা কমন পাবেই পাবে।
নদীর বিদ্রোহ গল্পের পরিচিতি
শ্রেণী | দশম শ্রেণী (মাধ্যমিক) |
বিষয় | মাধ্যমিক বাংলা |
গল্প | নদীর বিদ্রোহ (Nadir Bidroh) |
লেখক | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
নদীর বিদ্রোহ গল্পের MCQ -১ নম্বরের
1)যে – ট্রেনটি নদেরচাঁদকে পিষে দিয়েছিল , সেটি ছিল—
2)নদীকে বন্দি বলার কারণ –
3)নদেরচাদের মৃত্যু হয়েছিল—
4)নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করত—
5)‘ পারিলেও মানুষ মানুষ কি তাকে তাকে রেহাই দিবে ? – যার কথা বলা হয়েছে , তা হল –
6)নদীর বিদ্রোহের কারণ ছিল—
7)নদেরচাদের উন্মত্ত নদীর কয়েক হাত উঁচুতে বসে থাকা উচিত হয়নি মনে হল , কারণ –
8)‘ বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাদের । ‘ – ভয়ের কারণ ছিল—
9)ব্রিজের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যাওয়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো একটা বেদনাবোধ হল নদেরচাঁদের । কারণ—
10)‘ নদেরচাঁদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল ।’— কারণ –
11)নদেরচাঁদ বসিয়া বসিয়া ভিজিতে লাগিল , উঠিল না । কারণ—
12)ঘণ্টা বিশ্রাম করিয়া মেঘের যেন নূতন শক্তি সঞ্চিত হইয়াছে ‘ ।
13)নদেরচাদের বউকে লেখা চিঠির বিষয়বস্তু ছিল—
14)বউকে নদেরচাঁদ যে – চিঠি লিখেছিল , তার পৃষ্ঠাসংখ্যা –
15)বউকে পাঁচ পাতার চিঠি লিখতে নদেরচাদের সময় লেগেছিল –
16)‘ জলপ্রবাহকে আজ তাহার জীবন্ত মনে হইতেছিল , –
17)নদেরচাঁদ পকেট থেকে যা বের করে স্রোতের মধ্যে ছুড়ে দিল , তা হল –
18)নদেরটাদের ভারি আমোদ বোধ হইতে লাগিল । কারণ—
19)এত উঁচুতে জল উঠে এসেছে যে , মনে হয় ইচ্ছা করলেই বুঝি—
20)নদীর স্রোত ফেনিল আবর্ত রচনা করে –
21)নদেরচাদ রোজ নদীকে দেখে –
22)ব্রিজের ধারকস্তম্ভের উপাদানগুলি হল –
23)নদেরচাদের চার বছরের চেনা নদীর মূর্তিকে আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত মনে হওয়ার কারণ –
24)নদেরচাদ স্টেশনমাস্টারের চাকরি করছে –
25)এতক্ষণ নদেরচাঁদ যে – নদীর কথা ভাবছিল , তা –
26)নদীর জল ছিল –
27)নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গেল , কারণ –
28)নদেরচাদের সঙ্গে নদীর যে সম্পর্ক ছিল , তাকে বলা হয় –
29)দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগতে ভুগতে পরমারীয়া মরে যাওয়ার উপক্রম করলে মানুষ কাঁদে –
30)যে – বছরে নদীর ক্ষীণ স্রোতধারা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল , সেই বছরটি ছিল –
31)দেশের ক্ষীণস্রোতা নির্জীব নদীটিকে নদেরচাঁদ যার মতো মমতা করত –
32)শৈশবে , কৈশোরে ও প্রথম যৌবনে মানুষ –
33)নদীকে ভালোবাসার কৈফিয়ত হিসেবে নদেরচাঁদ যে কারণ দেখায় , সেটি হল—
34)নদীর প্রতি নিজের পাগলামিতে নদেরচাদের—
35)নদীর জন্য নদেরচাদের মায়াকে অস্বাভাবিক বলার কারণ হল –
36)নদেরচাদের বয়স হল –
37)নদেরচাঁদ ছিল একজন –
38)নদেরচাঁদ কল্পনা করার চেষ্টা করতে লাগল –
39)নদেরচাঁদ হেঁটে যাচ্ছিল—
40)দু – দিকে জলে ডুবে গিয়েছিল—
41)নদেরচাঁদ বাঁচবে না –
42)নদেরচাদের ঔৎসুক্য ছিল –
43)নদেরচাঁদ নদীকে দেখেনি—
44)যখন বৃষ্টি থামল , তখন –
45)অবিরত বৃষ্টি হয়েছিল –
46)যে – প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে নদেরচাঁদ রওনা করিয়ে — দিয়েছিল , তার সময় ছিল –
47)নদেরচাঁদ যাকে ডেকে বলল ‘ আমি চললাম হে , সে হল তার –
48)পঁয়তাল্লিশের যে ট্রেনটিকে নদেরচাদ রওনা করিয়ে দিয়েছিল , সেটি ছিল—
49)স্টেশন থেকে নদীর উপরকার ব্রিজের দূরত্ব হল
50)নদীর বিদ্রোহ গল্পটি কোন মূল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ?
