মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন-উত্তর

madhyamik 2nd history question answer

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর  প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা তোমরা  যারা ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তোমাদের সকলকে WWW.PARIKSHAPRASTUTI.ORG এক্সপার্ট টিমের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। তোমরা যাতে মাধ্যমিক ইতিহাস বিষয়ে ১০০% নাম্বার পেতে পারো তার জন্য আমাদের টীম তোমাদের জন্য বিষয় ভিত্তিক chapter wise সাজেশন নিয়ে আসবে ধারাবাহিক ভাবে। আজকে মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায়ের   ৪ নাম্বারের  এবং ৮ নাম্বারের প্রশ্ন-উত্তরের সাজেশন ২০২৩ তুলে ধরা হল। 

Table of Contents

মাধ্যমিক ইতিহাস  সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর                      

[১] বামাবোধিনী পত্রিকায়  উনিশ শতকের বাংলার সমাজ জীবনের  কি প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়?

উত্তরঃ সূচনা:- উনিশ শতকে  বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সাময়িক পত্র গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল উমেশচন্দ্র দত্ত প্রকাশিত বামাবোধিনী পত্রিকাটি। এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় 1863 খ্রিস্টাব্দে। এই পত্রিকার মাধ্যমে উনিশ শতকের সামাজিক জীবনযাত্রার নিম্নরূপ ছবিগুলি ফুটে উঠেছে –

  1.  নারী শিক্ষা:- উনিশ শতকের সমাজের মেয়েদের কথা তুলে ধরার জন্যই বামাবোধিনী পত্রিকা প্রকাশিত হয় ।এই পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায় বাংলা সমাজ নারী শিক্ষার বিরোধী ছিল। তখনকার রক্ষণশীল সমাজ মনে করতো শিক্ষিত মহিলারা অশুভ।  কিন্তু বামাবোধিনী পত্রিকা তার প্রথম সংখ্যাতেই নারী শিক্ষা প্রসারের দাবি জানায় এই পত্রিকার প্রতি সংখ্যার সূচনাতেই লেখা থাকতো কন্যাকে পালন করিবেক  এবং যত্নের সহিত শিক্ষা দেবেক ।
  2. সামাজিক কুসংস্কার:- বামাবোধিনী পত্রিকা থেকে তৎকালীন সমাজে প্রচলিত বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ,বৈধব্য যন্ত্রণা ,কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কে জানা যায় ।বামাবোধিনী পত্রিকা সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার গুলির বিরোধিতা করেছিল ।
  3. নারীদের অবস্থা:- বামাবোধিনী  পত্রিকা থেকে জানা যায় যে তৎকালীন সমাজে নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয় ।পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা বাড়ির অভ্যন্তরে জীবন কাটাতে বাধ্য হতো। সমাজের বিশেষ অধিকার ও মর্যাদা ছিল না। 
  4. নারীদের কার্যকলাপ:- বামাবোধিনী পত্রিকায় ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের নারীদের বিভিন্ন কার্যকলাপ প্রকাশিত হতো ।এতে নারীদের লেখা বিভিন্ন গল্প কবিতা প্রকাশিত হতো। 
[2] হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজ জীবনের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা লেখ ।    অথবা     হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার গুরুত্ব লেখ ।

উত্তরঃ সূচনা:- হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মুখোপাধ্যায় এর সম্পাদনায় হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় 1853 খ্রিস্টাব্দে ।এই পত্রিকা 19 শতকের বাংলার সমাজ জীবনের নানা দিক তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যেমন一

  1. কৃষকদের অবস্থা:- এই পত্রিকার মাধ্যমে তৎকালীন কৃষকদের দুর্দশার  ছবি তুলে ধরা হয়। পত্রিকাটিতে বলা হয় কৃষক-মজুর আউশ ও আমন ধান চাষের মাধ্যমে নিজেদের খাদ্য জোগাড়  করতো। কিন্তু লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক পঞ্চম আইন পাস করে  নীলচাষ বাধ্যতামূলক করলে চাষী ও ক্ষেতমজুরদের দুর্দশা বেড়ে যায়। 
  2. নীল বিদ্রোহ:- নীল চাষ বাংলার কৃষকদের জীবনে দুর্দশার সৃষ্টি করেছিল। ইংল্যান্ডের বস্ত্রশিল্পে প্রয়োজনে  বাংলার মাটিতে নীল চাষ করা হতো ।নীলচাষ নীলকর সাহেবদের কাছে লাভজনক হলেও নীলচাষীদের সর্বনাশের কারণ ছিল ।এর প্রতিবাদে 1860 খ্রিস্টাব্দে বাংলার বিভিন্ন স্থানে নীলচাষীরা  নীল বিদ্রোহ সংঘটিত করেছিল ।এই বিদ্রোহের কাহিনী ধারাবাহিকভাবে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় প্রকাশিত হতো।
  3. সাঁওতাল বিদ্রোহ:- 1855 খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত সাঁওতাল বিদ্রোহ পরাজিত সাঁওতালদের উপর ইংরেজদের অমানবিক অত্যাচার এর কাহিনী।  ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় ।
  4. সিপাহী বিদ্রোহ:- 1857 খ্রিস্টাব্দের 29 মার্চ ব্যারাকপুর সেনাছাউনিতে মঙ্গল পান্ডের নেতৃত্বে সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হলে, সেই বিদ্রোহে  ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষেরা  যোগদান করেছিল। এই বিদ্রোহ বিবরণ ধারাবাহিকভাবে প্রচার করে হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা। 

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর

[৩] গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকায়  বাংলার সমাজ জীবনের যে ছবি ফুটে উঠেছে তার পরিচয় দাও ।  অথবা    গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার গুরুত্ব লেখ ।

উত্তরঃ সূচনা:- হরিনাথ মজুমদার কর্তৃক প্রকাশিত গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় 19 শতকের গ্রাম বাংলার সমাজ জীবনের ছবি নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে ।এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় 1863 খ্রিস্টাব্দে। এই পত্রিকার সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার সাধারণ মানুষের কাছে কাঙ্গাল হরিনাথ নামে পরিচিত ছিলেন।এই  পত্রিকা থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনের নিম্নরূপ পরিচয় পাওয়া যায়-

  1. সমাজে নারীদের অবস্থা:- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা থেকে তৎকালীন সমাজে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায় ।নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানা যায়। এই পত্রিকা সমাজে প্রচলিত বহু বিবাহ প্রথার বিরোধিতা করেছিল ।
  2. জমিদারি শোষণ:- এই পত্রিকা গ্রাম্য প্রজাদের উপর জমিদারী শোষণের কথা প্রচার করত। তখন বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রচলিত ছিল। জমির মালিক ছিল জমিদার ।জমি চাষ করলেও ফসলের উপর তাদের সম্পূর্ণ অধিকার ছিলনা।
  3. সুদখোর মহাজনদের শোষণ:- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা থেকে জানা যায় সমাজে সুদখোর মহাজনদের রমরমা ছিল । তারা চড়া সুদের বিনিময়ে টাকা ধার দিত ।গ্রামের সাধারণ মানুষ মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিল ।
  4. নীলকর সাহেবদের অত্যাচার:- এই পত্রিকায় সাধারণ নীল চাষীদের উপর নীলকর সাহেবদের অমানবিক অত্যাচার এর কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল ।নীলকর সাহেবরা নীল চাষ করতে বাধ্য করত ।এর ফলে কৃষকরা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করেছিল। 
[৪] হুতুম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে 19 শতকের বাংলার কিরূপ চিত্র পাওয়া যায়। 

উত্তরঃ সূচনা:- 1861 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা হুতুম পেঁচার নকশা গ্রন্থটি 19 শতকের বাংলার সমাজ জীবনের নিম্নরূপ চিত্র গুলি তুলে ধরে 

  1. বাবু সংস্কৃতির সমালোচনা: হুতুম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের 19 শতকের কলকাতার বাবু সম্প্রদায়ের জীবন কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে ।কলকাতায় উচ্চবিত্ত জমিদার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এবং উশৃংখল বেহিসাবি জীবন-যাপনে অভ্যস্ত মানুষদের বাবু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বাবু সমাজের বেহিসেবি জীবনযাত্রার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে ।
  2. মধ্যবিত্ত সমাজের সমালোচনা:- এই গ্রন্থের তৎকালীন কলকাতার মধ্যবিত্ত সমাজের  তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।নব্য  ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালি সমাজ, ইংরেজদের সমর্থক কেরানি  সমাজের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে এই গ্রন্থটিতে।
  3. পাশ্চাত্য শিক্ষার সমালোচনা:- গ্রন্থটিতে তৎকালীন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত শহরের যুবকদের মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এই যুবকেরা তৎকালীন ইংরেজদের চালচলন ও জীবনযাত্রাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতেন। 
  4. ধর্মীয় গোঁড়ামির সমালোচনা:- এই গ্রন্থ থেকে জানা যায় তৎকালীন সমাজে হিন্দু ,ব্রাহ্মণ, খ্রিস্টান সব ধর্মের কিছু  মানুষ ছিল যারা মানবিকতার উপর ধর্মকে বেশি গুরুত্ব দিত ।এর ফলে সমাজে সতীদাহ, বাল্যবিবাহ ,বহু বিবাহের পক্ষে ও বিপক্ষে শ্রেণীবিভাজন দেখা দিয়েছিল। তাই এই গ্রন্থটি সেই সব মানুষদের  তীব্র সমালোচনা করেছিল।

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর

[৫] নীল দর্পন নাটক থেকে 19 শতকের বাংলার সমাজ এর কিরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায়। 

উত্তরঃ সূচনা:-  1860 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত দীনবন্ধু মিত্রের  লেখা নীলদর্পণ নাটকটি তৎকালীন বাংলার নীল চাষীদের উপর নীলকর সাহেবদের অমানবিক অত্যাচার এর কাহিনী তুলে ধরেছিল। নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র তার আসল নামে  নাটকটি প্রকাশ না করে কেনচিত  পথিকেন ছদ্মনাম এই নাটকটি বাংলা ভাষায় প্রকাশ করেছিল ।এই নাটকটি 1861 খ্রিস্টাব্দে রেভারেন্ড জেমস লং সাহেব ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। অনুবাদের জন্য ব্রিটিশ সরকার জেমস লং সাহেবকে বিদ্রোহী বলে অভিযুক্ত করে এক মাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করেছিল। নীলদর্পণ নাটক থেকে তৎকালীন বাংলার সমাজের নিম্নরূপ প্রতিফলন গুলি পাওয়া যায়-

 I.নীলচাষীদের দুর্দশা:- নীলকর সাহেবরা নীলচাষীদের বিভিন্নভাবে শোষন করতো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও বিঘাপ্রতি মাত্র দু টাকার বিনিময়ে নীল চাষ করতে চাষীদের বাধ্য করতো ।উৎপন্ন নীল  কেনার সময় ওজনে  বেশি এবং দামে কম দিত ।

  1. নীলকর সাহেবদের অত্যাচার:- নীলকর সাহেবদের কথামত চাষিরা নীল চাষ করতে না চাইলে নীলকর সাহেবরা তাদের উপর নানান ভাবে অত্যাচার করত। চাষীদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিত, জমির ফসল নষ্ট করতো ,নারীদের সম্মান নষ্ট করত এমনকি নীলচাষীদের নীলকুঠিতে তুলে এনে অকথ্য অত্যাচার করত।
  2. নীল বিদ্রোহ:- নীলকর সাহেবদের শোষণ অত্যাচার নীলচাষীরা  নীরবে সহ্য করেনি । তারা নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের অতিষ্ঠ হয়ে 1860 খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুচরন বিশ্বাস এবং দিগম্বর বিশ্বাস এর নেতৃত্বে  প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ইতিহাসে এই প্রতিরোধ নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
[৬] উডের নির্দেশনামা (1854) কে এ দেশের শিক্ষা বিস্তারের মহাসনদ বলা হয় কেন?  অথবা   টীকা লেখ: চার্লস উডের প্রতিবেদন বা উডের  ডেসপ্যাচ নীতি। 

উত্তরঃ সূচনা: বোর্ড অফ কন্ট্রোলের  সভাপতি চার্লস উড ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের জন্য 1854  খ্রিস্টাব্দের  19 জুলাই একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন , এই নির্দেশ নামা চার্লস উডের প্রতিবেদন বা উডের ডেসপ্যাচ নীতি নামে পরিচিত।

উডের নির্দেশনামা বা প্রতিবেদন গুলি হল-

  1. শিক্ষা প্রসারের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক শিক্ষা বিভাগ গঠন করা।
  2. কলকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
  3. শিক্ষক তৈরি করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কলেজ স্থাপন করা ।
  4. দেশীয় ভাষার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষা প্রদান করা।
  5. নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো ।

ফলাফল:-  

  1. চার্লস উডের সুপারিশ  গুলির উপর ভিত্তি করেই লর্ড ডালহৌসি  1855 খ্রিস্টাব্দে পৃথক শিক্ষা দপ্তর গঠন করেন।                                                                   
  2. উডের নির্দেশ নামানুসারে 1857 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, মুম্বাই ,মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। 

[৭] হান্টার কমিশন 1882 এর সুপারিশ গুলি লেখ। 

উত্তরঃ সূচনা:- চার্লস উডের শিক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনামা কতটা কার্যকরী হয়েছে এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষা বিস্তারের জন্য কোন কোন নীতি গ্রহণ করা উচিত ,এ বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য লর্ড রিপন 1882 খ্রিস্টাব্দে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ স্যার উইলিয়াম হান্টার এর নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন, ইতিহাসে এই কমিশন হান্টার কমিশন নামে পরিচিত। 

হান্টার কমিশনের সুপারিশ:- সারা দেশ ঘুরে অনুসন্ধান করে 1883 খ্রিস্টাব্দে হান্টার কমিশন নিম্নরূপ সুপারিশ গুলি করে-

  1. প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব জেলা বোর্ড এবং পৌরসভা গুলি হাতেই অর্পণ করা ।
  2. সরকারি সাহায্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা ।
  3. মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান করা ।
  4. নারী শিক্ষার প্রতি উৎসাহ দান করা ।
  5. সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যালয় ও কলেজ স্থাপনের সাহায্য করা।

ফলাফল:- 

  1. হান্টার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে বড়লাট লর্ড রিপন প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব পৌরসভা ও স্থানীয় জেলা বোর্ডের  হাতে ছেড়ে দেন।
  2. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ স্থাপন করা হয়। 

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর

[৮] বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান লেখ।

উত্তরঃ সূচনা:- বাংলাদেশে ইস্ট  ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন শুরু হলে কোম্পানি দেশীয় সংস্কৃতিতে  হস্তক্ষেপ করতে চায়নি । তারা পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খুব বেশি উৎসাহ দেখায় নি। ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল খ্রিস্টান মিশনারীরা ,যারা মূলত খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার উদ্দেশ্যে দেশে এসেছিলেন। 

খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদান:- এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে খ্রিস্টান মিশনারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । এক্ষেত্রে কয়েকটি মিশন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। যেমন-

  1. ব্যাপ্টিস্ট মিশন বা শ্রীরাম ত্রয়ীর অবদান:- 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে মার্শম্যান ,কেরি  ও ওয়ার্ড ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিহাসে এই তিনজন শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে পরিচিত ।খ্রিস্টধর্ম প্রচার এর জন্য তারা শ্রীরামপুরে  ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত করে 26 টি আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল প্রকাশ করেন। পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য তারা  1818 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর কলেজ এবং শ্রীরামপুর বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ।এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় 10 হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করত ।
  2. লন্ডন মিশনারি:- লন্ডন মিশনারি সোসাইটির  মিশনারীরা 1795 খ্রিস্টাব্দে  কলকাতায় ও বাংলার  বিভিন্ন জেলায় বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে চুঁচুড়া, কালনা, বর্ধমান, বহরমপুর, মালদহ তে  প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় গুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
  3. স্কটিশ মিশন:- আলেকজান্ডার ডাফ প্রতিষ্ঠিত স্কটিশ মিশন  শিক্ষা বিস্তারে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে  কয়েকটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়গুলি ডাফ স্কুল নামে পরিচিত ।

মূল্যায়ন:- এভাবে সরকারি সাহায্য ছাড়াই খ্রিস্টান মিশনারীদের উদ্যোগ এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ঘটে ।তাদের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলিতে খ্রিস্ট ধর্মের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস-ভূগোল, ব্যাকরন ইত্যাদি বিষয়ে পাঠদান করা হতো। 

[৯] পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্ত দেব এর অবদান আলোচনা করো ।  অথবা   রাজা রাধাকান্ত দেব কেন বিখ্যাত ছিলেন ?                ( মাধ্যমিক ২০২২)

সূচনাঃ- রাজা রাধাকান্ত দেব ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত ও হিন্দু সমাজের একজন বিশিষ্ট রক্ষণশীল নেতা ।রাজা রাধাকান্ত দেব একদিকে ছিলেন হিন্দু সমাজের রক্ষনশীলতার প্রতীক , অপরদিকে তিনি ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সমর্থক । আসলেই তিনি চেয়েছিলেন  প্রাচ্যবাদী শিক্ষার কাঠামোর মধ্যেই পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ। এই  উদ্দেশ্যে তিনি নিম্নরূপ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন –

  1. হিন্দু কলেজে সহযোগিতা:- 1817 খ্রিস্টাব্দে এডোয়ার্ড হাউস ইস্ট এবং ডেভিড হেয়ারের যৌথ উদ্যোগে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে রাধাকান্ত দেব এই কলেজ পরিচালনা সমস্ত ব্যয় ভার বহনের দায়িত্ব নেন ।
  2. ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি তে সহযোগিতা:– 1817 খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে স্কুল পাঠ্য বই তৈরি করার জন্য ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হলে রাধাকান্ত দেব সেই সোসাইটির অবৈতনিক সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন।
  3. নারী শিক্ষায় সহযোগিতা:- নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য রাধাকান্ত দেব আন্তরিকভাবে আগ্রহী ছিলেন । 1822 খ্রিস্টাব্দে স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক  নামে একটি গ্রন্থ রচনা করে তিনি প্রমাণ করেন যে প্রাচীন ভারতীয় নারীরা শিক্ষা লাভ করত ।
  4. চিকিৎসাবিদ্যায় সহযোগিতা:- প্রাচীন হিন্দু সমাজ চিকিৎসা বিদ্যা চর্চার প্রয়োজনে শব ব্যবচ্ছেদ প্রথার গুরুতর বিরোধী ছিলেন। কিন্তু রাধাকান্ত দেব শব ব্যবচ্ছেদ  কে সমর্থন জানিয়েছিলেন। 

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর

[১০] ডেভিড হেয়ার কেন বিখ্যাত ছিলেন?       অথবা     পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ারের অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তরঃ সূচনা:- ডেভিড হেয়ার ছিলেন স্কটল্যান্ড এর অধিবাসী এবং একজন জনদরদি  মানুষ । তিনি ঘড়ি ব্যবসায়ী হিসেবে ভারতে আসেন কিন্তু বাংলার মানুষকে তিনি এতটাই ভালবাসতেন  যে তিনি  আর তার দেশে ফিরে যাননি ।বাংলার মানুষের কল্যাণের জন্য এবং তাদের মধ্যেই পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি নিম্নরূপ কর্মসূচি গুলির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন-

  1. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা :-ভারতে ডেভিড হেয়ারের প্রথম উল্লেখযোগ্য  অবদান হল 1817 খ্রিস্টাব্দে তিনি হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ।এই কলেজ প্রতিষ্ঠায় রাজা রামমোহন রায় এবং  রাজা রাধাকান্ত দেব তাকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানান। মূলত পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্দেশ্যেই তিনি এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
  2. ক্যালকাটা বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা:- 1817 খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার কলকাতায় ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সোসাইটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভালো বই প্রকাশ এবং শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
  3. ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা:- ডেভিড হেয়ার 1818 খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল কলকাতায় যেসব স্কুল ছিল সেগুলি উন্নত করা এবং বিভিন্ন জায়গায় নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা।  
  4. অন্যান্য অবদান:- ডেভিড হেয়ার নারী শিক্ষা বিস্তারে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি বিভিন্ন স্কুল এবং জ্ঞানচর্চা মূলক স্থানে প্রচুর অর্থ সাহায্য করেন ।
[১১] উনিশ শতকে নারী শিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন কি ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন?

উত্তরঃ সূচনা:- জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন ছিলেন একজন ভারতপ্রেমী ব্রিটিশ কর্মচারী । তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় অর্থাৎ বর্তমানে বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করে বাঙ্গালী নারী সমাজে নারী জাগরণের সূত্রপাত করেন। তিনি নারী শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে নিম্নরূপ কর্মসূচির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন-

  1. বেথুন  স্কুল প্রতিষ্ঠা:- ভারতবর্ষের নারীদের দুঃখ-দুর্দশা এবং শিক্ষা সম্পর্কে বেথুন সাহেব পরিচিত ছিলেন । তাই ভারতীয় নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে উদ্দেশ্যে তিনি 1849 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ,যা বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত। তিনি তার সমস্ত  সম্পত্তি এই স্কুলের জন্য দান করেন ।
  2.   বেথুন  কলেজ প্রতিষ্ঠা: জন  ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন প্রতিষ্ঠিত বেথুন  কলেজ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মহিলা কলেজ।   এই কলেজের মাধ্যমে তিনি নারী শিক্ষা বিস্তারে এক বিপ্লব আনেন । এই কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ভারতীয় সমাজে বেথুন সাহেব নামে পরিচিতি লাভ করেন। 

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর

১২] ভারতে পাশ্চাত্য আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যা চর্চার বিকাশে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা আলোচনা করো। 

উত্তরঃ সূচনা:- লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1835 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা  করেন । ভারতীয় আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যা চর্চার বিকাশে কলকাতা মেডিকেল কলেজ নিম্নরূপ ভূমিকা পালন করে । যেমন-

  1. ইউরোপীয় চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচলন:- কলকাতা মেডিকেল কলেজে ইউরোপের  চিকিৎসাবিদ্যা শেখানো হতো ।এই চিকিৎসাবিদ্যা ছিল ভারতীয় চিকিৎসাবিদ্যা থেকে অনেক বেশি উন্নত। তাই ভারতে এই চিকিৎসা বিদ্যার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
  2. সরকারি সাহায্য:- ব্রিটিশ সরকার ইউরোপের আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যা চর্চার জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রচুর অর্থ সাহায্য করেন।
  3. ডাক্তার তৈরি:- কলকাতা মেডিকেল কলেজ ভারতের অনেক বিখ্যাত ডাক্তার তৈরি করেছে। এই কলেজ থেকে প্রথম ব্যাচে   ডাক্তারি পাশ করেন উমাচরণ শেঠ  ,রাজকৃষ্ণ দে ,দ্বারকানাথ গুপ্ত  প্রমূখ।
  4. হাতে-কলমে শিক্ষা:- কলকাতা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষা দিত। এই  কলেজের ডাক্তার মধুসূদন গুপ্তের নেতৃত্বে 1836 খ্রিস্টাব্দে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করা হয়। 
[১৩] রাজা রামমোহন রায়কে কেন ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ মনে করা হয় ?  অথবা    সতীদাহ প্রথা আন্দোলনে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা কর।

                                                                                                                                                                                                                  

উত্তরঃ সূচনা:-  19 শতকে  ভারতের ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের ইতিহাসে রাজা রামমোহন রায় একজন স্মরণীয় ব্যক্তি । পাশ্চাত্য শিক্ষায় যুক্তিবাদের  সমন্বয় ঘটিয়ে রামমোহন রায় নবভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। নিম্নরূপ কর্মসূচির জন্য রাজা রামমোহন রায় কে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলা হয় । যেমন-

[ক] পাশ্চাত্য  শিক্ষার সমর্থক:- রামমোহন ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষার উগ্র সমর্থক । তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে সরকারি অর্থ অনুমোদনের জন্য অনুরোধ জানান।  

[খ] বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন : রাজা রামমোহন রায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। 1817 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ স্থাপনের জন্য  তিনি আলেকজান্ডার ডাফ কে বিশেষভাবে সাহায্য করেন।

[গ] জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতাল:- জাতিভেদ প্রথার প্রধান বিরোধী ছিলেন রাজা রামমোহন রায় । তিনি সমস্ত ধর্মের মানুষের মিলন ঘটাতে তৎপর হয়েছিলেন। এই জন্য তিনি সমাজের কুনজরে পড়েছিলেন।

[ঘ] সতীদাহ প্রথার অবসান:- স্বামী মারা গেলে মৃত স্বামীর চিতায় স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার প্রথা কে বলা হয় সতীদাহ  প্রথা ।প্রাচীন ভারতীয় হিন্দুসমাজে এই নিষ্ঠুর প্রথার প্রচলন ছিল ।রাজা রামমোহন রায় এই  প্রথার তীব্র বিরোধী ছিলেন। তিনি হিন্দু সমাজে এই সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন ।সমাজের বিশিষ্ট মানুষদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর কাছে তিনি একটি আবেদনপত্র জমা দেন সতীদাহ  প্রথা নিষিদ্ধ করার দাবিতে। শেষপর্যন্ত রাজা রামমোহন রায়ের একান্ত চেষ্টায় 1829 খ্রিস্টাব্দে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ  প্রথা কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর

[১৪] ডিরোজিও ও নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর সমাজ সংস্কারমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তরঃ সূচনা:- পুর্তগিজ বংশজাত হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও তৎকালীন সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন । তার তরুণ অনুগামীরা ইয়ং বেঙ্গল বা নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী নামে পরিচিত ছিল । তাদের আন্দোলন কে নব্য বঙ্গ আন্দোলন নামে অভিহিত করা হয় ।

নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী ও তাদের কার্যকলাপ:- মাত্র 17 বছর বয়সে ডিরোজিও হিন্দু কলেজের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তার দেশপ্রেম, যুক্তিবাদ, সত্যের প্রতি নিষ্ঠা তার প্রতি ছাত্রদের আকৃষ্ট করেছিল। তার আকর্ষণে হিন্দু কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা  তার অনুগামী হয়ে উঠেছিল । ডিরোজিওর অনুগামীরা নববঙ্গ ডিরোজিয়ান নামে পরিচিত ছিল। তার অনুগামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রামতনু লাহিড়ী ,রামগোপাল ঘোষ ,কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় , রসিক  কৃষ্ণ মল্লিক ,রাধানাথ শিকদার প্রমুখ।  তার অনুগামীরা বাংলার সমাজ সংস্কারে নিম্নরূপ কার্যকলাপ গুলির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন-

  1. ডিরোজিও 1827 খ্রিস্টাব্দে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি গোষ্ঠী গঠন করে হিন্দু সমাজে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন।
  2. ডিরোজিও পার্থেনন পত্রিকার মাধ্যমে নব বঙ্গ গোষ্ঠীর মতামত প্রচার করেন ।
  3. নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী জাতিভেদ প্রথা ,অস্পৃশ্যতা ,নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র সমালোচনা করে ।
  4. তারা হিন্দু সমাজে রক্ষণশীলতা কে আক্রমণ করার জন্য প্রকাশ্যে ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধাচারণ করতেন। এমনকি নিষিদ্ধ মাংস খেতেন ।

নব্য বঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থতার কারণ :-মাত্র 23 বছর বয়সে হঠাৎ ডিরোজিওর মৃত্যু হলে উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে এবং উপযুক্ত কর্মসূচির অভাবে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয়। 

[১৫] বিধবা বিবাহ আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা কর।

উত্তরঃ সূচনা: পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ হল হিন্দু সমাজে বিধবা বিবাহ প্রচলনের জন্য আন্দোলন । হিন্দু বিধবাদের শোচনীয় দুর্দশা  তাকে দারুন কষ্ট দিত। তাই বিধবাদের পুনর্বিবাহের জন্য তিনি সুদীর্ঘ আন্দোলন শুরু করেন এবং নিম্নরূপ কর্মসূচি গুলির মাধ্যমে বিধবা বিবাহের পক্ষে প্রচার চালাতে থাকেন-

গ্রন্থ রচনা  করে : বিদ্যাসাগর 1855 খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এ বিষয়ে প্রস্তাব নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন এবং বিধবা  বিবাহের পক্ষে যুক্তি সংগ্রহ করেন ।

সংবাদপত্রের মাধ্যমে:- বিদ্যাসাগর সরকারি পত্রিকার মাধ্যমে বিধবাদের দুর্দশা তুলে ধরেন এবং বিধবা বিবাহের পক্ষে যুক্তি সংগ্রহ করেন ।

বিভিন্ন স্থানে প্রচার:-  বিদ্যাসাগর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিধবা বিবাহের পক্ষে জনমত সংগ্রহ করেন।

আবেদনের মাধ্যমে:- বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের সমর্থনে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত, দক্ষিণা রঞ্জন মুখোপাধ্যায় ,উত্তরপাড়ার জমিদার জয়  কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ 1000  জন বিশিষ্ট মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সরকারের কাছে একটি আবেদনপত্র পাঠান।

বিধবা পুনর্বিবাহ আইন পাশ:- বিদ্যাসাগরের আন্দোলনের ফলেই 1856 খ্রিস্টাব্দের  26 জুলাই ব্রিটিশ সরকার 15 নং রেজুলেশন জারি করে বিধবা পুনর্বিবাহ আইন সম্মত বলে ঘোষণা করে। 

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর

[১৬] ব্রাহ্ম আন্দোলনে কেশবচন্দ্র সেনের অবদান আলোচনা কর।

উত্তরঃ সূচনা:- 1857 খ্রিস্টাব্দে কেশব চন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজ এ যোগদান করলে ব্রাহ্ম আন্দোলন এক নতুন মাত্রা লাভ করে । তরুণ কেশব চন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজ এর আদর্শ প্রচার করার জন্য ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকা প্রকাশ করেন । 

কার্যকলাপ: কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজ নিম্নরূপ কর্মসূচীগুলি গ্রহণ করে- 

  1. কেশব চন্দ্র সেন বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, অস্পৃশ্যতা এবং বর্ণভেদ প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। 
  2. তিনি বিধবা বিবাহ এবং অসবর্ণ বিবাহের  সমর্থনে আন্দোলন করেন ।
  3. কেশবচন্দ্র সেনের আন্দোলনের ফলেই ব্রিটিশ সরকার 1872 খ্রিস্টাব্দে তিন আইন পাস করেন। এই তিন আইন এর প্রভাবেই   সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ ,বহু বিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং সমাজে অসবর্ণ বিবাহ আইন সিদ্ধ হয়। 
  4. তিনি নারী শিক্ষার প্রসার এবং নারীদের কল্যাণের জন্য 1865 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মিকা সমাজ  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 
[১৭] সমাজ সংস্কার আন্দোলনে হাজী মুহাম্মদ মহসিন এর অবদান আলোচনা করো। 

উত্তরঃ সূচনা:- মহাম্মদ মহসিন ছিলেন বাংলার একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম এবং একজন প্রকৃত সমাজসেবী মানুষ । বিপুল সম্পত্তির অধিকারী মোহাম্মদ মহসিন বাংলার ইতিহাসে একজন দানবীর নামে পরিচিত ছিলেন। মক্কা-মদিনা কারবালা প্রভৃতি স্থানে হজ করার পর তার নাম হয় হাজী মহাম্মদ মহসিন ।

কার্যাবলী:- 

  1. হাজী মুহাম্মদ মহসিন তার বিশাল সম্পত্তি  বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করেন। তিনি নিজে  সৎ এবং ধার্মিক জীবনযাপন করতেন। তবে অন্য ধর্মের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা দেখাতেন । পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠান পালন করতেন ।
  2. তিনি সৎ কাজে অনেক অর্থ দান করেন । ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমান অর্থ দান করেন।  
  3.  1806 খ্রিস্টাব্দে তার সঞ্চিত সম্পদ সৎ কাজে ব্যবহার করার জন্য তিনি একটি ট্রাস্ট গঠন করেন। 
  4.   ভ্রমণপিপাসু মহাম্মদ মহসিন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন এবং সেই জ্ঞান সমাজসেবার কাজে    লাগান। 

মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর

[১৮] শ্রীরামকৃষ্ণের সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ সূচনা: শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেব ছিলেন আধুনিক ভারতের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অন্যতম আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব । তার প্রকৃত নাম গদাধর চট্টোপাধ্যায়। তিনি কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দিরের দেবী  ভবতারিণীর পুজারি ছিলেন । তিনি সর্বধর্ম সমন্বয় আদর্শ প্রচার এর জন্য নিম্নরূপ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন-

  1. যত মত তত পথ আদর্শ প্রচার:-   শ্রীরামকৃষ্ণের মতে  সমস্ত ধর্মের মধ্যে দিয়েই ঈশ্বর লাভ  সম্ভব। তিনি বলতেন যত মত তত পথ। তিনি আরো বলেছেন জীবসেবা করলেই শিব সেবা অর্থাৎ ঈশ্বরের সেবা করা হয়।
  2. সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে শিক্ষাদান:- শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি সমস্ত ধর্মের মানুষকেই ঈশ্বর দর্শনের জন্য  ধর্মের সহজ পথ দেখিয়ে দিতে পেরেছিলেন ।
  3. নারী মুক্তি আদর্শ প্রচার:- শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ মনে করতেন নারী হলো সাক্ষাৎ জগৎমাতার প্রতিমূর্তি । তাই নারীর দুর্দশা দূর করতে এবং সমাজে নারীর নেতৃত্বকে তিনি স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন ।
  4. ধর্মীয় উদারতা:- শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের উদার মতাদর্শ সনাতন ধর্মকে জাতপাতের বিভেদ ও সঙ্কীর্ণতা থেকে মুক্ত করতে সাহায্য সাহায্য করে ।এর ফলে হিন্দুধর্ম যেমন প্রাণশক্তি ফিরে পায় তেমনি অন্যান্য ধর্মের  প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর কারণে হিন্দু ধর্মের সাম্প্রদায়িক বিভেদ সমাজ থেকে অনেকটা দূরীভূত হয়। 
[১৯] স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো ।

উত্তরঃ- সূচনা: শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন নব ভারতের রূপকার এবং আত্মবিশ্বাসের এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি। তার প্রকৃত নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত । তিনি পরাধীন ভারতের মানুষকে দেব-দেবীদের বদলে ভারত মাতার পুজো করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার ধর্ম ছিল মানুষ তৈরির ধর্ম ।এই  উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন পথ অবলম্বন করেন l তাঁর রচিত গ্রন্থ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বর্তমান ভারত ,পরিব্রাজক ,রাজযোগ ,জ্ঞানযোগ প্রভৃতি । 

স্বামী বিবেকানন্দের অবদান: স্বামী বিবেকানন্দের অবদান গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-

                                                                                                                                                                                                                  

      I      রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা:- শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য শিষ্য বিবেকানন্দ 1897 খ্রিস্টাব্দের 1 মে রামকৃষ্ণদেবের নামে হাওড়ায় বেলুড় মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন । 

        II     বাণী  ও আদর্শ প্রচার:- শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মানবসেবায় দীক্ষিত  বিবেকানন্দ স্বপ্ন দেখতেন এমন এক ভারতের যেখানে থাকবে না , কোন উঁচু-নিচু ,ধনী-দরিদ্র জাত পাতের ভেদাভেদ। স্বামী বিবেকানন্দের বিশ্বাস ছিল স্বদেশ  এবং সমাজকে সেবা করলেই দরিদ্র নারায়ন সেবা করা হয় ।মানুষের সেবার জন্য তিনি উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিনে কন্যাকুমারীকা পর্যন্ত ভ্রমণ  করেছিলেন। তিনি এক নবভারত গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি সমস্ত মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সমগ্র মানব জাতির সেবা করতে চেয়ে ছিলেন। ।

মাধ্যমিক ইতিহাস  সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর                      

[২০] লালন ফকির সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো?

উত্তরঃ সূচনা:- লালন ফকির ছিলেন বাংলাদেশের বাউল গানের শ্রেষ্ঠতম রচয়িতা । তিনি সাধারণ মানুষের কাছে লালন ফকির, লালন সাঁই, লালন শাহ ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিলেন। তার জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক গুলি হল-

দীক্ষা গ্রহণ:- লালন সিরাজ সাঁই নামে এক  বাউল গুরুর কাছে দীক্ষা নেন এবং বাউল সাধনায়  প্রবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া রেল স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ছেওরিয়াতে  লালন আখড়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। 

বাউল সম্রাট:- লালন নিজেই বাউল গান লিখতেন , সুর দিতেন এবং গাইতেন। তিনি প্রায় দুই থেকে তিন হাজার বাউল গান রচনা করেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-  খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে, মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে, ইত্যাদি। তার বাউল গানগুলি লালনগীতি নামে পরিচিত। 

[২১] বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ সূচনা:- বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ছিলেন বাংলার একজন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম আচার্য ,নব বৈষ্ণব বাদের প্রবক্তা । তার জীবনে উল্লেখযোগ্য দিক গুলি হল-

ব্রাহ্মসমাজে যোগদান:- বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী সংস্কৃত কলেজে পড়াকালীন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের  ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করেন । তিনি ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচারের কাজে ভারতের  বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। 1863 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজের আচার্য হন। তার প্রচেষ্টায় শান্তিপুর, ময়মনসিংহ  প্রভৃতি অঞ্চলে ব্রাহ্ম মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।

ব্রাহ্মসমাজ ত্যাগ ও নব বৈষ্ণব আন্দোলন:- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের  সঙ্গে মতবিরোধের কারণে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ব্রাহ্মসমাজ ত্যাগ করেন এবং বৈষ্ণব সাধুদের  দ্বারা  আকৃষ্ট হয়ে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন । তিনি যে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেন তার নব বৈষ্ণবধর্ম নামে  পরিচিত। 

নারী শিক্ষার প্রসার:- বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী নারীশিক্ষার উন্নতি  করেন । তিনি শিক্ষার প্রসার  এবং নারী শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি শিক্ষার প্রসারে এবং কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। 

মাধ্যমিক ইতিহাস  সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর                      

[২২] উনিশ শতকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের প্রভাব আলোচনা করো ।   অথবা   ভারতের শিক্ষা বিস্তারে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদী বিতর্ক কি ? ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের প্রভাব কি ছিল ?   অথবা   উনিশ শতকে ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার কিভাবে হয়েছিল?          মান -৮

উত্তরঃ সূচনা:- আঠারো শতকের শেষে এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিকে কলকাতা এবং তার সংলগ্ন অঞ্চলে বেসরকারি উদ্যোগে ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্কৃত আরবি-ফারসি প্রভৃতি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয় । 1813 খ্রিস্টাব্দে সনদ আইনে এ দেশে শিক্ষার জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। 

প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদীর বিতর্ক:- দেশীয় শিক্ষার জন্য প্রাচ্যবাদী এবং ইংরেজী শিক্ষার জন্য পাশ্চাত্য বাদীরা সরকারের দ্বারা বরাদ্দকৃত 1 লক্ষ টাকা দাবি করলে প্রাচ্যবাদী এবং পাশ্চাত্য বাদী দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সরকার শিক্ষা খাতে অর্থ ব্যয় বন্ধ করে দেয় ।এই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেয়া হয় জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশনকে । প্রাচ্য – পাশ্চাত্য বাদী শিক্ষা বিভাগ নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয় । কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীরা জয়ী হয় অর্থাৎ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের পথ সহজ হয়। 

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের প্রভাব:- উনিশ শতকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের প্রভাবে ভারতে শিক্ষা, সমাজ, ধর্ম এবং সাংস্কৃতিক জীবনে যে নতুন গতিশীলতার সৃষ্টি হয় ,তাকে ভারতীয় রেনেসাঁ বা ভারতীয় নবজাগরণ নামে অভিহিত করা হয়।

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উল্লেখযোগ্য প্রভাব গুলি ছিল-

  1. নবযুগের সূচনা:- পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ভারতীয় নবযুগের সূচনা হয়েছিল ।পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভারতবাসী আধুনিক জীবন যাপনের পথে পা বাড়িয়েছিল । তারা রাজনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছিল । 
  2. জাতীয়তাবোধের বিকাশ:- পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের ফলে ভারতের মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটেছিল ।ভারতীয়রা নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে শামিল হয়েছিল।
  3. ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সৃষ্টি:- পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের ফলে ভারতে ইংরেজি শিক্ষিত একটি নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতীয়দের একটি অংশ ইংরেজ সরকারের চাকরি লাভের জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করেছিল। তাছাড়া অনেকে ইংরেজি শিখে উকিল ,ডাক্তার, শিক্ষক ও সাংবাদিকতা পেশায় নিযুক্ত হয়েছিলেন ।এই পেশার মানুষেরা ভারতে ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। 
  4. সমাজ সংস্কার আন্দোলন:- পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত সম্প্রদায় ভারতে প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সমাজ সংস্কার আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। রাজা রামমোহন রায় , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও প্রমুখদের প্রচেষ্টায় ভারতীয় সমাজ থেকে সতীদাহ  প্রথা, বাল্যবিবাহ ,অস্পৃশ্যতা দূরীভূত হয়েছিল এবং বিধবা বিবাহ ও নারী শিক্ষার প্রচলন হয়েছিল ।
  5. নারীশিক্ষার প্রসার:- পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ভারতে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল। বিদ্যাসাগর 1857 থেকে 1858 খ্রিস্টাব্দে এর মধ্যে বাংলার  বিভিন্ন জেলায় নিজের খরচে মোট 35 টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন । চার্লস উডের  প্রতিবেদনে নারী শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
  6. বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ:- পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে  ভারতীয় সভ্যতার মেলবন্ধন ঘটেছিল। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ, ফরাসি বিপ্লব, ইটালির ঐক্য আন্দোলন শিক্ষিত ভারতীয়দের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।

উপসংহার:- পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণি যথেষ্ট আগ্রহী হলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় ভারতীয় গরিব শ্রেণীর মানুষেরা এই  শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী ছিল না। এছাড়া মুসলিম সমাজে এই শিক্ষা বর্জন করে । এর ফলে  সমাজে নিরক্ষরতা বজায় থাকে কিন্তু তা সত্ত্বেও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব ভারতীয় সমাজ ,সাহিত্য, ধর্ম এবং রাজনীতিতে নবজাগরণের সূচনা করেছিল। 

মাধ্যমিক ইতিহাস  সাজেশন দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন-উত্তর                      

[২৩] উনিশ শতকে বাংলার সামাজিক জীবন যাত্রার প্রতিফলন সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে তুলে ধরতে কারা উদ্যোগী হয়েছিলেন ?      অথবা 
উনিশ শতকের কোন কোন সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ,সাহিত্যে বাঙালি সমাজের প্রতিফলন ধরা পড়ে।

উত্তরঃ সূচনা:- উনিশ শতকের বিভিন্ন সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র, সাহিত্যের মাধ্যমে বাংলার তৎকালীন সমাজ জীবনের ছবি ফুটিয়ে তুলতে যারা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন 

উমেশচন্দ্র দত্ত :-উমেশ চন্দ্র দত্ত তাঁর বামাবোধিনী পত্রিকার মাধ্যমে উনিশ শতকের বাংলার সমাজ জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন।এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় 1863 খ্রিস্টাব্দে। এই পত্রিকার মাধ্যমে তৎকালীন সমাজে নারীদের অবস্থা, নারী শিক্ষা ,সামাজিক কুসংস্কার প্রভৃতির কথা তুলে ধরেছেন।

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়:- হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার মাধ্যমে বাংলার সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় 1853 খ্রিস্টাব্দে। তিনি তৎকালীন বাংলার গ্রামীণ কৃষক, নীলচাষী, আদিবাসী, সাঁওতালদের দুঃখ দুর্দশা এবং তাদের  বিদ্রোহের কথা তুলে ধরেছেন ।

হরিনাথ মজুমদার:- হরিনাথ মজুমদার তার  গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার মাধ্যমে তৎকালীন সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন । এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় 1863 খ্রিস্টাব্দে। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন বাংলার সাধারণ মানুষের কথা, জমিদারদের শোষন , নারীদের অবস্থা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেছেন। 

কালীপ্রসন্ন সিংহ:- কালীপ্রসন্ন সিংহ হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের মাধ্যমে তৎকালীন কলকাতা ও তার আশেপাশের অঞ্চলের ধনী  ও শিক্ষিত বাঙালি সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন ।এই গ্রন্থটি  প্রথম প্রকাশিত হয় 1861 খ্রিস্টাব্দে। এই গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি তৎকালীন বাবু সমাজের বেহিসেবি জীবন যাপন তুলে ধরেছেন।

দীনবন্ধু মিত্র:-  দীনবন্ধু মিত্র তার 1860 খ্রিস্টাব্দে রচিত নীলদর্পণ নাটকের মাধ্যমে তৎকালীন গ্রাম বাংলার কৃষক ,নীলচাষীদের দুর্দশা এবং নীলকর সাহেবদের অমানবিক অত্যাচার কাহিনী তুলে ধরেছেন।

***********একাদশ শ্রেণীর আরো প্রশ্ন-উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন *****************

**********দ্বাদশ শ্রেণীর আরো প্রশ্ন-উত্তরে পেতে এখানে ক্লিক করুন। ***************

*********দশম শ্রেণীর শ্রেণীর আরো প্রশ্ন-উত্তরে পেতে এখানে ক্লিক করুন।***************

********WBP এবং KP পরীক্ষার MOCK TEST দিতে এখানে ক্লিক করুন ******************

বিভিন্ন বোর্ড এবং চাকরির পরীক্ষায় সাফল্য লাভের  জন্য নিয়মিত VISIT করুন আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট  WWW.PARIKSHAPRASTUTI.ORG তে। এখানে আপনাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সাজেশন  দেওয়া হবে। 

1 thought on “মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের বড় প্রশ্ন-উত্তর”

  1. Pingback: মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের MOCK TEST | Pariksha Prastuti

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *