প্রিয় ছাত্র ছাত্রীরা তোমরা যারা ২০২২ সালে মাধ্যমিক দেবে , PRIKSHAPASTUTI .ORG এক্সপার্ট টিমের পক্ষ থেকে প্রথমেই তোমাদের অভিনন্দন জানাই। এই করোনা পরিস্থিতিতে যাতে তোমরা বাড়িতে বসে সুন্দর ভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারো তার জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। এই অনলাইন MOCK TESTER মাধ্যমে তোমরা দেখে নাও মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়ঃপ্রতিরোধ ও বিদ্রোহ TOPIC এর উপর SAQ ২ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর ২০২২ পরীক্ষার জন্য তোমরা কতটা প্রস্তুতি নিয়েছো। আর তোমাদের এই অনলাইন লাস্ট মিনিট সাজেশন কেমন লাগছে নীচের COMMENT সেক্শনে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবে।
(১)হলকা ও খলিফা বলতে ফরাজি আন্দোলনে কি বোঝাতো ?
উত্তর-ভারতে মুসলমানদের মাধ্যমে ইসলামের পুনরুজ্জীবনের জন্য যে আন্দোলন চলছিল তা পুরো বাংলায় ফরাজি আন্দোলন নামে পরিচিত হয়। হাজী শরীয়তুল্লাহ ১৮২০ খ্রিস্টাব্দেবাংলায় ফরাজি আন্দোলনের সূচনা করেন। হাজী শরীয়তুল্লাহ মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মোহাম্মদ মহসীন ফরাজি আন্দোলনের পরিচালক হন। তিনি বাংলাদেশে তার প্রভাবিত অঞ্চল ফরাজী খিলাফত নামে এক প্রশাসন গঠন করে বাংলাদেশকে কয়টি হলকা বা অঞ্চলে বিভক্ত করেন। প্রতিটি হলকায় একজন করেই খলিফা নিযুক্ত করা হয় ,যাদের দায়িত্ব ছিল ওই হালকার জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচার প্রতিহত করা।
(২) দুদুমিঞা স্মরণীয় কেন?
উত্তর-ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক হলেন হাজী শরীয়তউল্লাহ। 1840 খ্রিস্টাব্দে হাজী শরীয়তউল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র মোহাম্মদ মহসীন ওরফে দুদুমিঞা ফরাজি আন্দোলন পরিচালনা করেন। স্মরণীয় হওয়ার কারণ : দুদুমিঞার তত্ত্ব ছিল বৈপ্লবিক। তিনি বলতেন জমি আল্লাহর দান সুতরাং জমির উপর কর ধার্য করার অধিকার কারো নেই। সুদক্ষ সংগঠক দুদুমিঞা বাংলাদেশ তার প্রভাবিত অঞ্চলে ফরাজী খিলাফত নামে একটি প্রশাসন গড়ে তোলেন।
(৩)ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় আন্দোলন ?
অথবা
ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন ?
উত্তর- ভারতে মুসলমানদের মাধ্যমে ইসলামের পুনরুজ্জীবনে যে আন্দোলন চলছিল তা পূর্ব বাংলায় ফরাজি আন্দোলন নামে পরিচিত।
আন্দোলনের প্রকৃতি : ফরাজি আন্দোলনের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইসলাম ধর্মের শুদ্ধতা রক্ষা , প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন, সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণে এবং ইসলাম ধর্মের বিশ্বজনীন আবেদন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই আন্দোলন শুরু হয়। ধর্মীয় রঙের ছোঁয়া লাগলেও আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি ছিল কৃষকদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করতে না পারলেও বাংলা থেকে ব্রিটিশ বিতরণের প্রেরণা যুগিয়েছিল।
(৪)পঞ্চম আইন কি?
উত্তর– লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1830 খ্রিস্টাব্দে পঞ্চম আইন পাশ করেন। এই আইনে বলা হয় যে , কোন চাষী দাদন নিয়ে নীল চাষ না করলে তাকে গ্রেফতার করা হবে এবং তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
(৫) নীলকররা নীল চাষীদের উপর কিভাবে অত্যাচার করত তা সংক্ষেপে লেখ।
অথবা
নীলকরেরা কিভাবে চাষীদের উপর অত্যাচার করত।
উত্তর –নীলকরদের অত্যাচার : নীলকরেরা নানাভাবে চাষীদের উৎপীড়ন করে নীলচাষে বাধ্য করত।
যেমন – চাষীদের গরু-বাছুর ধরে নীলকুঠিতে আটকে আটক করে রাখা হতো। দাদন নামে এক ধরনের অগ্রিম অর্থ জোর করে চাষীকে দিয়ে দেওয়া হতো ,যার বিনিময়ে উৎপাদিত নীল নীলকরদের হাতেই তুলে দিতে হতো। নীল চাষের জন্য জমি মাপে কারচুপি করা হতো। নীলচাষে রাজি না হলে তাকে মারধোর করা হতো।
(৬)নীল বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম লেখ।
উত্তর-1859 খ্রিস্টাব্দে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলায় নীল চাষিরা নীল বিদ্রোহের সূচনা করেছিল। এই বিদ্রোহের দুজন উল্লেখযোগ্য নেতা হলেন দিগম্বর বিশ্বাস এবং বিষ্ণুচরন বিশ্বাস। নীলচাষীদের বিদ্রোহ বিদ্রোহ নেতৃত্ব প্রদানের জন্য তারা বাংলার ওয়াট টাইলার নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
(৭) কৃষকদের পক্ষ নিয়ে কোন কোন জমিদার নীল বিদ্রোহে অংশ নেয় ?