নদীর বিদ্রোহ গল্পের অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (vsaq )
১)ধারকস্তত্ত্বের শেষপ্রান্তে বসিয়া সে প্রতিদিন নদীকে দেখে তার প্রতিদিন নদীকে দেখার কারণ কী ?
উত্তরঃ নদেরচাদের নদীর সঙ্গে সখ্য ছোটোবেলার , তার গ্রামে থাকাকালীন । কর্মস্থলে এসেও সে তা ভুলতে পারেনি । তাই নদীকে সে প্রতিদিন না দেখে থাকতে পারত না ।
২)‘ আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল ‘ আজও বলার কারণ কী ?
উত্তরঃ নদীর প্রতি অমোঘ আকর্ষণে নদেরচাঁদ প্রতিদিন নদীকে দেখতে যেত । পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে তাতে ছেদ পড়ে । ষষ্ঠ দিনে বৃষ্টি কমলে সে আবার সেই একই জায়গায় গিয়ে বসে । ‘ আজ ‘ বলতে উক্ত দিনটিকে বোঝানো হয়েছে ।
৩)মনে হয় ইচ্ছা করিলে ‘ — কোন ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ বৃষ্টি শেষে নদীর ধারকস্তম্ভে বসে নদেরচাদ নদীকে দেখছিল । নদীর জলরাশি মাঝেমধ্যে ফুলেফেঁপে উঠছিল । সেই ফুলেফেঁপে ওঠা জলরাশিকে স্পর্শ করার ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে ।
৪)‘ এত উঁচুতে জল উঠিয়া আসয়িাছে যে … ! – জল উঁচুতে উঠে এসেছে কেন ?
উত্তরঃ ক্ষীণস্রোতা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের ধারকস্তম্ভগুলিতে বর্ষার সময় নদীর স্রোত বাধা পায় এবং ফেনিল আবর্ত রচনা করে । তাই জল উঁচুতে উঠে আসে ।
৫)‘ নদেরচাদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল । -নদেরচাঁদের আমোদ বোধ হওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্প অনুসারে ব্রিজের ধারকস্তম্ভে বসে নদেরচাঁদ বারবার স্তম্ভের গায়ে আঘাত খেয়ে বর্ষণপুষ্ট নদীর ফুলে ওঠা জল ছুঁতে চেষ্টা করছিল । এতেই সে আমোদিত হয়ে উঠেছিল ।
৬)” সে স্রোতের মধ্যে ছুড়িয়া দিল ।’— ‘ সে ‘ কে ? সে স্রোতের মধ্যে কী ছুড়ে দিল ?
উত্তরঃ ‘ সে ‘ হল ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ ।
চিরপরিচিত ক্ষীণকায় নদীকে বর্ষার জলে ফুলেফেঁপে উঠতে দেখে উৎফুল্ল নদেরচাঁদ পুরোনো চিঠি সেই উন্মত্ত স্রোতের মধ্যে ছুড়ে দিয়েছিল ।
৭)‘ চিঠি পকেটেই ছিল / – কোন চিঠির কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ বর্ষার সঙ্গে বিরহের সুর মিলিয়ে বাড়ি থেকে বহুদুরে কর্তব্যরত স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ তার বউকে পাঁচ পাতার একটি চিঠি লিখেছিল । এখানে সেই চিঠির কথাই বলা হয়েছে ।
৮)‘ নদেরচাদ একটি সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবিতেছিল ।’— কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ নদেরচাঁদ তার কর্মস্থলের অনতিদূরে চার বছর ধরে একটি ক্ষীণস্রোতা নদীকে দেখে আসছে । টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে সেই নদী ফুলেফেঁপে উঠলেও দাঁড়িয়ে সে সেই ক্ষীণস্রোতা নদীটির কথাই ভাবছিল ।
৯)‘ চোখের পলকে কোথায় যে অদৃশ্য হইয়া গেল চিঠিখানি ! – চিঠির কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ বর্ষণপুষ্ট জলে ক্ষীণস্রোতা নদীর উন্মত্ততা লক্ষ করে নদেরচাদ তার প্রিয়ার চিঠি স্রোতের মধ্যে ফেলে দেয় । এখানে সেই চিঠির কথাই বলা হয়েছে ।
১০)‘ উন্মত্ততার জন্যই জলপ্রবাহকে আজ তাহার জীবন্ত মনে হইতেছিল , — এই উম্মত্ততার পরিচয় দাও ।
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গঙ্গে নদেরচাঁদ শীর্ণকায় যে – নদীকে দেখে অভ্যস্ত ছিল তা বর্ষণপুষ্ট হয়ে প্রতিনিয়ত উম্মত্ত জলপ্রবাহের আবর্ত রচনা করায় সেই জলরাশিকে জীবন্ত বলে মনে হয়েছিল ।
১১)‘ তারপর সে অতিকষ্টে উঠিয়া দাঁড়াইল ।’— ‘ তারপর বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তরঃ নদী আর বৃষ্টির শব্দ মিলেমিশে নদেরচাঁদকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছিল । এমন সময় ব্রিজের ওপর দিয়ে সশব্দে একটা ট্রেন চলে যায় । উদ্ধৃতাংশে ‘ তারপর ‘ বলতে এর পরকেই বুঝিয়েছে ।
১২) বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাদের / – নদের চাঁদ ভয় পেল কেন ?
উত্তরঃ বর্ষার জলে উদ্বৃত্ত নদীর রোষে – ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা রূপ দেখে দিশেহারা নদেরচাদের ভয় হয়েছিল নদীর আর্তনাদি জলরাশি যেন গোটা ব্রিজটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ।
১৩)‘ তাহার উচিত হয় নাই।- তার কী করা উচিত হয়নি ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদের চাঁদের ক্ষোভে উন্মত্ত নদীর আর্তনাদি জলরাশির কয়েক হাত উঁচুতে ধারকস্তম্ভের ওপর এমন নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকা উচিত হয়নি ।
১৪)‘ কিন্তু সে চাঞ্চল্য যেন ছিল পরিপূর্ণতার আনন্দের প্রকাশ।— কোন্ পরিপূর্ণতার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ নদীর পরিপূর্ণতা তার জলরাশির উচ্ছলতায় । নদেরচাদ বর্ষার জলে পুষ্ট নদীর যে চাঞ্চল্য লক্ষ করেছিল , সেই পরিপূর্ণতার কথা এক্ষেত্রে বলা হয়েছে।
১৫)” আজ যেন সেই নদী খেপিয়ে গিয়াছে , কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের নায়ক নদেরচাদের কর্মস্থল থেকে মাইলখানেক দুরে তার প্রিয় নদীটি অবস্থিত ছিল । এখানে সেই নদীটির কথা বলা হয়েছে ।
১৬)‘ আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে— ‘ আজ ‘ বলতে কোন দিনের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে ‘ আজ ‘ বলতে পাঁচদিনের অঝোরধারায় বৃষ্টির পর যেদিন নদেরচাঁদ প্রথম নদীকে দেখতে গিয়েছিল , সেই দিনটির কথা বলা হয়েছে ।
১৭)“ আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে , — নদীর খেপে যাওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে সারাবছর জলাভাবে ভুগতে থাকা ক্ষীণস্রোতা নদীটি একটানা পাঁচদিনের বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে উঠেছিল । এটাই নদীর খেপে যাওয়ার কারণ ।
১৮)‘ সে প্রতিদিন নদীকে দেখে । – ‘ সে ’ কে ? সে কোন্ নদীকে কেন দ্যাখে ?
উত্তরঃ ‘ সে ’ হল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদ । ” নদেরচাঁদ তার কর্মক্ষেত্র থেকে মাইলখানেক দূরের নদীটিকে প্রতিদিন দেখত । কারণ এমনই এক নদীর ধারে তার শৈশব কেটেছিল ।
১৯)‘ আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল / – কে , কোথায় প্রশ্ন গিয়ে বসল ?
উত্তরঃ স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের তার কাজের অবসরে কর্মক্ষেত্র থেকে মাইলখানেক দূরে নদীর উপরকার ব্রিজের মাঝামাঝি ধারকস্তম্ভের শেষ প্রান্তে এসে বসল ।
২০)ধারকস্তত্ত্বের শেষপ্রান্তে বসিয়া সে প্রতিদিন নদীকে দেখে তার প্রতিদিন নদীকে দেখার কারণ কী ?
উত্তরঃ নদেরচাদের নদীর সঙ্গে সখ্য ছোটোবেলার , তার গ্রামে থাকাকালীন । কর্মস্থলে এসেও সে তা ভুলতে পারেনি । তাই নদীকে সে প্রতিদিন না দেখে থাকতে পারত না ।
নদীর বিদ্রোহ গল্পের ছোট প্রশ্ন উত্তর (saq )
১)” ত্রিশ বছর বয়সে নদীর জন্য নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক / —এ কথা বলার কারণ কী ছিল ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহে ‘ নদেরচাদের নদীকে নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের ঔৎসুক্যবোধ অনেকটা ছেলেমানুষের মতো । ত্রিশ বছর বয়সে নদীকে নিয়ে নদেরচাদের এতটা মায়া একটু অস্বাভাবিকই লাগে ।
২)‘ কেবল বয়সের জন্য নয় , বয়স ছাড়া আর কোন কোন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে ?
উত্তরঃ নদেরচাঁদ একজন স্টেশনমাস্টার । মেল , প্যাসেঞ্জার , মালগাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা তার কাজ । যন্ত্রের গতি নির্ধারণ যার কাজ , তার এতটা আবেগপ্রবণ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক লক্ষণ নয় ।
৩)‘ নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে ‘। কোন পাগলামির কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ নদেরচাঁদের নদী সম্পর্কে একটা শিশুসুলভ উন্মাদনা ছিল । নদীর সামান্য অদর্শনে সে অধৈর্য হত । অন্যের কাছে এটা পাগলামি মনে হলেও , সে নিজে এই পাগলামিতে আনন্দ পেত ।
৪)‘ নিজেকে কেবল বুঝাইতে পারে না ‘। নিজেকে কী বোঝাতে পারে না নদেরচাঁদ ?
উত্তরঃ প্রাপ্তবয়স্ক নদেরচাদ ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত । তার নদীকে দেখার মতো শিশুসুলভ ঔৎসুক্য সাজে না – এ কথা সে মনকে বোঝাতে পারে না ।
৫)‘ অস্বাভাবিক হোক –কোন্ বিষয়কে অস্বাভাবিক বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ নদেরচাদ স্টেশনমাস্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিল । বর্ষণপুষ্ট নদীকে একটানা পাঁচ দিন না দেখার জন্য তার মধ্যে যে শিশুসুলভ উন্মত্ততা দেখা দিয়েছিল সেটাই অস্বাভাবিক ।
৬)নদীকে ভালোবাসার পিছনে নদেরচাদের কী কৈফিয়ত ছিল ?
উত্তরঃ নদেরচাদের নদীর প্রতি আকর্ষণ , শিশুসুলভ পাগলামি হলেও এর পিছনে তার একটি নিজস্ব যুক্তি ছিল । কারণ তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নদীর ধারেই । তাই তার নদীর প্রতি এই ভালোবাসা আবাল্য ।
৭)কিন্তু শৈশবে , কৈশোরে , আর প্রথম যৌবনে বড়োছোটোর হিসাব কে করে ? ‘ — উল্লিখিত সময়ে বড়ো ছোটোর হিসাব না করার কারণ কী ?
উত্তরঃ শৈশব , কৈশোর ও প্রথম যৌবনে মানুষ বুদ্ধি – বিবেচনার পরিবর্তে ব্যক্তিমনের আবেগ – আকাঙ্ক্ষাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় । তাই তার কাছে তখন ছোটো – বড়ো , ভালোমন্দের চেয়ে বেশি মূল্যবান নিজের ভালোলাগা ।
৮)সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল ; — তার কেঁদে ফেলার কারণ কী ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পের নায়ক নদেরচাদের ছোটোবেলা থেকেই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির সঙ্গে ভারি বন্ধুত্ব । একবার অনাবৃষ্টিতে নদীর জলস্রোত প্রায় শুকিয়ে যেতে বসায় সে কেঁদে ফেলেছিল ।
৯)‘ অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পাইয়াছিল।— কাকে , কেন ‘ অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়া ‘ বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ নদেরচাঁদ যে – নদীর ধারে জন্মেছে , বড়ো হয়েছে , যাকে ভালোবেসেছে , সেই নদীটি বর্ষণপুষ্ট নদীর মতো বড়ো ছিল না । ক্ষীণস্রোতা নদীটি নদেরচাদের কাছে ছিল অসুস্থ , দুর্বল আত্মীয়ার মতো ।
১০)‘ নদীটি অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পাইয়াছিল । নদীটির এই মমতা পাওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ নদেরচাদের আবাল্যের সঙ্গী নদীটির স্রোতধারা ছিল অতি ক্ষীণ । তাই অসুস্থ , দুর্বল আত্মীয়ের প্রতি মানুষের যেমন সহানুভূতি ও মমতা থাকে , নদেরচাদের ও নদীটির প্রতি তাই ছিল ।
১১)‘ মানুষ যেমন কাঁদে কে , কেন কেঁদেছিল ?
উত্তরঃ পরমাত্মীয়কে দুরারোগ্য রোগে মারা যেতে দেখলে মানুষ যেমন কাঁদে , নদেরচাঁদও অনাবৃষ্টিতে তার গ্রামের ক্ষীণস্রোতা নদীটিকে শুকিয়ে যেতে দেখে তেমনি কেঁদে ফেলেছিল ।
১২)‘ চিরদিন নদীকে সে ভালোবাসিয়াছে । নদীকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে নদেরচাঁদের চরিত্রের কোন দিকটি প্রকাশিত ?
উত্তরঃ ত্রিশ বছর বয়সি নদেরচাদের নদীর প্রতি তীব্র ভালোবাসা অস্বাভাবিক হলেও নদেরচাঁদ প্রকৃতিপ্রেমী ও আবেগপ্রবণ । তাই সংবেদনশীল শিল্পী চরিত্রদের মতোই সে নদীকে ভালোবেসেছে ।
১৩)নদেরচাদ স্তম্ভিত হইয়া গেল । — নদেরচাঁদ কেন স্তম্ভিত হয়ে গেল ?
উত্তরঃ পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পরে নদীর ধারে গিয়ে আপাতশাস্ত নদীর উন্মত্ত রূপ দেখে নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ।
১৪‘ প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াই … —‘প্রথমবার ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্প অনুসারে , ‘ প্রথমবার ‘ বলতে পাঁচ দিন মুশলধারে বৃষ্টির পর নদেরচাঁদ প্রথম যখন নদীকে দেখে ও তার উন্মত্ততা অনুভব করে , সে কথাই বোঝানো হয়েছে ।
১৫)‘ আমি চললাম হে ! – কে , কাকে এ কথা বলেছে ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পের স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ চারটে পঁয়তাল্লিশের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি রওনা করিয়ে , তার সহকারীকে কর্তব্যভার বোঝানোর সময় তাকে এ কথা বলেছে ।
১৬)‘ লোভটা সে সামলাইতে পারিল না , ‘ — কোন্ লোভের কথা বলা হয়েছ ?
উত্তরঃ এখানে ‘ লোভ ’ বলতে উন্মত্ত নদীর সঙ্গে নদেরচাদের খেলার লোভের কথা বলা হয়েছে । সেই লোভের বশবর্তী হয়ে নদেরচাঁদ স্ত্রীকে লেখা চিঠির পাতাগুলো একের পর এক নদীতে ছুড়ে ফেলেছিল ।
১৭)‘ উঠল না— কে , কোথা থেকে উঠল না ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে স্ফীতকায় জলরাশির সঙ্গে খেলতে খেলতে আত্মহারা নদেরচাঁদ প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকলেও এক অজানা আত্মিক টানে নদীর ধার ছেড়ে উঠল না ।
১৮)‘ নদেরচাদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল , ‘ — নদেরচাদের মন থেকে আমোদ মিলিয়ে গেল কেন ?
উত্তরঃ ব্রিজের ধারকস্তম্ভের ওপর বসে উত্তাল নদী থেকে উঠে আসা শব্দের সঙ্গে বৃষ্টির শব্দ মিশে তৈরি হওয়া শব্দ শুনতে শুনতে নদেরচাদের মন থেকে ছেলেমানুষি আমোদ মিলিয়ে গিয়েছিল ।
১৯)‘ কিছুক্ষণ নদীকে না দেখিলে সে বাঁচিবে না । কথা বলার কারণ কী ?
উত্তরঃ এ কথার মধ্য দিয়ে নদেরচাদের সঙ্গে নদীর গভীর বন্ধুত্বকে বোঝানো হয়েছে।একটানা পাঁচ দিন বৃষ্টির পরে নদীকে দেখার জন্য তার মধ্যেকার আকুলতাকে প্রকাশ করছে এই উদ্ধৃতি ।
২০)‘ রেলের উঁচু বাঁধ ধরিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে … –হাঁটতে হাঁটতে নদেরচাঁদ কী ভাবছিল ?
উত্তরঃ পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ফলে নদেরচাঁদের নদী দেখা হয়নি । বৃষ্টি থামলে নদীকে দেখতে যাওয়ার সময় দু – দিকের মাঠঘাট দেখে সে বর্ষণ – পুষ্ট নদীর পরিপূর্ণ রূপের কথা ভাবছিল ।
নদীর বিদ্রোহ গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর (laq)
১)নদেরচাদের চরিত্রটি আলোচনা করো ।
উত্তরঃ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পটি নদীপ্রেমিক নদেরচাদের তীব্র আবেগ ও আকুলতাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে । গল্পের নিয়ন্ত্রক বা কেন্দ্রীয় চরিত্র যে সে . এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।
নদেরচাঁদের চরিত্রের যে – দিকটি সবচেয়ে প্রকট , তা হল নদীর প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ । নদীর ধারে বড়ো হয়ে ওঠার দরুন নদীর প্রতি তার টান থাকা স্বাভাবিক । তার গ্রামের ক্ষীণকায়া মীর প্রতি তীব্র নদীটিকে সে ভালোবাসত এক অসুস্থ আত্মীয়ার আকর্ষণ মতোই । এমনকী তার কর্মস্থলের কাছের নদীটিকে প্রতিদিন না – দেখেও সে থাকতে পারত না । নদীর প্রতি তার এই টান যে অস্বাভাবিক , তা বুঝলেও এই পাগলামিটা সে উপভোগ করত । আকোপ্রবণতা অস্থিরতা নদেরচাদের নদীর প্রতি ভালোবাসা , বর্ষায় স্ত্রীর বিরহে কাতর হয়ে ওঠা— এগুলি আবেগপ্রবণতার লক্ষণ । আবার বিরহে কাতর হয়ে স্ত্রীকে লেখা চিঠি খেলার ছলে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেয় নদেরচাঁদ । এ থেকে বোঝা যায় , তার মধ্যে কাজ করে চলে এক অস্থিরতা । তাই অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে পাঁচদিন নদীর কাছে যেতে না পেরে ছটফট করে সে । নদীই যেন নিঃসঙ্গ নদেরচাঁদের প্রেয়সীতে রূপান্তরিত হয় ।
সংবেদনশীলতা নদেরচাঁদ নদীর ভাষা বুঝত । নদীর ভয়ংকরী রূপ দেখে সে বুঝতে পেরেছিল , সভ্যতার নামে প্রকৃতিকে পদানত করলে শেষপর্যন্ত তা ধ্বংসই ডেকে আনবে । তার এই উপলব্ধি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সংবেদনশীলতারই পরিচয় । তাই সে যে ব্রিজ নিয়ে গর্ব করেছিল , তার প্রয়োজনীয়তা বিষয়েই সংশয় প্রকাশ করে । নদেরচাঁদ যতই আবেগপ্রবণ হোক , নদীর প্রতি তার যতই টান থাকুক , তা কিন্তু কখনোই তার কর্তব্য পালনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না । স্টেশনমাস্টার হিসেবে সে তার দায়িত্ববোধ দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করে । এইসব মিলিয়ে নদেরচাঁদ একটি ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে । গল্পের শেষে তার নিয়তি – নির্দিষ্ট মৃত্যু যেন মানুষের নিজের তৈরি যন্ত্রসভ্যতার হাতে অসহায় ও করুণ পরিণতির এক আশ্চর্য ভাষ্য হয়ে ওঠে ।
২)পাঁচ দিন একটানা বৃষ্টিতে নদীকে দেখতে না – পেয়ে উতলা নদেরচাঁদের নদীকে দেখতে যাওয়ার পথে কেমন মনোভাব ছিল ব্যক্ত করো ।
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাদের নদীর সঙ্গে ভীষণ বন্ধুত্ব বলেই , নদীর সামান্য অদর্শনেই সে অস্থির হয়ে উঠত । কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ও বয়সজনিত কারণে , তার এহেন আচরণ ছেলেমানুষির পর্যায়ে পড়ে , এ কথাও সে স্বীকার করত । পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য নদীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়নি , তাই নদীকে দর্শনের জন্য সে উদ্গ্রীব ছিল । সে – কারণেই বিকেলে বৃষ্টি থামতেই সে নদীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল । যাওয়ার সময় তার মনে নানান ভাবের উদয় হয় । পাঁচ দিনের অবিশ্রান্ত বর্ষায় নদী কোন্ অপরূপ সাজে সেজেছে তা দেখার জন্য সে উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছিল । রেলের বাঁধ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নদেরচাঁদ দু – দিকের জলে ভরা মাঠঘাট দেখে , বর্ষণপুষ্ট নদীটির রূপ মনে মনে কল্পনা করার চেষ্টা করল । নদীকে নিয়ে এই পাগলামিতে তার একটু আনন্দই হয়েছিল । নদীর তীরে বড়ো হয়ে ওঠা নদেরচাঁদ নদীর প্রতি তার এই ভালোবাসার কৈফিয়তও তৈরি রাখত । কারণ সে জানত , তার এই আচরণ সকলে স্বাভাবিকভাবে নেবে না । নদীকে দেখতে যাওয়ার পথে সবসময় তার মনে এইসব চিন্তাভাবনাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছিল ।
৩)নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে । কার পাগলামির কথা বলা হয়েছে ? গল্প অনুসরণে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির পাগলামির পরিচয় দাও ।
উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ পাগলামি করা ব্যক্তির পরিচয় গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাদের নদীর জন্য পাগলামির কথা বলা হয়েছে ।
গ্রামবাংলার এক নদীর ধারে নদেরচাদের জন্ম এবং বড়ো হয়ে ওঠা । তাই ছোটোবেলা থেকেই নদী তার বন্ধু । এমনকি কর্মসূত্রে সে যে জায়গায় আসে সেখানেও একটি নদী রয়েছে । ফলে খুব সহজেই সেই নদীও অল্পদিনের মধ্যেই নদেরচাঁদের আপন হয়ে ওঠে । নদীটিকে একটি দিনের জন্যও না – দেখে সে থাকতে পারে না । গ্রীষ্মকালে শুকনো , শীর্ণ ও ক্ষীণকায়া নদীর জন্য সে বেদনা অনুভব করে । আবার বর্ষার জল পেয়ে নদী ফুলেফেঁপে উঠলে নদেরচাঁদের মনেও যেন খুশির জোয়ার আসে । নদীর কাছে সে উজাড় করে দেয় মনের যত কথা । নদী ও নদেরচাঁদ যেন পরস্পরের সুখ – দুঃখের অংশীদার । নদীকে বাঁধ দিয়ে বাঁধলে কষ্ট হয় নদেরচাঁদের । খেলার ছলে নিজের স্ত্রীকে লেখা চিঠির পাতাগুলো সে অনায়াসে ছুড়ে দিতে পারে নদীর জলের জটিল আবর্তে । নদীর প্রতি তার এই টান যে স্বাভাবিক নয় , তা সে বুঝতে পারে , কিন্তু নিজেকে সংযত করতে পারে না , বরং উপভোগ করে নিজের এই পাগলামিকে ।
৪)আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল / – কোথায় গিয়ে বসার কথা বলা হয়েছে ? সেখানে বসে নদেরচাঁদ নদীর কোন রূপ দর্শন করেছিল ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পের নায়ক নদেরচাঁদ বসার স্থানের সম্পর্কে প্রতিদিন নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের মাঝামাঝি ইট , সুরকি আর সিমেন্টের গাঁথা ধারকস্তত্ত্বের শেষপ্রান্তে বসে নদীকে প্রত্যক্ষ করত । সেদিনও সে সেখানেই গিয়ে বসেছিল ।
পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য নদেরচাদের নদীদর্শন সাময়িক স্থাগিত থাকলেও , মনে মনে সে নদীকে দেখার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছিল । তাই বৃষ্টি বন্ধ হতেই সে উদ্গ্রীব হয়ে তার নদী দেখার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে সেখানে বসে নদেরচাদের দর্শন করা নদীর রূপ পৌঁছেছিল । কিন্তু নদী যেন আজ খেপে গিয়েছে । তার গাঢ় পঙ্কিল জল ফুলেফেঁপে উচ্ছ্বসিত হয়ে ছুটে চলেছে । নদেরচাঁদ তার ক্ষীণস্রোত নদীটির কথা ভাবছিল । তাই তার চার বছরের চেনা নদীটি আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত মনে হল । ব্রিজের মাঝামাঝি ধারকস্তম্ভের ওপর বসে সে দেখল নদীর স্রোত সেই ধারকস্তম্ভে বাধা পেয়ে ফেনিল আবর্ত রচনা করে উপরের দিকে উঠে আসছে । দেখে মনে হয় যেন হাত বাড়িয়ে জলকে স্পর্শ করা যাবে । নদেরচাদের ভারী আমোদ হল । নদীর সঙ্গে খেলার লোভে সে পকেট থেকে স্ত্রীকে লেখা চিঠি বের করে ভাসিয়ে দিতে থাকে । কিন্তু পুনরায় মুশলধারে বৃষ্টি নামায় তার এই উল্লাস আতঙ্কে পরিণত হয় ।
৫) নদেরচাদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল । এবং ‘ নদেরচাদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল । —মাত্র একটি অনুচ্ছেদের ব্যবধানে লেখকের এই দু – রকম বিবৃতির পিছনে যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করো ।
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে নদেরচাদ নদীকে না – দেখে একটি দিনও থাকতে পারে না । পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর তাই সে নদীকে দেখার জন্য বেরিয়ে পড়ে । ব্রিজের কাছে এসে নদীকে দেখে সে স্তম্ভিত হয়ে যায় । বৃষ্টির পর নদী যেন খেপে গেছে । নদেরচাদ এতক্ষণ ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবছিল , তাই চেনা নদীটির মূর্তি তার আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত লাগছিল । প্রতিদিনের অভ্যাসমতো সে ধারবস্তত্ত্বের শেষ প্রান্তে বসে নদীকে দেখল । নদীর স্রোত সেই স্তস্তে আঘাত পেয়ে আবর্তাকারে ফেনায়িত হয়ে উপরের দিকে উঠে আসছে । তার মনে হল ইচ্ছা করলেই স্পর্শ করা যাবে । আমোদিত নদেরচাদ খেলার ছলে স্ত্রীকে লেখা চিঠি স্রোতের মধ্যে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছিল । ঘণ্টা তিনেক পর আবার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল । সেই বৃষ্টির শব্দ আর নদীর জলের গর্জন মিলেমিশে তাকে আতঙ্কিত ও অবসন্ন করে তুলল , ক্রমে তার ছেলেমানুষি উধাও হয়ে গেল । তার মনে হল নদী যে – কোনো সময় ব্রিজ ও বাঁধ ভেঙে নিজেকে মুক্ত করতে পারে । প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে মানবসভ্যতার যান্ত্রিক উন্নয়নকে নদী যেন ধ্বংস করতে চায় । সময়ের পরিবর্তনে পরিস্থিতির বদলের সম্ভাবনাকে সমর্থন করে ; লেখক স্বল্প ব্যবধানে উক্তি দুটি করতে বাধ্য হয়েছেন ।
৬)প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল । — প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করে নদেরচাঁদ কী দেখেছিল ? নদেরচাদের স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর নদীকে দেখার কথা বলতে গিয়ে লেখক ‘ প্রথমবার ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন । একটানা বৃষ্টির জন্য পাঁচ দিন নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের দেখা হয়নি । বৃষ্টি সাময়িকভাবে থামতে , সে উন্মত্তের মতো নদীকে দেখতে ছোটে । বর্ষার শুরুতে যে – শীর্ণ নদীকে নদেরচাঁদ কল্লোলিত হয়ে উঠতে দেখেছিল , অতিবর্ষণের পর তার রূপটি কেমন দাঁড়িয়েছে তা দেখবার জন্য সে উৎসুক হয়ে পড়ে । কিন্তু নদীর ধারে গিয়ে সে স্তম্ভিত হয়ে যায় । পাঁচদিনের অতিবর্ষণে নদী এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল । নদীর জলস্ফীতি ব্রিজের ধারকস্তম্ভে আঘাত পেয়ে আবর্ত রচনা করে ফেনায়িত হয়ে অনেকটা ওপরে উঠে আসছিল । নদীর এই উন্মত্ত রুপ তাকে অবাক করেছিল ।
নদেরচাঁদ প্রথমবার নদীর বর্ষণপুস্টরূপ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল । পাঁচদিন আগেও বর্ষার জলে পরিপুষ্ট নদীর জলস্রোতে যে চাঞ্চল্য সে দেখে গিয়েছিল , সে চাঞ্চল্য ছিল পরিপূর্ণতার । আজ সেই নদী খেপে গিয়ে গাঢ় পঙ্কিল জল ফুলেফেঁপে ফেনায়িত হয়ে ছুটে চলেছে । তাই তার চার বছরের চেনা নদীর মূর্তিকে নদেরচাদের যেন আরও বেশি ভয়ংকর , আরও বেশি অপরিচিত বলে মনে হয় ।
৭) ‘ নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে । —নদীর বিদ্রোহের কারণ কী ছিল ? ‘ সে ’ কীভাবে তা বুঝতে পেরেছিল ?
উত্তরঃ ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে আমরা দেখি ছোটোবেলা থেকেই নদেরচাদের সমস্ত কিছু নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে । নদীর ভাষা সে বুঝবে এটাই স্বাভাবিক । বর্ষণপুষ্ট উত্তাল নদীকে সে ক্ষিপ্ত ও বিক্ষুব্ধ বলে চিনতে পেরেছিল । মানুষের তৈরি বাঁধ এবং ব্রিজ নদীকে শীর্ণকায় করে তোলায় নদী যে তাতে ক্ষুব্ধ , নদীর বিদ্রোহের , কারণ নদেরচাঁদ তার সংবেদনশীল মন দিয়ে তা উপলব্ধি করেছিল । মানুষের প্রযুক্তির কাছে অবদমিত প্রকৃতি যেন নদীর মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে চাইছে । নদেরচাঁদ বুঝেছিল , প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবিচারই মানবসভ্যতাকে একদিন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে ।
নদেরচাঁদ সংবেদনশীল মানুষ । নদীকে নিয়ে তার কৌতূহল পাগলামির পর্যায়ের হলেও নদীকে নিয়ে তার অন্তর্দৃষ্টি তাকে অনন্যপূর্ব সিদ্ধান্তে উপনীত করে । প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান নদেরচাদ যেভাবে দাম্ভিক মানুষ প্রকৃতিকে বশে আনতে নদীর বুকে ব্রিজ বানিয়েছে , বাঁধ বেঁধেছে । এই অন্যায়ের প্রতিবাদ যেন ধ্বনিত হয় নদীর গর্জনে , সব কিছুকে ভেঙে ফেলার চেষ্টায় । নদীর এই কাজকে যেন সমর্থন করে চলে প্রকৃতির বৃষ্টি , মেঘ ও অন্ধকার । প্রকৃতির এইসব আয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে নদীর বিদ্রোহকে নদেরচাঁদ অন্তরাত্মা দিয়ে অনুভব করেছে ।