মাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা সাজেশন ২০২৪

মাধ্যমিক বাংলা রচনা ২০২৪

পরীক্ষা প্রস্তুতি : মাধ্যমিক বাংলা  প্রবন্ধ রচনা সাজেশন ২০২৪ প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা তোমরা যারা ২০২৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে parikshaprastuti .org এক্সপার্ট  টিমের  পক্ষ পক্ষ থেকে তোমাদের অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।  আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি মাধ্যমিক  বাংলা প্রবন্ধ রচনার   সাজেশন। আমরা এখানে মাত্র পাঁচটি রচনা  নিয়ে আলোচনা করেছি  , যা ২০২৪ সালের  পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  আশা করছি তোমরা এই পাঁচটি রচনা ভালো করে প্রস্তুতি নিবে, তাহলে একটি রচনা ফাইনাল পরীক্ষায় অবশ্যই কমন পাবে। আমাদের এই পেজে আরো অনেক সাজেশন দেওয়া হবে।  বলো লাগলে আমাদের এই WWW.PARIKSHAPRASTUTI .ORG ওয়েব পেজটিকে বন্ধুদের মাঝে অবশ্যই  শেয়ার করবে। মাধ্যমিক বাংলা  রচনা সাজেশন ২০২৪

মাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা সাজেশন ২০২৪

(১)দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান   /  প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান 

উত্তরঃ ভূমিকা:পৃথিবীতে আবির্ভূত আদিম মানুষ অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে প্রথম সন্ধান করে খাদ্যের। তারপর শুরু হয় তার বোধ ও চাহিদার বিবর্তন। বিশেষ প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রকৃতির নানা বস্তুকে নিজের প্রয়োজনীয় দ্রব্যে পরিণত করার প্রয়াসেই বিজ্ঞানের জন্ম। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অধ্যবসায়ে পরিচালিত বিজ্ঞানের বিজয়রথ আজ সর্বত্রগামী।

প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞানের অবদান:  যে বিজ্ঞান সৃষ্টি হয়েছিল মানুষের আত্মরক্ষা এবং আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে, আজ তা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নিত্যসঙ্গী। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান আজ পরীক্ষিত সত্য। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি উপকরণ, প্রতিটি উপাদান আজ মানুষ বিজ্ঞানের আশীর্বাদ হিসেবে লাভ করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দিন আরম্ভ করা থেকে পুনরায় শয্যাগ্রহণ পর্যন্ত জীবনযাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপ আজ বিজ্ঞান-নিয়ন্ত্রিত। বলা যায়, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকলে এখন বিজ্ঞানের মুখাপেক্ষী। 

সুখস্বাচ্ছন্দ্য বিধানে বিজ্ঞান: দৈনন্দিন জীবনে সর্বক্ষেত্রে আজ মানুষ বিজ্ঞানের দানে ধন্য ৷ গরমে বৈদ্যুতিক পাখার হাওয়া, শীতে উন্নতার ছোঁয়া, কর্মজীবনে ব্যবহারযোগ্য ঘড়ি, জুতো, কলম, পোশাক-পরিচ্ছদ, গৃহকর্ত্রীর শ্রম লাঘবকারী ফ্রিজ, গ্যাসের উনান, ব্যবসায়ী এবং ছাত্রদের সুবিধার জন্য হিসাবযন্ত্র, যন্ত্রগণক, বৈদ্যুতিক লিফট, গাড়ি চালানোর সুবিধার্থে স্বয়ংক্রিয় নির্দেশ ব্যবস্থা, দ্রুতগামী ভূগর্ভ রেল, বেতার, দূরদর্শন, সংবাদপত্র ইত্যাদি হাজারো স্বাচ্ছন্দ্যের উপকরণ বিজ্ঞানেরই অকুণ্ঠ দান।