উত্তর– নদিয়া ,যশোহর ,বারাসাত ;পাবনা,রাজশাহী, ফরিদপুর প্রভৃতি বাংলার বিভিন্ন স্থানে নীল বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল। এই বিদ্রোহে যে সমস্ত জমিদারেরা কৃষকদের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল ,তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন – নড়াইলের জমিদার রাম রতন মল্লিক, রানাঘাটের জমিদার শ্রী গোপাল পাল চৌধুরী এবং চন্ডিপুরের জমিদার শ্রী হরি রায় প্রমুখ।
(৮)নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টানমিশনারীদের ভূমিকা কিরূপ ছিল ?
উত্তর – বাংলার নীল চাষিরা 1859 খ্রিস্টাব্দে নীল চাষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহ নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারীরা বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছিল। তারা নীল চাষীদের উপর নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। জেমস লং নীলদর্পণ নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এজন্য তাকে জেলেও যেতে হয়েছিল।
(৯)কলকাতা থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় নীল বিদ্রোহ কে সমর্থন করেছিল ?
উত্তর – হিন্দু প্যাট্রিয়ট এবং সোমপ্রকাশ।
(১০) নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর ভূমিকা কিরূপ ছিল ?
উত্তর– হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নীল বিদ্রোহের প্রতি সহমর্মী অবস্থান নিয়েছিলেন। নীলচাষীদের দুর্দশা এবং নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে সুচিন্তিত প্রবন্ধ রচনা করে তিনি সকলের চোখ খুলে দেন। হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা লেখা হয়েছিল -যে চাষী একবার নীল চাষ করেছে বেঁচে থাকতে তারা আর মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই। নীলচাষে কোন চাষী নায্য দাম পায় না। নীল চাষে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় বেশি ইত্যাদি। মূলত হরিশচন্দ্রের উদ্যোগেই নীল বিদ্রোহের খবরা খবর সারা বাংলার শিক্ষিত জনগণের মনে মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।
(১১)নীল কমিশন কি ?নীল কমিশন কি কি সুপারিশ করে ?
উত্তর – নীল বিদ্রোহের তীব্রতা ও ব্যাপকতা লক্ষ্য করে বাংলার ছোটলাট 1860 খ্রিস্টাব্দে 31 শে ডিসেম্বর নীল কমিশন গঠন করেন। মূলত নীলচাষীদের অভাব-অভিযোগ ও বাংলায় নীল চাষ সম্পর্কে অনুসন্ধান করাই ছিল এই কমিশনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
নীল কমিশনের সুপারিশ : পাঁচ সদস্যের এই কমিশন রিপোর্টে জানায় যে নীলকরদের বিরুদ্ধে নীলচাষীদের অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ সত্য। নীল কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী – এই কমিশন নীলচাষ নীলচাষীদের ইচ্ছাধীন বলে ঘোষণা করে।
(১১)অষ্টম আইন কি?
উত্তর – নীল বিদ্রোহের তীব্রতায় নীলচাষীদের অভাব-অভিযোগ ও নীল চাষ সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য ব্রিটিশ সরকার 1860 খ্রিস্টাব্দে নীল কমিশন গঠন করে। এই কমিশন তার প্রতিবেদনে জানায় যেই নীলকর সাহেবরা চাষীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের নিয়ে নীল চাষ করতে পারবেনা অষ্টম আইন 1860 খ্রিস্টাব্দে অষ্টম আইন পাস করে নিল চুক্তি আইন রদ করা হয় অস্ত্র আইন পাস এর ফলে নীলকরদের অত্যাচার থেকে রেহাই পায় এই আইনে নীলচাষীদের ইচ্ছাধীন বলে ঘোষণা করা হয়।
(১২)পাবনা কৃষক বিদ্রোহের কারণ কি ? এই বিদ্রোহের বিশেষত্ব কি ?
উত্তর–পাবনা কৃষক বিদ্রোহের কারণ : পাবনার কৃষকদের লক্ষ্য ছিল ন্যায্য খাজনা দেওয়া। এছাড়া তারা নিজেদের সম্পত্তির অধিকারের নিরাপত্তা , জমিদারদের জমির জরিপ ব্যবস্থা ইত্যাদি বিলোপের উদ্দেশ্যেই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল।
পাবনা কৃষক বিদ্রোহের দুটি বৈশিষ্ট্য : পাবনা কৃষক বিদ্রোহে বিদ্রোহীরা আইনের পথে জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এই বিদ্রোহের নেতৃবর্গ ছিলেন হিন্দু এবং আন্দোলনকারীরা ছিল মুসলমান। দু’চারটে জায়গায় সামান্য হাঙ্গামা হলেও এই কৃষক বিদ্রোহ হিংসার প্রয়োগ খুব একটা ঘটেনি।
***** বাংলা জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্নের উত্তরের জন্য CLICK করুন।