অবসর বিনোদনে বিজ্ঞান: মানুষের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জৈব জীবনের ঊর্ধ্বে যে একটি তাৎপর্যময় জীবন আছে, তাকে লালন করার জন্য বিজ্ঞান দিয়েছে বেতার, দূরদর্শন, চলচ্চিত্রের মতো বিনোদন মাধ্যম। কর্মক্লান্ত মানুষ দিনের শেষে এইসব উপকরণ থেকে অবসরবিনোদনের সুযোগ পায়। মুক্তি পায় একঘেঁয়ে জীবনের অবসাদ থেকে।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান: চিকিৎসাবিজ্ঞানে দ্রুত উন্নতির জন্য মানুষ এখন বহু দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পাচ্ছে। দৃষ্টিহীন ফিরে পাচ্ছে দৃষ্টিশক্তি; বধির পাচ্ছে শ্রবণশক্তি। হৃদ্‌রোগীর হৃদ্যন্ত্রে পর্যন্ত কৃত্রিম সঞ্চালনযন্ত্র বসিয়ে আধুনিক শল্যচিকিৎসা অসাধ্যসাধন করে চলেছে। একমাত্র দুরারোগ্য ক্যানসার ছাড়া আর প্রায় সব রোগই এখন চিকিৎসায় পরাভূত। অপ্রকাশিত একটি সংবাদে জানা যায়, কানাডায় কর্মরত ভারতীয় চিকিৎসক বিজ্ঞানী ডক্টর পীযূষকান্তি লালা নাকি কোশ-বিকৃতির কারণ-নির্ণয় এবং প্রতিবিধানে প্রায় সাফল্য লাভ করে ক্যান্সার নির্মূল করার পথে অগ্রসর হয়েছেন।

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে বিজ্ঞানের ভূমিকা: কৃষিতে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে পৃথিবীর বহুদেশ খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বয়ম্ভরতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া বৈজ্ঞানিক প্রথায় খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টি গুণ বাড়িয়ে দরিদ্র, রোগগ্রস্ত, শিশু ও বৃদ্ধদের পুষ্টিবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। কম খরচে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদনে বহু সংস্থা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

উপসংহার:সকলে মুখে বলে বিজ্ঞান সকলের জন্য। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রভাবকে দৈনন্দিন জীবনে সকল মানুষের মধ্যে আজও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। দরিদ্র সাধারণ মানুষ আজও বিজ্ঞানের নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেক গ্রামীণ পরিবেশে আজও বিদ্যুৎ পৌছায়নি। অন্যদিকে, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের আবিষ্কার স্বাচ্ছন্দ্য দিচ্ছে সত্য, কিন্তু তার অভিযান্ত্রিকতা মানুষের জীবনের স্বাভাবিক আনন্দকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই ক্রমে সকলে ‘যন্ত্রমানব’ হয়ে উঠছে।

(2) বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

উত্তরঃ ভূমিকা: মানবজীবনে যেকোনো সাফল্যের অগ্রগতিকে আশীর্বাদ বলে গণ্য করা যায়।বহুকাল আগে মানব সভ্যতার আদিযুগে মানুষ ছিল প্রকৃতির দাস।থাকার মতো ঘর ছিলনা।পশু মাংস ফলমূল ছাড়া আর কোনো আহার্য ছিলনা।আত্মরক্ষার অস্ত্র ছিলনা।আগুন জ্বালানোর কৌশল ছিল অজানা।তখন মানুষের কাছে এই বিশাল বিশ্বপ্রকৃতি ছিল রহস্যে ভরা। সেই তখন থেকেই শুরু হয়েছিল মানুষের প্রকৃতিকে জয় করার সাধনা। আজ মানুষ বিশ্ববিজয়ী ।মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সমৃদ্ধি সাধনে নিরলস সেবায় অতুলনীয় নজির স্থাপন করেছে বিজ্ঞান।কল্যাণময়ী বিজ্ঞানের এই বিপুল দান সত্বেও দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের পরমাণু বোমার দূর্ধর্ষ ধ্বংসলীলার দিকে তাকিয়ে কল্যাণকামী মানুষের মনে বার বার একটাই প্রশ্ন জেগে উঠেছে “বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ?”

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান: বিজ্ঞান সাধনার মুলেই রয়েছে মানবকল্যাণ।বিজ্ঞান বলে বলীয়ান মানুষ দুরন্ত নদীর স্রোতকে বশীভূত করে তার অমৃত প্রবাহে উষর মরুকে করেছে শস্য শ্যামলা।সুবিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর দূরতম ঘাটে নামিয়ে দিয়েছে পণ্য সম্ভার ।তার চিন্তা ভাবনা,কামনা বাসনা,প্রয়াস ,প্রচেষ্টা আজ কেবল মর্তসীমার গণ্ডিতেই আবদ্ধ নয়,মহাকাশের নীল সীমান্ত অতিক্রম করে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে প্রসারিত।

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সহযোগিতায় সফল হয়েছে সবুজ বিপ্লব।শিল্পক্ষেত্রে যন্ত্র দানবের আসুরিক শক্তির প্রয়োগ সৃষ্টি করেছে অতুল বিভব।কঠিন কঠিন অসুখ সব প্রায় সকল সংক্রামক ব্যাধির নিরাময় সম্ভব হয়েছে।ইন্টারনেট ও দূরদর্শন দূরকে করেছে নিকট, অদৃশ্য কে করেছে দৃশ্যমান।এমন কল্যাণমুখী বিজ্ঞানকে আমরা কোন সংশয়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করবো  ?  বিজ্ঞানের ভালো অথবা মন্দ,অর্থাৎ বিজ্ঞান আমাদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ সবটা নির্ভর করে মানুষ বিজ্ঞানকে কিভাবে প্রয়োগ করছে তার উপর।

বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলার কারণ: বিজ্ঞান যখন মানব সভ্যতার সুস্থ জীবন যাত্রার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, জীবনের শান্তিকে নষ্ট করে নিয়ে আসে সংঘাত আর মৃত্যু,সুস্থ পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে।একমাত্র তখনই বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করা যায়। যেহেতু বিজ্ঞান কোনো সচেতন বস্তু নয় তাই নিজের ইচ্ছে মতো কিছু করবার ক্ষমতা নেই তার।বিজ্ঞানকে আমরা যেভাবে ব্যাবহার করবো ঠিক সেই মতোই ফল পাবো।সবকিছুরই ভালো মন্দ দুটো দিক থাকে,বিজ্ঞান এর ব্যতিক্রম কিছু নয়।

উপসংহার:বিজ্ঞান হল মানবজাতির হাতিয়ার।হাতিয়ার ব্যাবহার করে ভালো বা খারাপ যেকোনো কাজই করা যায়।আসলে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রয়োগকর্তার মনোভাবের উপর।যেমন পরমাণু শক্তি ধ্বংসের কাজে না লাগিয়ে তা মানবকল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে।তাই বিজ্ঞানের উপর অহেতুক দোষ চাপানো ঠিক নয়। সবার আগে প্রয়োজন মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন। যতদিন পর্যন্ত না মানুষের খারাপ মনোভাব পরিবর্তিত করে বিজ্ঞান বলের অসৎ ব্যাবহার বন্ধ করে, বিজ্ঞানকে মঙ্গলময় দেবতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে,ততদিন বিজ্ঞান সম্পর্কে এই প্রশ্নটি থেকেই যাবে যে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?

(৩) আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম  অথবা   আমার স্মরণীয় ব্যক্তি।

ভুমিকা : আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম দেশে-বিদেশে বিদ্রোহী কবি, বুলবুল কবি বলে পরিচিত। তাঁর কাব্যে পরাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মানব মর্যাদা ও সৌন্দর্যচেতনা সমন্বিত হয়েছে।

জন্ম :কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসােল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের কাজী পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।

কেন তিনি আমার প্রিয় :নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা আমাকে মুগ্ধ ও আকর্ষণ করে। “বল বীর চির উন্নত মম শির’ একথা বলেই তাঁর ‘বিদ্রোহী’ নামক প্রসিদ্ধ কবিতা আরম্ভ। এ কথা কয়টি উচ্চারণ করার সাথে সাথে পাঠক ও শ্রোতা মাত্র যেন অন্য জগতে নীত হয়। আবার দুনিয়ায় অবিচার ও জুলুমবাজির প্রবাহ চলছে। মানুষের পরাধীনতা ও গােলামীর জিঞ্জির আজও ছিন্ন হয়নি। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মক্ষেত্রের অবিচার-অনাচার আজ আকাশপর্শী হয়ে উঠেছে। মূর্তিমান অন্যায় ও অকল্যাণ জগদ্দল পাষাণের মত মানুষের বুকে চেপে আছে। মেহনতি  মানুষের কান্নার জলে আজ আকাশ-বাতাস আবিল হয়ে ওঠেছে। তার বিরুদ্ধে মানুষ বিদ্রোহ না করে থাকতে পারে না। যতদিন পৃথিবীর বুক হতে পাপ-তাপ দূর না হবে, ততদিন কোন সমাজ-সচেতন মানুষ শান্ত হতে পারে না।তাই কবির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমাকেও বলতে ইচ্ছা হয়-

“যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রােল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না- / বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত। /  আমি সেই দিন হবো শান্ত।”

নজরুল ইসলামের বিদ্রোহের সুর তার প্রথম দিকের কাব্য রচনার প্রায় সবগুলােতেই অল্প-বিস্তর রয়েছে। তাঁর ‘অগ্নিবীণা, ‘ভাঙ্গার গান’ প্রভৃতি গ্রন্থে এর পরিচয় পাই। আগুনের মত উজ্জ্বল ও প্রােজ্জ্বল এসব বইয়ের কবিতাগুলােতে ভাবের সাথে ভাষার সংগতি ও মিল অনবদ্য। মানুষের কবি নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাকে কাব্য ও গানে রূপ দান করেছেন। তাঁর রচিত দেশাত্মবােধক গান আজ ভারত উপমহাদেশের মানুষের মুখে মুখে, সভায় সভায় , আসরে আসরে গীত হয়।

মৃত্যু :ইংরেজি ১৯৪৫ সালের দিকে কবি কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। ১৯৭২ সালে কবিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে আনা হয় এবং নাগিরিকত্ব দেয়া হয়। ২৯শে আগস্ট ১৯৭৬ সালে (১২ই ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি ঢাকায় শেষ নিস্বাশ ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়।

উপসংহার :কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় শক্তি সাহস এবং চরিত্রের বাস্তব প্রতিমর্তি। আমাদের জাতীয় সমৃদ্ধিতে তার বহু অবদান রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তাঁর নামে ঢাকায় নজরুল ইনস্টিটিউট স্থাপন হয়েছে। আমাদের উচিত তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা।

৪) বাংলার উৎসব 

ভূমিকা: উৎসব হলো আনন্দময় অনুষ্ঠান।আর আমরা বাঙালিরা উৎসব প্রিয়।উৎসবের মধ্যেই রয়েছে বাঙালির আনন্দ। তাই বাঙালির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের মেঘ বার বার ঘনিয়ে এলেও বাঙালির আনন্দস্রোতে ভাটা কখনো পড়েনি। বাঙালি নানান রঙে বার বার সাজিয়েছে তার উৎসবের ডালি।উৎসবের দিনের আনন্দের মুহূর্ত গুলোকে বাঙালি ছড়িয়ে রেখেছে তার বিস্তৃত জীবনের আঙিনায়।

কল্যাণী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ:

“বাঙালি ঘরকুনে” এ অপবাদ আমাদের সকলেরই জানা কিন্তু তাই বলে বাঙালি কখনই আত্মকেন্দ্রিক নয়। আত্মকেন্দ্রিক মানে আপনাতে আপনি বদ্ধ।কিন্তু বাঙালি যদি আপনাতে আপনি বদ্ধ হতো তাহলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ হতনা। আমার আনন্দে সকলের আনন্দ হোক,আমার আনন্দ আরো পাঁচ জন উপভোগ করুক – এই কল্যাণী ইচ্ছাই হলো উৎসবের প্রাণ।সকল বাঙালির মনে এই ইচ্ছে আছে বলেই সবাই মিলেমিশে উৎসবে মেতে উঠে।

উৎসবের শ্রেণীকরণ: বাংলার উৎসব গুলিকে মূলত চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। ধর্মীয় উৎসব ,সামাজিক উৎসব,ঋতু উৎসব, জাতীয় উৎসব। তবে উৎসবকে সুনির্দষ্টভাবে ভাবে বিভাজন করা যায়না।যেমন কিছু উৎসব ঋতু বিষয়ক উৎসব বলে গণ্য কিন্তু ভালো করে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে তার মুলে ধর্ম নিহিত রয়েছে।

ধর্মীয় উৎসব: ধর্মীয় উৎসব গুলি বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবনাকে কেন্দ্র করে।হিন্দু মুসমান খ্রিস্টান বৌদ্ধ শিখ প্রতিটি ধর্মের নানান রকমের উৎসব।সারা বছর ধরে একই ভাবে বাঙালির উৎসবের আমেজ বজায় থাকে । হিন্দু ধর্মের রয়েছে  নানান রকমের পুজো পার্বণের উৎসব। যাদের মধ্যে অন্যতম দুর্গোৎসব। এই দুর্গোৎসব-ই হলো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। শরৎ কাল এলেই বাংলার বুকে বেজে ওঠে ঢাকের বাদ্যি।দুর্গাপুজোর এই উৎসব দীর্ঘ চারপাঁচ দিন ধরে চলে অন্য যেকোনো অনুষ্ঠান উৎসবের চেয়ে এর আড়ম্বর অনেক বেশি।এছাড়াও মুসলমানদের রয়েছে ঈদ মহরম প্রভৃতি। খ্রিস্টানদের গুড ফ্রাইডে, বড়দিন। বৌদ্ধ ধর্মের বুদ্ধ পূর্ণিমা ও গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে শিখ সম্প্রদায় উৎসবে মেতে ওঠে। 

সামাজিক উৎসব: সামাজিক উৎসবেও একই ভাবে মেতে ওঠে বাঙালি। উপনয়ন, অন্নপ্রাশন,বাড়ি প্রতিষ্ঠা, থেকে বিয়ে বাড়ি এসবই পড়ে সামাজিক উৎসবের মধ্যে।ভাই ফোঁটা, জামাইষষ্ঠী এর মতো স্বজন উৎসব গুলিও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।এই সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠানের সমাজের এতো গভীরে নিবদ্ধ যে, সমাজের আরো পাঁচজনকে না নিলে এসব উৎসব অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয়না। তাই সকল উৎসবে বাঙালি সবাই মিলে একই ভাবে আনন্দে মেতে ওঠে।

ঋতু উৎসব: বছরের ছয়টি ঋতুকে কেন্দ্র করে বাঙালির অসংখ্য উৎসব। নাচ গান সহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় শারদোৎসব, বাসন্তৎসব এমনকি বর্ষা বন্দনা। চাষবাসের সাথে যুক্ত কৃষির উৎসব গুলি ঋতু উৎসবের এক একটি অঙ্গ। এছাড়াও ঋতু উৎসবে উল্লেখযোগ্য বসন্তে হোলি, পৌষে মকর, আঘ্রানে নবান্ন ইত্যাদি।

জাতীয় উৎসব: সর্বভারতীয় জাতীয় উৎসব গুলিতেও বাংলার বাঙালির আনন্দের ঘাটতি থাকেনা। শহর থেকে গ্রাম সারা সারা বাংলা মেতে ওঠে জাতীয় উৎসব গুলিতে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পতাকা উত্তোলন করা হয় ১৫ ই আগস্ট।২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসও সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য -রবীন্দ্র জয়ন্তী,নেতাজির জন্মদিন,গান্ধী জয়ন্তী, বিবেকানন্দের জন্মদিন ইত্যাদি।

উৎসবের মধ্য দিয়েই মিলন: ব্যাক্তিগত দুঃখ কষ্ট ভুলে সবার সাথে আনন্দে মেতে ওঠায় উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য।উৎসবানুষ্ঠান  মেলামেশার সুযোগ করে দেয় আমাদের। উৎসবের ময়দানে জাতি ধর্ম অর্থ গত ভেদাভেদের কোনো কোনো প্রাচীর থাকেনা। পারস্পরিক আনন্দ প্রীতি বিনিময়ের মধ্য দিয়েই রচিত হয় সুন্দর সুন্দর বন্ধুত্ব। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের এই আনন্দে মেতে ওঠা বাঙালির উৎসব পালনকে করে তোলে সার্থক।

উপসংহার: প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে কে না চায়, সকলেই চায় বৈচিত্রের স্বাদ। সকলেই চায় নিজের গণ্ডিবদ্ধ জীবনকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে মুক্তি দিয়ে অসংখ্য প্রাণের স্পর্শে সরস ও মাধূর্যমন্ডিত করতে।তাই জীবনে উৎসবের প্রয়োজন অপরিসীম। তাই বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ অনন্তকাল  অনুষ্ঠিত হবে।

(৫)একটি গাছ একটি প্রাণ

উত্তরঃ ভূমিকা:  বৃক্ষলতা পৃথিবীর আদি সন্তান। বৃক্ষতলে মানুষের প্রথম আবির্ভাব। আবার দাবানলের আগুনে মানুষ দীক্ষা নিয়েছে বিজ্ঞানের। কিন্তু সভ্য মানুষের বর্বর লােভ বৃক্ষ ও তরুলতার জগৎকে ধ্বংস করতে উদ্যত। বৃক্ষ নাশ করে সভ্য মানুষ শহর নামক ইট-পাথরের জঙ্গল তৈরি করেছে। বৃক্ষ নিয়েছে বিদায়। যন্ত্রসভ্যতার দূষণে মানুষ-প্রাণীর সঙ্গে তরুলতার জগতেও নেমে এসেছে বিপদের অশনি সংকেত। আজ তাই নতুনভাবে ভাবার সময় এসেছে, নগরায়ণ, শিল্পায়নের জন্য অরণ্য ধ্বংস করা কি উচিত কাজ হচ্ছে?

গাছ ও প্রাণ : প্রাণধারণের পক্ষে বৃক্ষ অপরিহার্য। যদি কোনাে কারণে আমাদের এই সবুজ পৃথিবী গাছ-শূন্য হয়ে পড়ে, তা হলে এই পৃথিবী থেকে আমাদের সকলের বাস উঠে যাবে। কারণ, তরুই আমাদের প্রাণ-প্রদীপটিকে জ্বালিয়ে রেখেছে বলা যায়।

বেঁচে থাকা এবং গাছ : বেঁচে থাকার জন্য আমরা প্রতি মুহূর্তে অক্সিজেন গ্যাস গ্রহণ করছি এবং নিশ্বাস ছাড়ার সময় ত্যাগ করছি কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস। এক হেক্টর আয়তনের ঘন অরণ্য বছরে প্রায় চার টন ওজনের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস শুষে নেয় ও প্রায় দু-টন বিশুদ্ধ অক্সিজেন। বায়ুমণ্ডলে সরবরাহ করে। এ ছাড়া বায়ুতে উপাদান হিসেবে ৭৮.০৩%  নাইট্রোজেন গ্যাস গাছ নিজের প্রয়ােজনে কাজে লাগায়। সুতরাং বােঝা যাচ্ছে, জীবজগতের পরিবেশরক্ষায় গাছ কতখানি প্রয়ােজনীয়। অক্সিজেন গ্যাস না-পেলে আমাদের হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে।

বৃক্ষহনন নয়: আমাদের এই ভারতভূমি একসময় বৃক্ষরাজিতে ছিল সমৃদ্ধ। লােকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেই অরণ্যভূমি কেটে তৈরি করে চলেছি বসতি। জ্বালানি সংগ্রহের জন্য এবং অনেক সময় শৌখিন আসবাব ও দরজা-জানালার জন্য গাছের পর গাছ কেটে চলেছি।

পরিবেশরক্ষায় গাছ : পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে গাছ। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য তৈরি হয়েছে বনসৃজন প্রকল্প। নির্বিচারে গাছ কাটা নয়, নির্বিচারে গাছ লাগিয়ে যাওয়াই হবে এখন আমাদের প্রধান কাজ।

আরও গাছ চাই : আমাদের ভারতে অরণ্যের পরিমাণ হল মােট স্থলভাগের ২২.৭%। কিন্তু পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের জনসংখ্যার অনুপাতে এই অরণ্য যথেষ্ট নয়। তাই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং পরিবেশকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য দরকার অরণ্য সৃষ্টির। কেবল মানুষ নয়, জীবকুলকে বাঁচাতে হলেও এই গাছের প্রয়ােজন।

উপসংহার : এই পৃথিবীতে সুস্থভাবে, সুখে-শান্তিতে বাঁচতে হলে আমাদেরকে সবুজায়নের দীক্ষা নিতে হবে। গাছপালার প্রতি গভীর অনুরাগ সৃষ্টি করতে হবে। অসুস্থ পৃথিবীকে সুস্থ করার সংকল্প দিকে দিকে প্রচার করতে হবে “গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান।” গাছই আমাদের প্রাণ, আমাদের বাঁচার মন্ত্র।                Prepared by-www.parikshaprastuti.org

আরো পড়ুন :

*****CLASS XI  ফাইনাল পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নের গ্রামার অংশের ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের সমাধান পেতে এখানে ক্লিক করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *